ঢাবি ইচ্ছামতো ভবন বানাতে পারে? - দৈনিকশিক্ষা

ঢাবি ইচ্ছামতো ভবন বানাতে পারে?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) আওতাধীন এলাকায় ইমারতের নকশা অনুমোদন দেওয়ার একমাত্র ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। অথচ রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, মানছে না আদেশ। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, ঢাবি কি ইচ্ছামতো ভবন নির্মাণ করতে পারে? নগর বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যে কোনো ব্যক্তি, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এলাকায় ভবন নির্মাণ করতে চাইলে অনুমোদন নিতেই হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে ইচ্ছামতো অনুমোদন ছাড়াই ভবন নির্মাণ করছে—এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। এ অবৈধ প্রক্রিয়ার অবসান হওয়া উচিত।

ঢাবিতে অনুমোদন ছাড়া ভবন নির্মাণের বিষয়টি সম্প্রতি গণপূর্ত সচিবের সভাপতিত্বে নগর উন্নয়ন কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। সভায় ঢাবিকে রাজউক থেকে অনুমোদন নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়। জানা গেছে, ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ১ হাজার ৪০০ আসনবিশিষ্ট কবি সুফিয়া হল, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ১ হাজার আসনবিশিষ্ট বিজয় একাত্তর হল, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ১ হাজার ৮ আসনবিশিষ্ট ৭ মার্চ ভবন এবং ১ হাজার ৫০০ আসনবিশিষ্ট সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণাধীন রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ১১ তলাবিশিষ্ট নতুন ভবন ও জগন্নাথ হলে রবীন্দ্র ভবন।

এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ২০ তলা শহীদ শেখ রাসেল টাওয়ার নির্মাণ করা হয়। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য নির্মাণ করা হয় ২০ তলা বঙ্গবন্ধু টাওয়ার। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ১০ তলা শেখ কামাল ভবনও নির্মাণাধীন। আজিমপুরে বটতলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য আরেকটি ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

রাজউকের তথ্যমতে, ঢাবিতে নির্মিত ও নির্মাণাধীন কোনো ভবনই রাজউক থেকে নকশার অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জুন ড্যাপ ২০১০-২০১৫-এর গেজেট প্রকাশিত হয়। ওইদিন থেকে ড্যাপের আওতাধীন ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়ার একমাত্র ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রাজউক। অথচ রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই ঢাবি কর্তৃপক্ষ বহুতল ভবন নির্মাণ করছে।

এ বিষয়ে রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. এমদাদুল ইসলাম বলেন, নগর উন্নয়ন আইন ১৯৫৩ এবং ঢাকা মহানগর ইমরাত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন নিতে হবে। তবে অন্য একটি বিধিতে আছে, সরকারি সংস্থা তাদের ভবন নির্মাণে স্থাপত্য অধিদপ্তর থেকে নকশার অনুমোদন নিয়ে করতে পারবে। সেই বিধির আলোকে সরকারি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, এটা করা ঠিক না। কারণ স্থাপত্য অধিদপ্তর শুধু কারিগরি নকশার অনুমোদন দেয়, ইলেকট্রিক্যাল ও প্লাম্বিং ডিজাইন করে না। শুধু কারিগরি ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে সঠিকভাবে ভবন নির্মাণ করা যায় না। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো স্থাপত্য অধিদপ্তরের আওতাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। তাদের ভবন নির্মাণ করতে হলে রাজউকের অনুমোদন নিতেই হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে ইচ্ছামতো অনুমোদন ছাড়াই ভবন নির্মাণ করছে, এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। কোন এলাকার ভবনগুলো কেমন হবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মহাপরিকল্পনা থাকে এবং তারা মহাপরিকল্পনা তদারকি করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দীর্ঘদিন ধরে ভবন নির্মাণের অনুমোদনের বিষয়ে কেউ প্রশ্ন করেনি, প্রশ্ন করা উচিত। তারা আইন না মানলে, দেশে তো আইনের শাসন থাকবে না।

রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, অনুমোদন ছাড়াই ঢাবিতে একের পর এক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাবি সরকারের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হয়ে সরকারের বিধিমালা মানছে না। তারা নিজের ক্ষমতা খাটিয়ে ভবন নির্মাণ করছে। অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণ করতে রাজউক থেকে ঢাবি প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজউকের পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) প্রকৌশলী মো. মোবারক হোসেন বলেন, নকশার অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণ করতে চিঠি দিয়েছি। ওই চিঠির পরও প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। হয়তো আরও ভেটিং করতে হবে।

ড্যাপের আওতাধীন সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালের ভবনের ঝুঁকি নিরূপণ করতে একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল প্রতিবেদন আকারে রাজউকে দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ৪২টি ভেঙে ফেলতে বলা হয়। আর কম ঝুঁকিপূর্ণ ১৮৭টি ভবন রেকট্রোফাইটিং করতে বলা হয়। গবেষণা প্রতিবেদন সম্পর্কে করণীয় ঠিক করতে গত ১১ মার্চ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের সভাপতিত্বে ওসমানী স্মৃতি মিলায়নাতনে নগর উন্নয়ন কমিটির বৈঠক বসে। বৈঠকে রাজউকের আওতাধীন এলাকার সব ধরনের অবকাঠামোর ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদনহীন ভবন নির্মাণের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়।

সভায় অংশ নেওয়া রাজউকের প্রধান পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ঢাবিতে অনেক বহুতল ভবন রাজউকের ভূমি ব্যবহার ও নকশা অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে। এসব ভবন ঝুঁকি মুক্তভাবে নির্মাণ, কি না তা অজানা। বৈঠকে ঢাবি এলাকায় ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঢাবির প্রতিনিধি রাজউকের অনুমোদন নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাহাবুব মোস্তফা বলেন, চিঠির বিষয়টি জানা নেই। আমরা ভবন নির্মাণ করতে রাজউকের কোনো অনুমোদন নিই না। রাজউক থেকে নকশার অনুমোদন নিতে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। আগের প্রকৌশলীরা যেভাবে নির্মাণ করেছেন, সেভাবেই নির্মাণ করছি। পুরো ক্যাম্পাস আমাদের, আমাদের মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদিত, আমাদের এখানে আমরা ভবন নির্মাণ করতেই পারি, এতে কোনা বাধা নেই।

সূত্র : কালবেলা

প্রায় দুই লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পাঁচ লাখ খাতা চ্যালেঞ্জ - dainik shiksha প্রায় দুই লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পাঁচ লাখ খাতা চ্যালেঞ্জ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা, রোজ সম্মানী পাবেন ৫০০ টাকা - dainik shiksha ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা, রোজ সম্মানী পাবেন ৫০০ টাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে বেসরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টালের ভর্তি ফি নির্ধারণ - dainik shiksha বেসরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টালের ভর্তি ফি নির্ধারণ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ঢাবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ - dainik shiksha ঢাবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ নিম্নমানের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হবে - dainik shiksha নিম্নমানের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হবে আসিফ নজরুলের সাথে কি ঘটেছিল জেনেভা বিমানবন্দরে - dainik shiksha আসিফ নজরুলের সাথে কি ঘটেছিল জেনেভা বিমানবন্দরে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033259391784668