১৮ ডিসেম্বর কাতারের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয় করে নেয় লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ম্যারাডোনার হাত ধরে বিশ্বজয়ের পর ৩৬টি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে। অবশেষে মেসির হাত ধরে আবারও শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলো আলবিসেলেস্তারা।
অধরা বিশ্বকাপ ট্রফিটা জয় করার পর মেসির অনুভূতিটা তখন কেমন ছিল? হয়তো তিনিই ভালো বলতে পারবেন। মাঠে থাকা সবার সঙ্গে কুশল বিনিময়পর্ব সারছিলেন তখন আর্জেন্টাইন খুদেরাজ। মাঠেই হেঁটে হেঁটে কথা বলছিলেন সবার সঙ্গে।
এ সময় হঠাৎ করেই পেছনে থেকে আর্জেন্টিনার জার্সি পরা এক নারী এসে মেসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মেসি ঘুরে দাঁড়িয়ে সেই নারীকে দেখতে পেয়েই পরম মমতায় জড়িয়ে ধরেন। বেশ কিছুক্ষণ জড়িয়ে রাখেন তাকে।
সেই ভিডিওটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় এবং ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয় মাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন মেসি। বিশ্বের অনেক নামি-দামি মিডিয়াও সংবাদ প্রকাশ করে, মেসি যাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন তিনি তার মা। কেউ কেউ আবার লিখেছিলেন, না ইনি মেসির মা নন। ইনি আসলে আগুয়েরোর মা। আগুয়েরো ছোটবেলা থেকেই মেসির বন্ধু।
মূলত ওই নারী মেসি কিংবা আগুয়েরো- কারোরই মা নন। তিনি আসলে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের রাঁধুনি। তার নাম আন্তোনিও ফারিয়াস। শুধু একজন রাঁধুনি হিসেবে নন, তিনি আর্জেন্টিনা খেলোয়াড়দের কাছেও খুব জনপ্রিয়। তাকে মায়ের মমতায় মেসির জড়িয়ে ধরাই এর প্রমাণ।
প্রায় একযুগেরও বেশি সময় ধরে মেসিদের রাঁধুনি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। আর্জেন্টিনা ফুটবল দল যেখানেই যায়, সেখানেই সফরসঙ্গী হন তিনি।
গত বছর মারাকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকা জয়ী আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গেও ছিলেন এবং গত জুনে ফাইনালিসিমায় ইতালিকে হারিয়ে যে শিরোপা জিতেছিলো আর্জেন্টিনা, সে দলের সঙ্গেও ছিলেন। শুধু তাই, চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপেও দলের সঙ্গে মূল রাঁধুনি হিসেবে সফর করেছিলেন আন্তোনিও ফারিয়াস।
অসাধারণ রান্নার গুনের কারণে ফারিয়াস আর্জেন্টিনা দলের ফুটবলারদের খুব প্রিয় এক ব্যক্তিত্ব। শুধু রান্নাই নয়, বিভিন্ন উপলক্ষে- যেমন কারো জন্মদিন, তিনি স্পেশাল কেক বানাতেও পারদর্শী। সদ্য হাসিখুশি এই নারী তাই মেসিদের এতটা প্রিয় হয়ে উঠতে পেরেছেন। যাকে বিশ্বকাপ জয়ের পর মাঠে দেখেই জড়িয়ে ধরেছিলেন মেসি।
আর্জেন্টিনা অধিনায়ক পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও শিরোপা উদযাপন করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্ত্রী আনতোনেল্লা রোকুজ্জো, তাদের তিন ছেলে এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা।
বিশ্বকাপ জয়ের পরই মেসির পরিবার মাঠে নেমে আসে। মাঠে নেমে আসেন মেসির খুব প্রিয় বন্ধু ও সাবেক সতীর্থ সার্জিও আগুয়েরো। ছেলে থিয়াগো এবং মাতেওকে কোলে নিয়ে আদর করতে দেখা যায় মেসিকে।
আগুয়েরো মেসিকে কাঁধে তুলে নেন। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ডিয়েগো ম্যারাডোনার সেই আইকনিক ছবির পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের কাতারে। সতীর্থরাও মেসিকে ঘিরেই উল্লাসে মাতেন।