চট্টগ্রামে বিদ্যালয়ে গিয়ে মশার কামড়ে আক্রান্ত হতে পারে এমন আতঙ্কে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে চাচ্ছেন না অভিভাবকরা। নগরীর বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বেশি অনুপস্থিত থাকছে। এ জন্য সংশ্লিষ্টরা ডেঙ্গুতে শিশুদের আক্রান্ত ও মৃত্যুকে দায়ী করেছেন। কারণ, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট রোগীর ৩০ শতাংশের বেশি শিশু। এমনকি ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যেও ৬০ শতাংশ শিশু রয়েছে।
সরেজমিন নগরীর ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। উপস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বুধবার অষ্টম শ্রেণির ‘ক’ শাখায় মোট ৭৭ ছাত্রীর মধ্যে
অভিন্ন চিত্র মেলে কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৫০ শিক্ষার্থীর মধ্যে অনুপস্থিত ২০, তৃতীয় শ্রেণিতে ৬০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০, চতুর্থ শ্রেণির ৮২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪২, পঞ্চম শ্রেণির ৫৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩২ এবং প্রথম শ্রেণিতে ৫৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে অনুপস্থিত ছিল ৩৫ জন।
অভিভাবকরা জানান, বর্ষা মৌসুমে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা ছাড়াও ভবনের চারপাশে পানি জমে থাকে। শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত মশা মারার ওষুধ স্প্রে করা হয় না। কক্ষ অন্ধকার থাকায় মশার উপদ্রব বেশি। এ জন্য বিদ্যালয়ে যেতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে।
নগরীর চকবাজারের কাপাসগোলা এলাকার শিপ্রা বড়ুয়া বলেন, ‘ডেঙ্গু আতঙ্কে বিদ্যালয় খোলার প্রথম তিন দিন ছেলেকে স্কুলে পাঠাইনি। খুব জোরাজুরি করায় বুধবার নিয়ে এসেছি। কিন্তু বেশিরভাগ অভিভাবকই আমার মতো সন্তানকে আনছেন না।’
কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুপন মল্লিক বলেন, ‘প্রতিটি শ্রেণিতেই শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থাকছে। আসলে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে এরই মধ্যে অনেক শিশু আক্রান্ত ও মারা যাওয়ায় অভিভাবকরা ঝুঁকি এড়াতে চাইছেন। তবে টানা কয়েক দিন কেউ অনুপস্থিত থাকলে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’
জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়গুলোর প্রতিদিনের উপস্থিতির হার পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থাকছে। কিন্তু ডেঙ্গু আতঙ্কে, নাকি অন্য কোনো কারণে তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘জুন মাসে যেখানে ২৮২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়, সেখানে জুলাইয়ের শুরু থেকেই আশঙ্কাজনকভাবে রোগী বাড়ছে। আক্রান্ত ও মৃতদের বড় অংশ শিশু। এ জন্য অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। এ সময় শিশুদের বিষয়ে অভিভাবকদের বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।’
চট্টগ্রামে চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনেই রেকর্ড ৬৪৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এ সময় মৃত্যু হয়েছে শিশুসহ চারজনের। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ১৪ জন। এর মধ্যে শিশু রয়েছে ২২৯। মারা যাওয়া ১৩ জনের মধ্যে শিশু ৭।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।