দীর্ঘ ১৭ বছর পর শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ্যে আসেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সভাপতি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে সাদিক কায়েম নামের এক শিক্ষার্থী নিজেকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান সভাপতি দাবি করেন।
এমন খবর প্রকাশ্যে আসার পর জনমনে চলছে নানান আলোচনা ও সমালোচনা। সেই তালিকায় রয়েছেন আলজাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের।শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টা ৫৯ মিনিটে ঢাবি শিবির সভাপতিকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
সেখানে জুলকারনাইন লেখেন, ছেলেটাকে আমি চিনতাম সালমান নামে, পরিচয় জুলাইর ২৫ তারিখ থেকে, তারপর নিয়মিতই কথা হতো, আমার খুব কাছের বন্ধুদের একটা নেটওয়ার্ক অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু সমন্বয়ককে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করে।
কটা স্ট্যাটাস লিখার জন্যে দুপুর থেকেই চিন্তা করছিলাম, বানরের তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠার মতো অবস্থা হয়েছিলো আমার সিদ্ধান্তের। এক ফুট উঠে তো আবার দুই ফিট স্লিপ করে নীচে নামে। স্বভাব যেহেতু এ ধরনের মতামত চেপে রাখার বিপক্ষে, তাই আমিও আর চেপে রাখতে পারলাম না। তৈলাক্ত বাঁশটা পার করেই ফেললাম।
ছেলেটাকে আমি চিনতাম সালমান নামে, পরিচয় জুলাইর ২৫ তারিখ থেকে, তারপর নিয়মিতই কথা হতো, আমার খুব কাছের বন্ধুদের একটা নেটওয়ার্ক অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু সমন্বয়ককে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করে। মূলত সালমানের সাথে কোঅর্ডিশন করেই সব আয়োজন করা হয়। বয়সে বেশ ছোট সালমানের সাথে বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ একটা সম্পর্ক তৈরি হয় আমার ও আমার বন্ধুদের। ডিবি কার্যালয় যখন সমন্বয়কদের শীর্ষ নেতৃত্ব আটক, তখন সালমান ও অন্যান্য সমন্বয়করা পুরো আন্দোলনের নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। নিরাপদ আবাসে থাকা সবার সাথেই আমার নিয়মিত যোগাযোগ হতো, সত্যি বলতে কি সালমানের পুরো পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ দেখে আমি বেশ অবাকই হচ্ছিলাম। কতইবা বয়স তাঁর, হয়তো ২৪/২৫ হবে, তারপরও এই ছেলে যেভাবে সকল পরিস্থিতে আমার বন্ধুদের পরামর্শে ম্যানুভার করেছে এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ সব স্ট্রাটেজিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
এই তো কয়েকদিন আগেই কথা হলো সালমানের সাথে, কোন পরিবর্তনই নেই ছেলেটার মধ্যে, নিরহংকার সেই একই সালমান। অন্য সকল সমন্বয়কদের থেকে সালমান ও কাদের এই দুটো ছেলে একেবারেই ভিন্ন। দু'জনের নেতৃত্বই অত্যন্ত বলিষ্ঠ।
তো আজকে দুপুরে জানলাম সালমানের প্রকৃত নাম শাদিক কাঁইয়ূম, এবং তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি। অবশ্যই অবাক হয়েছি, বেশ অবাক হয়েছি। কিন্তু প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ না পেয়েও শিবির যে সালমানের (আমার কাছে সে সালমানই থাকবে), মতো একটা নেতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে তার জন্যে সাধুবাদ জানাই।
ছাত্র রাজনীতি সুষ্ঠ ধারার গণতন্ত্রের জন্যে অত্যাবশ্যক, এবং তার সদ্ব্যবহার করে যে কোন রাজনৈতিক দলই যদি সালমান কিম্বা কাদেরের মতো তরুন-তরুনীদের এত ম্যাচিউর্ড নেতা/নেত্রী হিসেবে তৈরি করতে পারে, তাহলে মন্দ কি?এদিকে ঢাবি শাখার সভাপতির পরিচয় প্রকাশ্যে আসার পর এবার আলোচনায় এসেছেন শিবিরের সেক্রেটারি।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা সম্পর্কে একটি স্ট্যাটাস দেন। ওই স্ট্যাটাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সেক্রেটারির প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি। এর পরই শুরু হয় তুমুল আলোচনা।আব্দুল কাদের ওই স্ট্যাটাসে ফরহাদ নামের একজনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সেক্রেটারি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেও বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, শিবিরের সেক্রেটারি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া ফরহাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের এবং কবি জসিম উদদীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনি ২০২২-২৩ সেশনে জসীম উদদীন হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতিও ছিলেন।
এ ছাড়া এস এম ফরহাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।