জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকী আজ - দৈনিকশিক্ষা

জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আমাদের বার্তা ডেস্ক |

শহীদ জননী খ্যাত জাহানারা ইমাম এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আহবায়করূপে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। জাহানারা ইমাম অবিভক্ত বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুর গ্রামের এক রক্ষণশীল পরিবারে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশবকালে মুসলিম পরিবারের মেয়েদের নিকট আধুনিক শিক্ষালাভের দ্বার উন্মুক্ত ছিলো না। তবে তিনি তার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পিতা আবদুল আলীর তত্ত্বাবধানে রক্ষণশীলতার বাইরে এসে আধুনিক শিক্ষা লাভ করেছিলেন। বিবাহিত জীবনে লেখাপড়ায় তিনি পুরকৌশলী স্বামী শরীফ ইমামের দিক থেকেও উৎসাহ ও আনুকূল্য পেয়েছিলেন।

পিতার চাকরিসূত্রে জাহানারা ইমাম বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ থেকে তিনি বিএ পাস করেন। বিএড পাস করার পর ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ করেন। পরে তার কর্মজীবন শুরু হয় স্কুলে শিক্ষকতার মাধ্যমে। ১৯৫২ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত তিনি ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। ফুলব্রাইট স্কলার জাহানারা ইমাম আমেরিকা থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৬৮-র দিকে চাকরি ছেড়ে দেন। পরে তিনি নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। ব্যক্তিত্বময়ী জাহানারা ইমাম ষাটের দশকে ঢাকার সংস্কৃতি মহলে সুপরিচিত ছিলেন।

ষাট ও সত্তর দশকে সাহিত্যজগতে জাহানারা ইমাম অল্প-বিস্তর পরিচিত ছিলেন শিশুকিশোর উপযোগী রচনার জন্য। কিন্তু তার সর্বাধিক খ্যাতির কারণ দিনপঞ্জিরূপে লেখা তার অনবদ্য গ্রন্থ ‘একাত্তরের দিনগুলি’। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি পুত্র রুমী ও স্বামীকে হারান। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাস কেটেছে তার একদিকে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও ত্রাসের মধ্য দিয়ে; অন্যদিকে মনের মধ্যে ছিলো দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার স্বপ্ন। সেই দুঃসহ দিনগুলোতে প্রাত্যহিক ঘটনা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করার বৃত্তান্ত লিখেছিলেন তিনি নানা চিরকুটে, ছিন্ন পাতায়, গোপন ভঙ্গি ও সংকেতে। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থরূপ পাওয়ার পর তা জনমনে বিপুল সাড়া জাগায়। বস্তুত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি শিহরণমূলক ও মর্মস্পর্শী ঘটনাবৃত্তান্ত হলো একাত্তরের দিনগুলি।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে জাহানারা ইমাম লেখালেখিতে ব্যস্ত সময় কাটান এবং তার প্রধান গ্রন্থগুলো এ সময়ে প্রকাশ পায়। গল্প, উপন্যাস ও দিনপঞ্জি জাতীয় রচনা মিলিয়ে তার আরো কয়েকটি গ্রন্থ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: অন্য জীবন, বীরশ্রেষ্ঠ, জীবন মৃত্যু, চিরায়ত সাহিত্য, বুকের ভিতরে আগুন, নাটকের অবসান, দুই মেরু, নিঃসঙ্গ পাইন, নয় এ মধুর খেলা, ক্যানসারের সঙ্গে বসবাস ও প্রবাসের দিনলিপি। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে জাহানারা ইমামের নাম ছড়িয়ে পরে তার সামাজিক-রাজনৈতিক ভূমিকার জন্য। অতীতে তিনি রাজনীতিসচেতন হলেও রাজনীতিবিদ ছিলেন না, এবার ভবিতব্যই তাকে রাজনীতির অঙ্গনে নিয়ে আসে। একাত্তরে তার প্রথম পুত্র রুমী ছাত্রত্ব ত্যাগ করে দেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং কয়েকটি সফল গেরিলা অপারেশনের পর পাকিস্তানি মিলিটারির হাতে নিহত হন। বিজয় লাভের পর রুমীর বন্ধুরা রুমীর মা জাহানারা ইমামকে সকল মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করে নেন। তখন থেকেই তিনি ‘শহীদ জননী’র মর্যাদায় ভূষিত।

মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য জাহানারা ইমাম নিজেও সর্বদা সক্রিয় ছিলেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় জীবনে স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মান্ধ ঘাতক-দালালদের পর্যায়ক্রমিক পুনর্বাসনে অপমানিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বক্তৃতা করে এবং লিখে জনসচেতনতা গড়ে তোলেন। তিনি বুদ্ধিজীবীদের পরিচালিত ‘সাম্প্রদায়িকতা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী নাগরিক কমিটি’, ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি’ ইত্যাদি উদ্যোগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। কিন্তু অচিরেই তিনি উপলব্ধি করেন যে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পক্ষের মানুষদের একত্র করতে না পারলে বিরোধী দুষ্ট চক্রকে প্রতিরোধ করা যাবে না। এ সময় তিনি অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেন। তিনি ছিলেন মূলত সংস্কৃতি অঙ্গনের লোক, কিন্তু এ সময় থেকে তিনি রাজনীতির অঙ্গনেও সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’র আহবায়ক হন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল বরেণ্য  বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, রাজনৈতিক দল ও কর্মিবৃন্দ, দেশপ্রেমিক তরুণ সমাজ এবং প্রজন্ম ’৭১ তার আহ্বানে এগিয়ে আসেন। তাদের সক্রিয় সমর্থনে জাহানারা ইমাম ১৯৭১-এর স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে গণ-আদালত গড়ে তোলেন।

গণ-আদালত ছিলো স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের অপকর্মের বিরুদ্ধে একটি প্রতীকী প্রতিবাদ। কিন্তু তৎকালীন সরকার জাহানারা ইমামসহ গণ-আদালতের সঙ্গে যুক্ত ২৪জন বরেণ্য বুদ্ধিজীবীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে এবং জাহানারা ইমাম মৃত্যুকালেও এ অভিযোগ থেকে মুক্তি পাননি।

১৯৮১-র দিকে জাহানারা ইমাম মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন; রোগ উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে, কথা বলাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু কর্কট রোগ তার কর্মস্পৃহা ও আদর্শকে বিন্দুমাত্র স্তিমিত করতে পারেনি। সকল ব্যথা-বেদনা উপেক্ষা করে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কর্মকাণ্ড সমান উৎসাহে চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে আমেরিকার মিশিগান স্টেটের ডেট্রয়েটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

 

আমরা চাই না ছাত্রদের কঠোর হয়ে দমন করতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা - dainik shiksha আমরা চাই না ছাত্রদের কঠোর হয়ে দমন করতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবার ভর্তির লটারিও স্থগিত করলো সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল - dainik shiksha এবার ভর্তির লটারিও স্থগিত করলো সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে জয়পুরহাটের আইএইচটি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে জয়পুরহাটের আইএইচটি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ৮ ডিসেম্বর - dainik shiksha এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ৮ ডিসেম্বর মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! হা*মলা-ভা*ঙচুরের ঘটনায় মা*মলা করবে মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ - dainik shiksha হা*মলা-ভা*ঙচুরের ঘটনায় মা*মলা করবে মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগকে গণ*ধোলাই দিয়ে থানায় দিতে বললেন ওসি - dainik shiksha ছাত্রলীগকে গণ*ধোলাই দিয়ে থানায় দিতে বললেন ওসি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0074729919433594