দৈনিকশিক্ষাডটকম, ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে কনসার্টে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। যার রেষ ধরে শুক্রবার জুমার নামাজের পর মধুর ক্যান্টিনেও দুই নেতার উপস্থিতিতে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১৫ জন আহত হয়েছে, একজনকে আইসিউতে নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা থেকে ভোর ৪ টা পর্যন্ত জগন্নাথ হল মাঠে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মাঝে এ সংঘর্ষ হয়।
পূজা উপলক্ষে এ কনসার্টে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাবি সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও তানভীর হাসান সৈকতসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এরমধ্যে সৈকতের অনুসারী হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অপূর্ব চক্রবর্তীর অবস্থা আশংকাজনক। শুক্রবার সন্ধায় তাকে ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। তার মাথায় আট সেলাই দেওয়া হয়েছে।
অন্যান্য আহতরা হলেন, সৈকতের অনুসারী হল ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক পলাশ রয় সৌরভ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুস্ময় দাসসহ পল্লব মন্ডল, অর্পন কুমার বাপ্পি, বিপ্লব পাল, বর্ষণ রায়, কার্তিক কুমার। ইনানের অনুসারীদের মধ্যে ধ্রুব, চিন্ময়, রিদ্ধি, অভি ও প্রিতম। দুইজনের নাম জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কনসার্টে মমতাজের গান শেষ হওয়ার পর শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত চলে যাওয়ার সময় ইনানের অনুসারী হল ক্যান্ডিডেট গণেষ ঘোষের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এটা নিয়ে গনেশ সৈকতের কাছে ক্ষমা চায়। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতারা চলে যাওয়ার পর হল মাঠে ইনানের গ্রুপ ও সৈকতের গ্রুপ বিষয়টি নিয়ে ঝামেলায় জড়ায়। এর জের ধরে লাঠিসোটা নিয়ে রাত ৪ টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ উভয়পক্ষের ১৫ জনের মত আহত হয়।
তবে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কনসার্ট থেকে নেতারা বের হওয়ার সময় গণেশ ঘোষ তার কর্মীসহ এমন অবস্থা তৈরি করে যাতে সৈকত বের হতে না পারে। পরে ঝামেলা হলে সেটা নেতারা মিটিয়ে নেন। কিন্তু তারা চলে যাওয়ার পর জুনিয়র কর্মীদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। রাত আনুমানিক আড়াইটার সময়ে হল ছাত্রলীগের সভাপতি কাজল দাস ও সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণসহ ইনানের গ্রুপ ও সাদ্দামের গ্রুপ এক হয়ে সৈকতের গ্রুপের উপর হামলা চালায়। হামলার সময় উভয় গ্রুপের হাতে হকিস্টিক, পাইপসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়।
এই ঘটনার জের ধরে শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে মধুর ক্যান্টিনে ইনানের কাছে বিচার দিতে আসেন অপূর্ব। কিন্তু সেখানেও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ সময় কর্মীদের থামাতে গিয়ে ইনান ও সৈকত দুজনের গায়ে ধাক্কা লাগে। পরে তারা ক্যান্ডিডেটদের রেখে জুনিয়রদের হলে পাঠিয়ে দেন।
এর আগে সকালে অপূর্ব চক্রবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে বলেন, ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে পরিকল্পিতভাবে আমার উপর এ হামলা হয়েছে। ইনান ভাই ও সাদ্দাম ভাইয়ের গ্রুপ এক হয়ে আমাদের উপর হামলা করেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তানভীর হাসান সৈকত বলেন, জগন্নাথ হলে বহিরাগত এনে ঝামেলার কথা শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে। তারা হল প্রভোস্টের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। আমরা ছাত্রলীগ থেকেও ব্যবস্থা নেব।
শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, হামলা মারামারি হওয়ার কথা শুনিনি। তবে জানতে পেরেছি কিছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামান্য বিষয় নিয়ে সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা সমাধান করব বিষয়টি।
জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.মিহির লাল সাহা বলেন, শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝাবুঝিতে কিছু বিশৃঙ্খলা হয়েছে। বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। বিষয়টি উভয়পক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।