জোড়াতালি দিয়ে চলছে নার্সিং শিক্ষা - দৈনিকশিক্ষা

জোড়াতালি দিয়ে চলছে নার্সিং শিক্ষা

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

রাজধানীর আদাবরের নাইটিঙ্গেল নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউট অনুমোদন পায় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে। একটি ভবনে ২ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে চলছে পাঠদান। প্রতিবছর ৯০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ২৩ জন শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু তিনজন শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠাদান। মাঝেমধ্যে ভাড়া করে শিক্ষক আনা হয়। নেই ল্যাবরেটরি, মিলনায়তন ও অডিও ভিজুয়াল কক্ষ।

 

মিরপুরের বাংলাদেশ নার্সিং কলেজের অবস্থাও একই। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে এ প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পায়। বছরে ২১০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসাবে ৫৩ জন শিক্ষক প্রয়োজন। তবে শিক্ষক রয়েছেন তিনজন। নেই নিজস্ব হাসপাতাল ও স্থায়ী ক্যাম্পাস।

শুধু এ দুটিই নয়, সারাদেশের বেসরকারি নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চলছে নানা সংকট নিয়ে। নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেসরকারি ৩৭২টি নার্সিং কলেজ আছে। এর মধ্যে ৩১৫টির নিজস্ব হাসপাতাল নেই। শিক্ষকও অনেক কম। ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ভাড়ায় শিক্ষক নিয়ে পাঠদান করে। এসব প্রতিষ্ঠান একাধিকবার বিজ্ঞপ্তি দিলেও শিক্ষক নিয়োগ দেয় না। ছাত্রাবাস ও ইন্টার্ন শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল সুবিধাও নেই। অনেক ক্ষেত্রে এক ব্যক্তি একাধিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিয়েছেন। দেখা গেছে, শ্রেণিকক্ষ কম থাকায় এক ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ক্লাস নেওয়া হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো থাকলেও লোকবল ও শিক্ষা উপকরণের সংকট আছে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব হাসপাতাল না থাকায় শিক্ষার্থীদের কোনো এক হাসপাতালে গিয়ে টাকার বিনিময়ে কাজ শিখতে হয়।

দেশে সরকারি নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ৬৮টি। এসব প্রতিষ্ঠানে আসন সাড়ে ৬ হাজার। প্রতিবছর বিভিন্ন কোর্সে বেসরকারি নার্সিং কলেজগুলোয় ২৪ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসাবে এগুলোয় শিক্ষক প্রয়োজন ৬০০ জন। তবে বর্তমানে সব প্রতিষ্ঠান মিলে ৪০০ থেকে ৫০০ শিক্ষক আছেন। এ পরিস্থিতির উত্তরণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষক নিয়োগের তাগিদ দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

যোগ্যতাসম্পন্ন প্রয়োজনীয় নার্স তৈরির লক্ষ্যে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি নার্সিং প্রতিষ্ঠান ও নার্সিং কোর্স চালু-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এ নীতিমালায় নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠায় ন্যূনতম ৩০ হাজার বর্গফুটের ভবন, প্রতিষ্ঠানের নামে ১০ লাখ টাকার এফডিআর, প্রতিষ্ঠানের নামে রেজিস্ট্রি করা জমি ও দক্ষ প্রিন্সিপাল থাকার কথা বলা হয়েছে। ভর্তির আসন বিবেচনায় প্রতি চার শিক্ষার্থীর বিপরীতে থাকবেন একজন শিক্ষক। ব্যবহারিক শিক্ষায় আট শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। থাকবে প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি, মিলনায়তন, অডিও ভিজুয়াল কক্ষ ও হাসপাতাল। তবে নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ভুয়া কাগজপত্র, মিথ্যা তথ্য ও জাল সনদ দেখিয়ে বিভিন্ন জেলায় অবৈধভাবে নার্সিং ইনস্টিটিউট ও কলেজ গড়ে তোলা হয়েছে। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর ও নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশে ৩৭২টি বেসরকারি নার্সিং কলেজে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৪ হাজার ৩৫০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এই হিসাবে কলেজগুলোয় ৪ বছরের একাডেমিক (প্রাতিষ্ঠানিক) শিক্ষাজীবনে ২১ হাজার ৭৫০ জন লেখাপড়া করছেন। নিজস্ব হাসপাতাল নেই, এমন ৩১৫টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যায় আছেন।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়া বলেন, নার্সিং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অধিদপ্তর ও নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল রয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তারা অনুমোদন দিয়েছেন। সংকট রেখে প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেলে সেবায় প্রভাব পড়বে।

এ বিষয়ে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রাশিদা আক্তার বলেন, ‘নার্সিং শিক্ষার মান উন্নয়নে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। নীতিমালা সংশোধনের কাজ চলছে। তবে অনেক সময় আমাদের পক্ষে সংকট নিরসন সম্ভব হয় না। সংকট নিরসনে প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’

এদিকে, নার্সিং শিক্ষায় সংকট নিরসন ও শিক্ষার মান উন্নয়নে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল এবং বেসরকারি নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের বৈঠক হবে বৃহস্পতিবার। সকাল ১১টায় বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058162212371826