দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক : আজ ২৫ রমজান ও জুমাবার। এটিই এ বছরের রমজানের শেষ জুমা। তাই এ দিনটি জুমাতুল বিদা নামে আখ্যায়িত করা হয়। অবশ্য অভিধাটি পরিচিত হয়েছে ইদানীং। নিকট অতীতেও জুমাতুল বিদা পরিভাষার ব্যবহার কিংবা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করার নজির পাওয়া যায় না। তবে মৌলিক চেতনা ও ভাবধারা বিবেচনায় দিনটি গুরুত্বের অধিকারী হওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত থাকতে পারে না।
তারপরও মোবারক মাস রমজানের শেষ জুমার দিন হিসেবে এর গুরুত্ব কম নয়। রমজান আর জুমা একত্রে মিলিত হয়ে দিনটিকে করে তুলেছে সীমাহীন মহিমাময়।
উম্মতে মোহাম্মাদীর জন্য মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে বছর ঘুরে আসা মাহে রমজান আর তার সঙ্গে যুক্ত সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন ইআওমুল জুমা। তাই জুমাতুল বিদায় প্রত্যেকটা মুমিন মুসলমানের বিশেষ তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। মসজিদে জামাতের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করা এবং বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা ও নিজের আত্মার আকুতি দয়াময় প্রভুর দরবারে পেশ করাই যেনো এ দিনে সব মুসলমানের পরম আগ্রহের বিষয়।
সপ্তাহের অন্য দিনগুলোর তুলনায় জুমার দিনের বৈশিষ্ট্য, রমজান মাসে তাতে মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং রমজানের শেষ প্রান্তের বৈশিষ্ট্য এ তিনের সমন্বয়ে এ দিনটির আলাদা মর্যাদা প্রমাণিত হয়। উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য সপ্তাহের প্রতিটি দিনেই ইবাদতের বিধান রয়েছে। জামাতের সঙ্গে বা মসজিদে সমবেত হয়ে সম্মিলিতভাবে আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা মুসলমানদের প্রাত্যহিক কর্তব্য। তবুও সপ্তাহের একটি দিনে আরো বড় আকারে সম্মিলিত ইবাদত বা জুমার নামাজের বিধান মুসলিম উম্মাহর স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য যেমন বাড়িয়ে দেয়, তেমটি সামাজিক ও সামষ্টিক পর্যায়ে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে পরিবেশ তৈরি করে। মহানবী (সা.) এর বাণী অনুযায়ী প্রত্যেক নবীর উম্মতকে সপ্তাহের একটি দিন বেছে নিতে বলা হয়েছিলো সামষ্টিক ইবাদতের জন্য। ইহুদিরা শনিবার ও খ্রিষ্টানরা রোববারকে বেছে নেয়। কিন্তু মুসলমানরা বেছে নেয় শুক্রবারকে। আসলে এটিই আল্লাহর পছন্দ। সেটা বেছে নেয়ায় এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন শ্রেষ্ঠ দিন জুমার দিন। এ দিনে হজরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছিলো। এ দিনে তাকে জান্নাতে বসবাস করতে দেয়া হয়েছিলো। এদিনেই তাকে সেখান থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়া হয়েছিলো। আবার কেয়ামতও হবে জুমার দিনে। মোটকথা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এ দিনের সঙ্গে জড়িত।
উম্মতে মোহাম্মাদীর জন্য মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে বছর ঘুরে আসা মাহে রমজান আর তার সঙ্গে যুক্ত সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন ইআওমুল জুমা। তাই জুমাতুল বিদায় প্রত্যেকটা মুমিন মুসলমানের বিশেষ তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। মসজিদে জামাতের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করা এবং বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা ও নিজের আত্মার আকুতি দয়াময় প্রভুর দরবারে পেশ করাই যেন এ দিনে সব মুসলমানের পরম আগ্রহের বিষয়।
জুমাতুল বিদার মহত্ত্ব: দু’টি কারণে জুমাতুল বিদা অত্যন্ত মহিমাময়। প্রথমটি মাহে রমজানের কারণে। রমজান মাস সীমাহীন ফজিলতের মাস এবং এটি উম্মতে মোহাম্মাদীর জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ উপহার স্বরূপ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের রব বলেছেন, বনি আদমের প্রত্যেকটি নেক-আমলের সওয়াব দশগুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত দেয়া হয় শুধু রোজা ছাড়া। কেনোনা রোজা শুধুই আমার জন্য, আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো।
আর নিশ্চয়ই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশ্ক আম্বারের চেয়েও বেশি প্রিয়। তোমাদের কারো রোজা থাকা অবস্থায় যদি কেউ তার সঙ্গে জাহেলের মতো আচরণ করে তাহলে সে বলে দেবে, আমি একজন রোজাদার। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস: ৫৯২৭, সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৫১, মুসান্নেফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৮৮৯৪, মুসনাদে আহমাদ: ৯৭১৪) আর জুমার দিনের মাহাত্ম্য সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সূর্যদয়ের মাধ্যমে যে দিনগুলো হয় তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমার দিন।
জুমার দিনের কিছু সুন্নত আমল রয়েছে। যেমন (১) ভালো করে গোসল করতে হবে (২) নতুন বা উত্তম পোশাক পরতে হবে (৩) আতর তথা সুগন্ধি ব্যবহার করতে হবে (৪) হেঁটে মসজিদে যেতে হবে (৫) আগে আগে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে (৬) ইমামের কাছাকাছি জায়গায় বসতে হবে।
‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম’-উম্মতে মুহাম্মদীর শ্রেষ্ঠতের ঘোষণা সম্মলিত সূরা মায়েদার এ তিন নং আয়াতটি নাজিল হয়েছিলো ৯ জিলহজ জুমার দিনে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুকে এক ইহুদি পণ্ডিত বলেছিলেন-এমন একটি আয়াত যদি আমাদের প্রতি নাজিল হতো তাহলে আমরা তা নাজিল হওয়ার দিনটিকে ঈদ হিসেবে পালন করতাম। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, এটা আমাদের ওপর নাজিল হয়েছে আমাদের দু’টি ঈদের দিনে-জুমা ও আরাফা। অর্থাৎ জুমার দিন এ উম্মতের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন-জুমার দিনে এমন একটা মুহূর্ত আছে, যখন কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, তা-ই পায়। সেই মুহূর্তটি কখন আসে, তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। লাইলাতুল কদর ও ইসমে আজমের মতো জুমার দিনের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তও গোপন রাখা হয়েছে। তবে দু’টি সময়ের ব্যাপারে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে-ইমাম যখন খুৎবা দেয়ার জন্য মিম্বরে ওঠেন, তখন থেকে জুমার নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত এবং ওই দিন আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
মোটকথা সাধারণভাবে জুমার দিনের এসব গুরুত্ব মাহাত্ম্য রয়েছে। রমজান মাসের কারণে এ মাহাত্ম্য অনেকগুণ বেড়ে যায়- যা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর রমজানের শেষভাগের প্রতিটি দিনই স্মরণ করিয়ে দেয় বহুগুণ সওয়াব লাভের সুযোগ চলে যাচ্ছে বলে। শেষ জুমার দিনটি যেনো আরো জোরালো ভাষায় উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করে মুমিন বান্দাদের তওবা ইস্তেগফারে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের অবারিত ধায়ায় সিক্ত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ যারা হাতছাড়া করে, তাদের জন্য দুঃখ করা ছাড়া কী থাকতে পারে? তাই জুমাতুল বিদা সতর্ক বার্তা ঘোষণার দিন। আরেক বিচারে তা ঈদুল ফিতরের আগমনী বার্তা দেয়। সিয়াম সাধনার মাস সফলভাবে সম্পন্ন করার শেষ প্রান্তে উপনীত হওয়াও একটি শুভ আলামত। তাই আল্লাহর অপার রহমত ও অনুগ্রহের অধিকারী হওয়া এবং পাপরাশি থেকে মুক্ত হয়ে ঈদের আনন্দ ভোগের সুসংবাদ ঘোষণা হতে থাকে রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে। এমন গুরুত্বপূর্ণ দিনের মূল্যায়ন করা ও সদ্ব্যবহার করা রোজাদারদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।