ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্র উত্তম ও সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতাসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতারকৃত উত্তম ও সেলিম সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবত টিকেট কালোবাজারির মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
র্যাবের দাবি, চক্রের সদস্যরা প্রতিটি টিকেট দেড় থেকে দুই গুণে বিক্রি করে লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ তারা নিত এবং বাকি ৫০ শতাংশ কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী ও তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহজ ডটকমের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আইটি বিশেষজ্ঞদের দেওয়া হতো।
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এর আগে গতকাল রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩। এসময় অবৈধভাবে সংগ্রহ ও মজুদকৃত ১২ শর অধিক ট্রেনের টিকেট উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছে কালোবাজারির সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতা মো. সেলিম (৫০), তার প্রধান সহযোগী মো. আনোয়ার হোসেন কাশেম (৬২), শ্রী অবনী সরকার সুমন (৩৫), মো. হারুন মিয়া (৬০), মো. মান্নান (৫০), মো. আনোয়ার হোসেন ডাবলু (৫০), মো. ফারুক (৬২), মো. শহীদুল ইসলাম বাবু (২২), মো. জুয়েল (২৩), মো. আব্দুর রহিম (৩২)।
তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উত্তম সিন্ডিকেটের মূলহোতা উত্তম চন্দ্র দাস (৩০), তার প্রধান সহযোগী মো. মোর্শিদ মিয়া জাকির (৪৫), আব্দুল আলী (২২), মো. জোবায়ের (২৫) কে আটক করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সেলিম ও উত্তমের নেতৃত্বে চক্রটি সময় বুঝে সংগ্রহকৃত টিকিট নিয়ে রেলস্টেশনের ভেতরে অবস্থান করে। টিকিট না পাওয়া সাধারণ যাত্রীদের নিকট তারা টিকেট বিক্রির জন্য ঘুরাঘুরি করে এবং অধিক মূল্যে টিকিট বিক্রি করে। এছাড়াও ট্রেন ছাড়ার সময় তাদের মজুতকৃত কালোবাজারি টিকিটের দাম বৃদ্ধি পেয়ে থাকে এবং সুযোগ বুঝে অনেক ক্ষেত্রে টিকিটের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে দেয়। ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন ছুটিকে কেন্দ্র করে গ্রেফতারকৃতরা প্রতিটি টিকেট ৩-৪ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রয় করে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে সেলিম সিন্ডিকেটের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত সেলিম ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে উত্তম সিন্ডিকেটের মূলহোতা উত্তমের নেতৃত্বে এই চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ মহানগর প্রভাতী, তুর্ণা নিশিথা, চট্টলা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল।
র্যাব জানায়, প্রথমত ট্রেনের কাউন্টারে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ যাত্রী, রেলস্টেশনের কুলি, স্টেশনের আশপাশের এলাকার টোকাই, রিকশাওয়ালা ও দিনমজুরদের টাকার প্রলোভনে লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকেট সংগ্রহ করে। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেককে ৪টি করে টিকিট সংগ্রহ করার বিনিময়ে ১০০ টাকা করে দে্ওয়া হতো। এছাড়াও কাউন্টারে থাকা কিছু অসাধু টিকেট বুকিং কর্মচারীদের দিয়ে বিভিন্ন সাধারণ যাত্রীদের টিকিট কাটার সময় প্রদেয় এনআইডি সংগ্রহ করে রাখে এবং পরবর্তীতে সেগুলো ব্যবহার করে সংরক্ষণকৃত প্রতিটি এনআইডি দ্বারা ৪টি করে ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করে থাকে। এভাবে তারা প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শতাধিক টিকেট সংগ্রহ করত। অনেক ক্ষেত্রে টিকেট কাউন্টারে নিজেরা লাইনে দাঁড়িয়ে এবং কৌশলে লাইনে অপেক্ষমাণ টিকিটপ্রত্যাশী সাধারণ যাত্রীদের এনআইডি ব্যবহার করে ৪টি টিকেট ক্রয় করে ৩টি টিকেট নিজেরা তার কাছ থেকে টাকা দিয়ে টিকেটগুলো কিনে নিত। এছাড়াও ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে তারা রেলস্টেশনে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মচারী এবং অনলাইনে টিকিট ক্রয়ের জন্য ব্যবহৃত ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সার্ভার রুম/আইটির সদস্যদের সহযোগিতায় তাদের কাছে সংরক্ষিত জনসাধারণের এনআইডি এর তথ্য ব্যবহার করে এমনকি সার্ভার ডাউন করে তারা অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করত। পাশাপাশি গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দিয়ে অনলাইনে টিকিট কেটে সেগুলো তাদের নিকট থেকে সংগ্রহ করত।
এছাড়াও গ্রেফতারকৃতরা স্টেশনে থাকা তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যদের দিয়ে কাউন্টার থেকে স্ট্যান্ডিং টিকেট সংগ্রহ করত। উক্ত টিকিটের মূল্য কাউন্টারের বুকিং কর্মচারীদের সাথে তারা ভাগ করে নিত।