ডিজিটাল যুগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে মান্ধাতার আমলের পদ্ধতি - দৈনিকশিক্ষা

ডিজিটাল যুগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে মান্ধাতার আমলের পদ্ধতি

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন হচ্ছে অনলাইনে। এমনকি বিসিএস, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ আবেদনও হচ্ছে অনলাইনে। অথচ স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জনবল নিয়োগে আবেদন প্রক্রিয়া এখনো পড়ে আছে মান্ধাতার আমলের পদ্ধতিতে। কোথাও কোথাও ১৭ সেট পর্যন্ত আবেদনপত্র জমা দিতে হচ্ছে। এত সেট বানাতেই কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে চাকরিপ্রার্থীদের। একই সঙ্গে পড়তে হচ্ছে নানা ভোগান্তিতে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রার্থীদের ৭ থেকে ১৭ সেট আবেদনপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রযুক্তিগতভাবে সবচেয়ে দক্ষ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ও (বুয়েট) এর বাইরে নয়। গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষক পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ১৭ সেট আবেদনপত্র চেয়েছে। প্রতি সেটের সঙ্গে আবেদনপত্র, সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, টেস্টিমোনিয়াল, ট্রান্সক্রিপ্ট/ মার্কশিট, অভিজ্ঞতার সনদ এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি চাওয়া হয়। এর মধ্যে একটি সেটের সঙ্গে পাসপোর্ট সাইজের তিন কপি ছবি এবং পে অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট অথবা ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ সংযুক্ত করতে বলা হয়। এসব সেট বাঁধাই করে জমা দিতে বলা হয় বুয়েটের রেজিস্ট্রার বরাবর। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে বুয়েট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ-ফোর অফসেট পেপারে সব কাগজের ১৭ কপি প্রিন্ট করতেই খরচ দাঁড়ায় সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। বাঁধাই খরচ প্রায় ১ হাজার ২০০ টাকা। পাঠানোর খরচ দূরত্বভেদে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা।

২০২১ সালে বুয়েটের খণ্ডকালীন প্রভাষক ছিলেন হুমায়রা আনান। ওই বছরের ডিসেম্বরে তিনি পূর্ণকালীন প্রভাষক পদের জন্য আবেদন করেন।  তিনি বলেন, সে সময় ১৫ সেট আবেদনপত্র দিতে প্রিন্ট ও আনুষঙ্গিক কাজে তাঁর খরচ হয়েছিল ৪ হাজার টাকার মতো। যিনি এসব সত্যায়িত করেন, তা তাঁর ওপর রীতিমতো অত্যাচার।

বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খাঁন বলেন, ইতিমধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হচ্ছে। শিক্ষকদের যোগ্যতা নির্ধারণসংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নীতিমালা অনুমোদন হলে এটাও ডিজিটাল পদ্ধতিতে নেওয়া হবে।

২ এপ্রিল চারটি বিভাগে ১০ জন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিজ্ঞপ্তিতে গবেষণামূলক প্রকাশনার কপিসহ সাত সেট আবেদনপত্র দিতে বলা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে পুরোনো পদ্ধতি সম্পর্কে অনলাইনে চাকরি খোঁজার প্রতিষ্ঠান বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো ১০-১৫ সেট করে আবেদনপত্র চাওয়াটা খুবই হাস্যকর।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ৩৭টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে ৩৬টিতেই পুরোনো পদ্ধতিতে আবেদনপত্র চাওয়া হয়। শিক্ষক পদের জন্য ৭ থেকে ১১ সেট আবেদনপত্র চাওয়া হয়। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই প্রক্রিয়া চলে আসছে। এটা ডিজিটাল করা দরকার এবং আমরা সেই উদ্যোগও নিয়েছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেখভাল ও অর্থায়ন করার সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়োগ প্রক্রিয়াও ডিজিটাল হয়নি। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘আবেদনের ক্ষেত্রে পুরোনো পদ্ধতি আসলে থাকা উচিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসনে চলে। সব বিষয়ে তো আমরা তাদের ইনস্ট্রাকশন দিতে পারি না। তারা যদি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়, মানসিকতায় স্মার্ট এবং ডিজিটাল হয়, তাহলে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে।’

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031719207763672