লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্য পরিচয়ে এক প্রধান শিক্ষককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিতে গেলে পরিবারটির দুই সদস্যকে কুপিয়ে আহত করা হয় । তুলে নিয়ে যাওয়া নূরুল আমিন (৫৫) পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ি গ্রামের দোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই শিক্ষকের খোঁজ মেলেনি।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ তাকে তুলে আনেনি বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পুলিশ বলছে, অন্য কেউ এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস ও সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার নামুড়ি গ্রামে শিক্ষক নূরুল আমিনের বাড়ির সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। গাড়ি দুটি থেকে ১০-১২ জনের একটি দল প্রধান ফটকের গেট টপকিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢোকে। এ সময় বাড়ির লোকজন পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের ডিবির সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে নূরুল আমিনের খোঁজ করতে থাকে। পরে তাকে তার শয়নকক্ষ থেকে বের করে এনে মারধর শুরু করে। এ সময় বাড়ির লোকজন বাধা দিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নূরুল আমিনের পল্লীচিকিৎসক চাচা আবু তালেব (৭০) ও ভাই স্কুলশিক্ষক রুহুল আমিনকে আঘাত করে। একপর্যায়ে নূরুল আমিনকে গাড়িতে উঠিয়ে তারা দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে। বর্তমানে আহত আবু তালেব ও রুহুল আমিন আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন।
নূরুল আমিনের বাবা আজিজার রহমান (৮৬) বলেন, ফজরের নামাজ শেষে ঘর থেকে বের হলে তিনি বাড়ির উঠানে ১০ থেকে ১২ জনের একটি দলকে দেখতে পান। এ সময় তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ছেলে নূরুল আমিন কোথায় আছে জানতে চায়। একপর্যায়ে নূরুল আমিনকে ঘর থেকে বের করে এনে মারধর শুরু করে। পরে তাকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নূরুল আমিনের চাচা আবু তালেব গতকাল বলেন, পুলিশ পরিচয়ে তার ভাতিজাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আদিতমারী থানা ভবনে গতকাল এই প্রতিবেদকের কথা হয় নূরুল আমিনের স্ত্রী রওশন আরা বেগম রেণু ও ছেলে আব্দুর রউফের সঙ্গে। তারা বলেন, পুলিশ পরিচয়ে কে বা কারা নূরুল আমিনকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় তাদের পুরো পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এর বেশি কোনো কথা বলতে রাজি হননি তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আদিতমারী থানার ওসি মোক্তারুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ পুলিশের কেউ নূরুল আমিনকে তুলে আনেনি বলেও জানান তিনি।