টোলের আওতায় আসছে আরো ৭ এক্সপ্রেসওয়ে - দৈনিকশিক্ষা

টোলের আওতায় আসছে আরো ৭ এক্সপ্রেসওয়ে

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

সারাদেশের সড়কের মান উন্নয়নে নির্মাণ করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের এক্সপ্রেসওয়ে বা ছয় লেনের মহাসড়ক। সেই ধারাবাহিকতায় আরো সাতটি মহাসড়কে ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে।

এগুলো হলো ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-সিলেট, সিলেট-তামাবিল, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ভাঙ্গা-বেনাপোল, ভাঙ্গা-বরিশাল ও ঢাকা-বাইপাস। এর মধ্যে ঢাকা-রংপুর ও ঢাকা-সিলেটের নির্মাণ কাজ চলছে। তাই নতুন এই মহাসড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হলে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টোলের আওতায় আনা হবে বলে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়।

এই বিষয়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, ‘বাংলাদেশের সড়কের মান বৃদ্ধি জন্য নতুন নতুন এক্সপ্রেসওয়ে বা ছয় লেনের মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায় রয়েছে। এই সড়ক আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নির্মাণ করা হয়েছে। এখন থেকে নতুন যত মহাসড়ক নির্মাণ করা হবে সব সড়ক ছয় লেন বিশিষ্ট হবে।’ তাই সড়কের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এসব সড়ক টোলের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নিমিত্ত একটি নিরাপদ, আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, টেকসই ব্যয় সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কাজ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। বর্তমানে সারাদেশে ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯৯১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ১১০টি জাতীয় মহাসড়ক, ৪ হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ১৪৭টি আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১৩ হাজার ৫৮৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে ৭৩৫টি জেলা মহাসড়কের নেটওয়ার্ক রয়েছে।

জাতীয় মহাসড়কের মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে বিভাগীয় সদর, সমুদ্র বন্দর, বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, প্রধান নদীবন্দর, অর্থনৈতিক অঞ্চল, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, কন্টেনার টার্মিনাল ডিপোসমূহের সংযোগকারী সড়ক, এক বিভাগীয় সদরের সঙ্গে অন্য বিভাগীয় সদরের সংযোগকারী সড়ক, বিভাগীয় সদরকে বেষ্টনকারী সার্কুলার রিং- রোড অথবা উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগের জন্য নির্ধারিত সড়কসমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া জেলাসমূহের সঙ্গে জাতীয় মহাসড়ক, সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর, নদীবন্দরের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য নির্ধারিত সড়কসমূহ আঞ্চলিক মহাসড়কের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি উপজেলাসমূহের সঙ্গে জেলা সদর অথবা উপজেলার সংযোগকারী সড়ক জেলা মহাসড়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এ ছাড়া মহাসড়ক নেটওয়ার্কে ১৫০০ মিটার পর্যন্ত সকল সেতু, ফ্লাইওভার, রেলওয়ে ওভারপাস ইত্যাদি নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। পাশাপাশি সময়ের ব্যবধানে উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে। ঢাকা (যাত্রাবাড়ী)-মাওয়া-ভাঙ্গা দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে, যা পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশের বিস্তৃত সীমান্ত এলাকা ও পাহাড়ী জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর এবং নিরাপদ করার জন্য সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করছে সওজ।

তবে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বাংলাদেশের বেশিরভাগ সড়কেই নি¤œমানের ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত বা মানহীন। দুই লেনের এ মহাসড়কগুলোতে নেই কোনো সড়ক বিভাজক (ডিভাইডার)। সড়কের দুই পাশেও কোনো সীমানা প্রাচীর নেই। পৃথক লেন না থাকায় একই সঙ্গে চলে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যান। ফলে বাংলাদেশের মহাসড়কগুলো অনেক বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ। তাই সড়কের মান বৃদ্ধির জন্য এখন থেকে সব নতুন মহাসড়কে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচলের জন্য পৃথকসহ ছয় লেনের মহাসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। তাই নতুন সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টোলের আওতায় আনা হবে বলে সওজ’ কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে সওজের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান জানান, সারাদেশের নতুন মহাসড়কে সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনের মহাসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এই সড়কগুলোতে প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলোর উন্নয়ন করা হবে। সড়কগুলোয় প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত হিসেবে গড়ে তোলা, সার্ভিস লেনের মতো বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তাই সড়কগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টোলের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

সওজের সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে চারটি সড়কে যানবাহন থেকে টোল আদায় করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এগুলো হলো- ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক (ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে), ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক, প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম বন্দর সংযোগ সড়ক এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জগদীশপুর থেকে শেরপুর পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার অংশে।
নতুন করে ঢাকা-সিলেট, সিলেট-তামাবিল ও ঢাকা বাইপাস মহাসড়কের উন্নয়নে কাজ চলছে। মহাসড়ক তিনটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেই সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টোল আদায় করবে সওজ। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রামে টোল আদায় শুরু হবে মহাসড়কটিকে এক্সপ্রেসওয়ে মানে উন্নীতের পর। একইভাবে চারলেনে উন্নীতের পর টোল আদায় শুরু হবে ভাঙ্গা-বেনাপোল ও ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কে।

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের টোল নীতিমালা অনুযায়ী এসব সড়কে যানবাহনের ভিত্তি টোল কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা। বর্তমানে এ নীতিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। সংশোধিত খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে ভিত্তি টোলের সঙ্গে প্রতি বছর সমন্বয় করা হবে ভোক্তা মূল্যসূচক (পরিবহন)। অর্থাৎ ভোক্তা মূল্যসূচক বাড়লে প্রতি বছর বৃদ্ধি পাবে টোলের হার।

বিদ্যমান ও খসড়া সংশোধিত-দুই নীতিমালাতেই টোল আদায়ের জন্য যানবাহনের ১৩টি শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়েছে। যানবাহনভেদে টোল হারে রয়েছে ভিন্নতা। সবচেয়ে বেশি টোল নির্ধারণ করা আছে ‘ট্রেইলার’ শ্রেণির মোটরযানের। অন্যদিকে সবচেয়ে কম টোল নির্ধারণ করা আছে রিক্সা, ভ্যান, বাইসাইকেল, ঠেলাগাড়ির মতো যানবাহনের; যেগুলো মোটরচালিত নয়।

সওজ’র কর্মকর্তারা জানান, নতুন সড়কগুলোর মধ্যে সবার আগে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের কাজ শেষ হবে আগে। এই মহাসড়কটি জয়দেবপুর-এলেঙ্গা অংশ চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। দুই পাশে রয়েছে দুটি আলাদা সার্ভিস লেন। এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়কটি একইভাবে উন্নয়ন করা হচ্ছে। নির্ধারিত মেয়াদ অনুযায়ী মহাসড়কটির উন্নয়ন কাজ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। এ ছাড়া আলাদা সার্ভিস লেনসহ ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়কও চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এর মধ্যে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের জুনে ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে সম্পন্ন করার জন্য নির্ধারিত আছে।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) পদ্ধতিতে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে ঢাকা বাইপাস মহাসড়ক। নির্মাণাধীন ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কটি জয়দেবপুর থেকে শুরু হয়ে দেবগ্রাম, ভুলতা হয়ে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত বিস্তৃত। চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ে ও দু’পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য পৃথক লেন নির্মাণ করা হচ্ছে, যার কাজ চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। পিপিপি চুক্তি অনুযায়ী, নির্মাণ-পরবর্তী ২৫ বছর সড়কটি থেকে টোল আদায় করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এ ছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল এবং ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়কটি পৃথক লেনসহ চার লেনে উন্নীত করা হবে। পাশাপাশি চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এক্সপ্রেসওয়ে মানে উন্নীত করা সমীক্ষার কাজ চলছে বলে সওজের কর্মকর্তারা জানান।

 

সব প্রাথমিকে তারুণ্যের উৎসবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব নিয়ে কর্মসূচি - dainik shiksha সব প্রাথমিকে তারুণ্যের উৎসবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব নিয়ে কর্মসূচি ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে দায় নেবে না ইউজিসি - dainik shiksha ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে দায় নেবে না ইউজিসি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি: কপাল খুললো ভুল চাহিদায় সুপারিশ পাওয়াদের - dainik shiksha পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি: কপাল খুললো ভুল চাহিদায় সুপারিশ পাওয়াদের কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদন শেষ হচ্ছে কাল - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদন শেষ হচ্ছে কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসির ফরম পূরণ শুরু রোববার - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু রোববার অনার্স ২য় বর্ষে ফের ফরম পূরণের সুযোগ - dainik shiksha অনার্স ২য় বর্ষে ফের ফরম পূরণের সুযোগ আলামত ধ্বংস বিভাগ থেকে বের হতো প্রশ্ন, কর্মচারী আকরামের স্বীকারোক্তি - dainik shiksha আলামত ধ্বংস বিভাগ থেকে বের হতো প্রশ্ন, কর্মচারী আকরামের স্বীকারোক্তি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.023701190948486