জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছিনতাই করতে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের এক কর্মচারীর সন্তানসহ ২ জন কে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখা। মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সংযোগ সড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা শাখাকে জানালে বিজ্ঞান কারখানার সামনের সড়ক থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- পার্শ্ববর্তী গেরুয়া এলাকার রিকশাচালক আরিফুল ইসলাম হৃদয় (১৭), একই এলাকার তানভীর (১৬) এবং কলাবাগান এলাকার আদনান (১৫)।
তাদের মধ্যে আরিফুল ইসলাম হৃদয়ের বাবা তৌকির আহমেদও রিকশাচালক। তানভীর ডেইরি ফার্ম স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশোনা করে। তার বাবার নাম ওমর ফারুক। অন্যদিকে, আদনানের বাবা আবুল বাশার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের ক্লিনার হিসেবে কর্মরত আছেন।
নিরাপত্তা শাখা সূত্রে জানা যায়, দুপুর ১২টার দিকে দুইজন স্কুল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসে। তাদের বাসা সাভারের রেডিও কলোনীতে। তারা টিএসসি থেকে মীর মশাররফ হল সংলগ্ন রাস্তায় গেলে ছিনতাইকারীদের একজন রিকশাচালক আরিফুল ইসলাম হৃদয় ভুক্তভোগীদের জিজ্ঞেস করে তারা কোথায় থেকে এসেছে। বহিরাগত বুঝেই হৃদয় তাদেরকে যা আছে সব বের করে দিতে বলে।
এসময় আদনান ভুক্তভোগীদের ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট বলে পরিচয় দেয় এবং ভয়-ভীতি দেখিয়ে চড়-থাপ্পড় মারে। পরে তারা নগদ ৩০০ টাকা ও মোবাইল কেড়ে নেয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা চলে আসলে নিরাপত্তা শাখাকে জানানো হয়। নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তারা তাদেরকে আটক করে নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগীদের একজন সাদিক বলেন, ‘আমরা দুইজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে এসেছিলাম। মুক্তমঞ্চের পাশের রাস্তায় যাওয়ার পর আমাকে একজন ডেকে নিয়ে যায়। আমার কাছে পরিচয় জানতে চায়। কথা বলার এক পর্যায়ে আমার কাছ থেকে মোবাইল ও তিনশ টাকা কেড়ে নেয়। নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত হলে মোবাইল ফেলে দেয় তারা।’
অভিযুক্ত আরিফুল ইসলাম হৃদয় বলেন, ‘ওরা বাইরে থেকে আসছে সেটা আগে থেকে খেয়াল করেছিলাম। বাইরের লোক আসলে আমার হিংসা লাগে। তাই তাদের ফাঁপর দিতে চেয়েছিলাম। ওদের ধরার পরে আদনান কয়েকটা থাপ্পড় দিয়েছে। পরে পকেট থেকে ৩০০ টাকা আর ফোন কেড়ে নেই।’
আরেক অভিযুক্ত আদনান বলেন, ‘আমি পড়াশোনার পাশাপাশি সেলস ম্যানের চাকরি করতাম। দুর্ঘটনা পর চাকরি বাদ দিয়েছি। আমি জীবনে প্রথমবার এই কাজ করেছি। তবে প্রথমে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্য ছিল না।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আদনানের বাবা আবুল বাশার বলেন, ‘আমি ভাসানী হলের ক্লিনার হিসেবে আছি।
আমি ৩৫ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করছি। আদনানের মা নাই। তাকে পড়াশোনা করিয়ে ভালো করার অনেক চেষ্টা করেছি। কোনো বাবা-মা সন্তানের খারাপ চায় না। আমার আর কিছু বলার নাই। অন্যায় তো অন্যায়ই। তবে তাকে একবার সুযোগ দিলে তাকে শোধরানোর চেষ্টা করবো।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘আমরা অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ছিনতাই ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। তাদের কারও বয়সই ১৮ নয়। তবুও আমরা তাদেরকে পুলিশে দেওয়ার চেষ্টা করবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় আমরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সজাগ দৃষ্টি রাখি। পাশাপাশি এক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’