ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপমানের অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী এহসান উল্লাহ ধ্রুব। তবে অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অভিযুক্ত ওই শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান।
এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। আত্মহত্যার চেষ্টা করা শিক্ষার্থী ধ্রুব বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক উপ-সম্পাদক।
জানা গেছে, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে শিক্ষা সফরে যাওয়া হয়। সেখানে যাওয়া এক মেয়েকে পছন্দ করতেন ধ্রুব। ওই মেয়ে শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর অভিযোগ ওঠে ধ্রুবের বিরুদ্ধে। তবে ধ্রুবের দাবি সেটি সে তার বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পেরেছে। এদিকে বিষয়টি খোলসা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি সট্যাটাসও দিয়েছেন ধ্রুবের সহপাঠী মাহবুবুর রহমান।
ওই স্ট্যাটাসে মাহবুবুর লিখেছেন, ...গতকাল বৃহস্পতিবার সে (ধ্রুব) ক্লাসে আসার আগেই স্যার আমাদের ক্লাস শুরু করেন এবং ইতোমধ্যে আমাদের একবার বকা দেন যে ক্লাসমেটদের নিয়ে মিথ্যা গুজব ছড়ানো আমাদের ‘র্যাশনাল’ বিহাভিয়র না। এরপর স্যার একেবারে পূর্বের মতোই বলেন- ইচ্ছা করে তোমাদের ছয়তলার ছাদ থেকে ফেলে দেই অথবা তোমাদের সাথে লাফ দেই। এরপর যথারীতি পড়ানো শুরু করেন। ক্লাসের মাঝামাঝি সময়ে ধ্রুব ক্লাসে আসে, স্যার পড়াতে থাকেন। শেষের দিকে স্যার ধ্রুবকে দাঁড়াতে বলেন এবং বলেন এই যে ক্লাসমেটদের সম্পর্কে এত বাজে গুজব তৈরি করলে, তোমাকে এসব কে বলেছে? স্যার কথাটা ধমকের স্বরেই বলেছেন। এরপর ধ্রুব বলেন, স্যার অনেকেই বলেছে। স্যার বলেন, নাম বলো। ধ্রুব বলেন, I can show you screenshots sir, but I can not tell my friends name. স্যার বলেন, না না, তোমার নাম বলতে হবে। এরপর স্যার ওকে কয়েকটা ধমক দেন এবং বলেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া একজন শিক্ষার্থীর এটা বোঝা উচিত তার নিজের ক্লাসমেটদের সম্পর্কে কি বলা যায়, কী বলা যায় না। তুমি ভুলে গেছো আমি তোমার শিক্ষক? একজন শিক্ষকের সামনে তুমি এসব কথা কিভাবে বলো! ধ্রুব বলতে চেষ্টা করে, I want to say something sir. স্যার ওকে থামিয়ে দিয়ে বলেন যে, তুমি একজনকে প্রেমের প্রস্তাব দেবে, সেখান থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কারণে তুমি তোমার ক্লাসমেটের সম্পর্কে এভাবে কুৎসা রটনা করতে পারো না। এরপর স্যার ক্লাস থেকে বেরিয়ে যান। যতদূর শুনেছি এরপর ধ্রুব স্যারের কাছে সরি বলতে যায় এবং স্যার আবার ওর সাথে নীচে নামেন এবং ফুচকাও খাওয়ান। এ ঘটনায় আমার ক্লাসমেট ধ্রুবের পোস্ট এবং সুইসাইড এটেম্পট দুঃখজনক। যেহেতু ওকে পাওয়া গেছে, আমরা ওর দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। কিন্তু এই ঘটনার মধ্যে রাজনীতি কোথা থেকে এসেছে সেটা আমরা ক্লাসে উপস্থিত ৫০ এর বেশি শিক্ষার্থী কেউই বুঝতে পারছি না। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে হাতে গোণা কয়েকজন শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষকের মধ্যে উনাকে পেয়েছি।
তবে ধ্রুবের হলের বন্ধু-বান্ধবরা জানান, ধ্রুব খুব ভালো ছেলে। সুন্দর ছবি তোলার সুবাদে তার অনেক রাজনৈতিক মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। সে হল ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে উপ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক পদ পেয়েছিলো। কয়েকদিন আগে বিভাগের একটি ট্যুরে সুন্দরবন গিয়েছিল তার সহপাঠীরা। সেখানে এক মেয়ে বন্ধুর কিছু কার্যক্রম নিয়ে ‘কুৎসা’ রটানোর অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। অথচ ধ্রুব ট্যুরেই যায়নি। কিন্তু বৃহস্পতিবার শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত সব শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাকে সন্দেহ করেন অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান। সন্দেহ করে তাকে খারাপ, বখাটে ছেলে বলে আখ্যা দেন। ছাত্রলীগের পোস্ট থাকায় তাকে নারী নিপীড়ক খারাপ ছেলেদের দলের অন্তর্ভুক্ত বলে অপমান করেন। পরে ধ্রুব ক্লাসে কান্না করলেও অধ্যাপক তাকে ছাড় দেননি। পরে রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিখোঁজ হন তিনি।
এ নিয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, আমার ভাইয়ের কিছু হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ছাত্রলীগেরও রক্তের মূল্য আছে। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে রক্তের মূল্য আদায় হবে। জয় বাংলা।
গতকাল বৃহস্পতিবার ক্লাসরুমে এসব ঘটনা ঘটার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আত্মহত্যার স্ট্যাটাস দিয়ে এহসান উল্লাহ ধ্রুব নিখোঁজ হন। রাত পৌনে দুইটার দিকে আহতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়।
সার্বিক বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ছাত্রলীগ করার কারণে তাকে অপমানের যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তার কোনো সত্যতা নেই। এর চেয়ে ভয়ানক মিথ্যা হতে পারে না। তাকে (ধ্রুব) নিয়ে ওঠা অভিযোগ নিয়ে কথা বলেছি, বুঝিয়েছি। এক সঙ্গে ফুচকাও খেয়েছি ওইদিন। ক্লাস থেকে চলে যাওয়ার এক পর্যায়ে সে (ধ্রুব) বলে, আপনি আমাকে হিউমিলিয়েট করলেন। আমি আত্মহত্যা করলে এর জন্য আপনি দায়ী থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, পরে ইমেইল ও শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে তাঁর আত্মহত্যার চেষ্টার বিষয়টি জানতে পারি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এবং শুক্রবার সকালেও লম্বা সময় ধরে ওই শিক্ষার্থীর মায়ের সাথে কথা হয়েছে। ধ্রুব এখন অনেকটা ভালো আছে। এই মুহুর্তের একমাত্র কামনা আমার শিক্ষার্থী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।