ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পারস্যের লোকজ সংস্কৃতি ও উৎসব’ এবং ‘ফারসি ব্যাকরণের সহজ পাঠ’ শীর্ষক দুটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুমিত আল রশিদ রচিত বই দুটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
ফারসি বিভাগ ও নবান্ন প্রকাশনীর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির ভারতবর্ষ ও বাংলার ইতিহাসের সঙ্গে পারস্যের সম্পর্কের ব্যাপারে বলেন, পারস্যের একটি বড় ভূমিকা ভারত ও বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে মিশে আছে। যেমন মোগল সম্রাজ্যের শাসকরা পারস্যের পথ ধরেই ভারতবর্ষে এসেছিলেন, জয় করেছেন এবং শাসন করেছেন। আমরা পারস্যের অনেক সুফি সাধক পেয়েছি, এখানে যে নওরোজের (নববর্ষ) কথা হলো, সেটি পারস্যেও বিদ্যমান।
তিনি আরও বলেন, আমরা দৈনন্দিন জীবনে ফারসির অনেক সংস্কৃতি গ্রহণ করেছি। জেনে এবং না জেনে এমন অনেক শব্দ আমরা ব্যবহার করি, যা ফারসি থেকে এসেছে। আমাদের দেশের উৎসব সৃষ্টির পেছনে মূল কারিগর হলো উৎপাদন ব্যবস্থা। কারণ আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ।
প্রকাশিত বই দুটির ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, পূর্ণতার দিক থেকে বিচার করলে এই অনুষ্ঠান পরিপূর্ণ। বই দুটির লেখক মুমিতকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের এখন কাজ হলো এটা পড়ে পরামর্শ দেয়া। তাতে লেখক ও লেখা উপকৃত হবে। বই লেখা অনেক কঠিন কাজ, আর এই কঠিন কাজটি মুমিত করে দেখিয়েছে। আমরা আশা করব, সামনের বছরে তার চারটি বই নিয়ে যাতে আমরা আলোচনা করতে পারি।
সভাপতির বক্তব্যে ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন ডিনের দেয়া বইয়ের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবের জবাব দেন। তিনি বলেন, ডিন সাহেব যে প্রস্তাব দিয়েছেন, বইটির নামে ‘পারস্যের লোকজ সংস্কৃতি ও উৎসব’ থেকে যেন ‘ইরানের’ নামে পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু ‘ইরান’ শব্দটি এসেছে অষ্টম শতকে। আর এ বইয়ে পাঁচ হাজার বছর আগের ইতিহাস-ঐতিহ্যও বর্ণিত আছে। তাই আমার মনে হয় এটাই উপযুক্ত।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সিলর সাইয়্যেদ রেজা মীর মোহাম্মদী বলেন, আমি নতুন কালচারাল কাউন্সিলর হিসেবে চেষ্টা করব ঢাবির ফারসি বিভাগের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যেন আরও দৃঢ় হয়। পারস্যের জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার যে জগৎ, সেটিতে প্রবেশের দরজা হচ্ছে ফারসি ভাষা। এই ভাষা শিখলে ফারসি সাহিত্যের বড় একটি জগতে প্রবেশ করা যায়, যে জগতের মধ্যে রয়েছে আধ্যাত্মিকতা, শরিয়ত, মারফত, বিজ্ঞানসহ আরও বিস্তৃত জ্ঞান। ফারসি ভাষার সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক পুরোনো একটি সম্পর্ক রয়েছে। এটি চর্চার জন্য যে দুটি বই লেখা হলো এর মাধ্যমে আশা করি, সবাই মহাজ্ঞানের সেই জগতে প্রবেশ করতে পারবে।
নবান্ন প্রকাশনীর প্রকাশক আমিনুর রহমান সুলতান বলেন, একজন প্রকাশক হিসেবে আমি মনে করি, তরুণ মুমিত আল রশিদ আন্তর্জাতিক মানের একজন লেখক। তাকে নবান্ন ধারণ করতে পেরেছে। ফারসি ভাষা ও পারস্যের সংস্কৃতি নিয়ে আমরা তার দুটি বই প্রকাশ করতে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে ফারসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আহসান আল হাদীর সঞ্চালনায় বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগের ভিজিটিং অধ্যাপক ড. মাজিদ পুইয়ান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর হেড ক্রাইম রিপোর্টার রোজিনা ইসলাম এবং দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র সাব-এডিটর সৈয়দ শমসের।