বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য ডা. এস. এ. মালেকর প্রয়াণে স্মরণ সভার আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ।
শনিবার অনুষদের মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে এ স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সাংবাদিক স্বদেশ রায়, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক, কলামিস্ট সুভাষ সিংহ রায়, প্রয়াত ডা. এস এ মালেকের কন্যা অবনি মাহবুবসহ দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখেন।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান স্মরণসভা সঞ্চালন করেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দর্শন, সামাজিক দর্শন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ভাষা আন্দোলনের বাঙালি জাতীয়তাবাদ চেতনা, বঙ্গবন্ধুর মূল্যবোধ এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার এবং চর্চা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন ডা. মালেক। মানবিক মূল্যবোধ ও অসাম্প্রদায়িকতা চেতনা যখন সংকটের মুখে পড়ত, যখন নানাভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের এবং মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনা পরিপন্থি কোনো অপশক্তির উত্থান হতো তখন তিনি একটা উদ্যোগ নিতেন এবং সামাজিক শক্তিগুলোকে একত্রিত করতেন। সেই উদ্যোগের একটি ফলাফল হল বঙ্গবন্ধু পরিষদ। তিনি একজন খ্যাতিমান কলামিস্ট, লেখক। তিনি বাংলা ও ইংরেজি সমানভাবে লিখতেন। বঙ্গবন্ধুর দর্শন অর্থবহ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে টার্গেট করে লিখতেন ডা. মালেক।
অধ্যাপক এ. কে. আজাদ চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদের শুরু থেকেই অন্যতম কর্ণধার ছিলেন ডা. মালেক। মার্শাল ল' চলাকালে আমরা ঢাবির মাত্র কয়েকজন লোক নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে শিক্ষক ক্লাবে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলাম। তার সাথে ডা. মালেকও সম্পৃক্ত। আওয়ামী লীগের অত্যন্ত খারাপ সময়ে তিনি ছিলেন অগ্রগামী। তাই তার শুন্যতাটা বেশি অনুভূত হয়। সাহসিকতা, নৈতিকতা, বলিষ্ঠতার জন্য ডা. মালেক ছিলেন অনন্য। এমনকি আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডেও যদি কখনো ভুল দেখেছেন তখনই তা জনসম্মুখে বলতেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল এম আমিন উদ্দিন বলেন, ডা. এস. এ. মালেক সবসময় বলতেন পৃথিবীতে কোনো অপরাধের বিচার হবে না এই রকম আইন থাকতে পারে? তিনি ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স এর বিরুদ্ধে সবসময় কথা বলতেন। আমাদেরকেও কথা বলতে উৎসাহিত করতেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধ্যান-ধারণা মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু পরিষদ গঠনের মাধ্যমে তিনি সেই ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছিলেন। এর ফলে আমাদের মাঝ থেকে বঙ্গবন্ধু ও তার আদর্শকে মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ডা. এস. এ. মালেককে আমি 'স্যার' ডাকি। কারণ তিনি আমার আদর্শিক শিক্ষক ছিলেন। বঙ্গবন্ধু পরিষদের সবার আদর্শিক শিক্ষক তিনি। তিনি ছিলেন একজন লিভিং এনসাইক্লোপিডিয়া। অসুস্থ থাকলেও সব বিষয়ে অনর্গল কথা বলতেন।
ডা. এস. এ. মালেকের কন্যা অবনি মাহমুদ বাবার স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমার বাবা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক ছিলেন, আমাদেরকে ছোট বেলা থেকেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে বড় করেছেন। আমরা আসলে ভাগ্যবান যে তার মত একজন বাবা পেয়েছি। আমার বাবার স্মরণে এ রকম একটি আয়োজন করার জন্য আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।