মধ্যরাতে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় ডাকাতি করতে গিয়ে থানা-পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া পুলিশের তিন কনস্টেবলকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা পিএমও শাখার মিরপুর বিভাগে কর্মরত বলে জানা গেছে। ১ এপ্রিল রাত ১২ টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুলিশ বক্সের সামনের সড়ক থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।
তিন পুলিশ কনস্টেবলসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আহসান উল্লাহ। মামলাটি তদন্ত করছেন উপপরিদর্শক (এসআই) আকিব নুর।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, রবিউল ব্যাপারী (২৭), মো. আজাদ (২৪) ও উজ্জ্বল চন্দ্র বর্মণ (২৫)। তাঁদের কাছ থেকে একটি হাতকড়া, লেজার লাইট ও তিনটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
ওই অভিযানে থাকা বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই রাতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তিন কনস্টেবলকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা স্বীকার করেছেন, সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ডাকাতির উদ্দেশ্যেই সেদিন তাঁরা সেখানে অবস্থান করেছিলেন।
তিন পুলিশ কনস্টেবলের মধ্যে উজ্জ্বল চন্দ্র বর্মণের কাছ থেকে একটি হাতকড়া জব্দ করা হয় বলে পুলিশের বিমানবন্দর জোনের সহকারী কমিশনার আসমা আক্তার সোনিয়া জানান। এ ঘটনায় ওই রাতেই (২ এপ্রিল প্রথম প্রহরে) তিন পুলিশ কনস্টেবলসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আহসান উল্লাহ। মামলার জব্দ তালিকায় একটি হাতকড়া ছাড়াও একটি লেজার লাইটের উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া তিন আসামির মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে।
মামলার বাদী এসআই আহসান উল্লাহ বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে হাজির হওয়ার পর একটি মাইক্রোবাস দেখতে পান। তখন গাড়িতে অবস্থান করছিলেন কয়েকজন। আর বাকিরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। পুলিশের গাড়ি আসার পর গাড়িতে থাকা ডাকাত দলের সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যান। তিনজনকে গ্রেফতার করার পর জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, তাঁরা পুলিশের কনস্টেবল।
মামলায় নীলফামারীর আবদুর রাজ্জাক (২৬), মাদারীপুরের প্রদীপ বালা (২৪), গোপালগঞ্জের লিংকন মণ্ডলকে (৩৩) আসামি করা হয়েছে। অপর তিন আসামি মিন্টু (৩০), বিচিত্র (৩৭) ও জীবনের (৪২) নাম–ঠিকানা জানা যায়নি।
গত সোমবার পুলিশের তিন কনস্টেবলকে আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে বিমানবন্দর থানা–পুলিশ। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গ্রেফতার তিন আসামি ও পলাতক আসামিরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের যানবহনের গতি রোধ করে তাঁদের সঙ্গে থাকা মূল্যবান স্বর্ণালংকার ও মালামাল ডাকাতি করে আসছেন। তাঁরা আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য।তবে গ্রেফতার তিন পুলিশ সদস্যের আইনজীবী সুলতানা আক্তার বলেন, পুলিশের কনস্টেবল পদে কর্মরত তাঁর তিন মক্কেলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা দেওয়া হলেও কোনো ধরনের অস্ত্র জব্দ করা হয়নি। হয়রানির জন্য এই মামলা দেওয়া হয়েছে বলে আদালতের কাছে দাবি করেন আইনজীবী সুলতানা।
শুক্রবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তিন কনস্টেবলকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা স্বীকার করেছেন, সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। অভিযানের সময় ডাকাত চক্রের কয়েকজন একটি মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যায়।