ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাধ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়ূনকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ‘প্রলয় গ্যাংয়ের’ সদস্যদের বিচার এবং স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়। এতে শিক্ষার্থী ছাড়াও শিক্ষকরাও অংশ নেন।
অংশ নিয়ে ঢাবির অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ বি এম নাজমুস সাকিব বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপদ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমন যায়গায় ‘প্রলয়’ নামের এমন দুর্ধর্ষ গ্যাং সদস্যরা প্রকাশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর এমন পৈশাচিক হামলার দায় কে নেবে? আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যদের স্থায়ী বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্যাং সংস্কৃতির কবর রচনা করতে হবে।
বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, সংঘবদ্ধভাবে একজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করা খুবই ভয়ানক বিষয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস -ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না। এর আগে এ ধরনের অপরাধের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি দিয়েছে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি হয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখি। আশা করছি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং আগামীতে এ ধরনের গ্যাং কালচার থেকে মুক্ত থাকবে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ভুক্তভোগীর সহপাঠী খালিদ মাহমুদ মিরাজ বলেন, গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত অর্ধশত চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত এই গ্যাংয়ের সদস্যরা। এদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে সহ্য করতে হয় অপমান-হুমকিসহ স্বীকার হতে হয় নানা বুলিংয়ের।
মানববন্ধনে জোবায়েরের সহপাঠী জামিল শামস শাফী বলেন, জোবায়েরের ওপর যেভাবে হামলা করা হয়েছে তা কোনো মানুষের কাজ হতে পারে না। আমরা চাই না এই ক্যাম্পাসে আর কোনো অপরাধী চক্র গড়ে না উঠুক, কোনো গ্যাং তৈরি না হোক। আমরা চাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে, প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী যাতে ন্যায় বিচার পায়, ক্যাম্পাসে নিরাপদভাবে চলাচল করতে পারে। এ ক্যাম্পাসে আমরা চাই না প্রলয় গ্যাংয়ের মতো অপরাধী চক্রের অবাধ বিস্তার। অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানাই।
একই ব্যাচের জান্নাতী ঈশা বলেন, শুধু প্রলয় গ্যাং না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের যতো গ্যাং আছে সবকিছুর নির্মূল চাই। আমরা একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই।
অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অপর শিক্ষার্থী জামিল হোসেন বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এই গ্যাংয়ের সদস্যরা বড় ভাইদের আশ্রয়ে এমন অপরাধ জগৎ গড়ে তুলেছে। নেশার টাকার জন্য দীর্ঘদিন ধরে এরা ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা যুগল, সাধারণ মানুষ, ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে চুরি, ছিনতাই এবং চাঁদাবাজি করে আসছে। ক্যাম্পাসে সন্ধ্যা নামতেই ফুলার রেড, শহীদ মিনার এলাকায় সাধারণ মানুষ এবং ভাসমান দোকানি থেকে অপমান-অপদস্থ করে জোরপূর্বক এমন ন্যক্কারজনক কাজ করে আসছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ায় ফোন করে জোবায়েরকে ডেকে বেদম মারধর করেন ‘প্রলয়’ গ্যাংয়ের ১০-১৫ জনের সদস্যদের একটি দল। এতে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় জোবায়েরের। এ ঘটনায় গতকাল রোববার শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা সাদিয়া আফরোজ খান। লিখিত এ অভিযোগে জোবায়েরের মা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৬-৭ জনের নাম উল্লেখ করেন। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত দুইজন গ্রেফতার হয়েছেন।