ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তির সব ইউনিটে ভর্তিযোগ্য (উত্তীর্ণ ও মেধাক্রমপ্রাপ্ত) শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্থী তথ্যের বিস্তারিত ফরম ও বিষয়ের পছন্দক্রম প্রক্রিয়া আজ থেকে শেষ হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত ‘শিক্ষার্থী তথ্যের বিস্তারিত ফরম ও বিষয়ের পছন্দক্রম’ প্রক্রিয়া অংশ নিতে পারবেন। এর আগে গত ১৮ জুন বেলা ৩ টা থেকে অনলাইনে শুরু হয় এই আবেদন প্রক্রিয়া।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ইউনিটের জন্য প্রযোজ্য কেবলমাত্র একটি বিস্তারিত ফরম ও বিষয় পছন্দক্রম একজন শিক্ষার্থীর জন্য প্রযোজ্য হবে ইউনিটভিত্তিক আলাদাভাবে ফরম পূরণ করার প্রয়োজন নেই। এছাড়া ফরম পূরণের সর্বশেষ তারিখ পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থী একাধিক ফরম পূরণ করতে পারবে তবে তাদের মধ্যে একটি গ্রহণ করা হবে।
যে শিক্ষার্থী একাধিকবার ফরম পূরণ করবে তাদের সর্বপ্রথম পূরণ করা ফরমটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে গৃহীত হবে। প্রথমটির পরিবর্তে অন্য কোনো পূরণ করা ফরম তারা চূড়ান্তভাবে দাখিল করতে ইচ্ছুক হলে সেটি ডাউনলোডের পর স্বাক্ষর করে উচ্চমাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন কার্ডের কপিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসে (কক্ষ নং-২১৪, প্রশাসনিক ভবন) সশরীরে এসে তা জমা দিতে হবে। অন্যথায় সর্বপ্রথম পূরণ করা ফরমটিই কার্যকর হবে।
ফরম পূরণে তথ্য:
শিক্ষার্থীর একান্ত নিজস্ব বা তার অভিভাবকের নিজস্ব একটি সচল ই-মেইল ঠিকানা প্রয়োজন হবে। ফরম পূরণের শুরুতেই ওই ইমেইল ঠিকানায় একটি কোড পাঠানো হবে। ইমেইলটি খুলে পাঠানো কোডটি সংগ্রহ করে তা ওয়েবসাইটের ফরমে টাইপ করতে হবে। অন্যথায় ফরম পূরণ করা যাবে না।
কোনোভাবেই অন্য কোন ব্যক্তির (যেমন, এলাকার ইন্টারনেটের দোকান কোচিং সেন্টার, বন্ধু, আত্মীয় বা অন্য কারো) ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করা যাবে না। কারণ, শিক্ষার্থীর সাথে পরবর্তী যোগাযোগের জন্য ওই ইমেইল ঠিকানাটি ব্যবহার করা হবে। একটি ইমেইল ঠিকানা সর্বোচ্চ ২ জন (দুই সহোদর ভাই বা বোনের জন্য একজন অভিভাবকের ঠিকানা হতে পারে) প্রার্থী ব্যবহার করতে পারবে। সহোদর ছাড়া একই ইমেইল ঠিকানা একাধিক প্রার্থীর জন্য ব্যবহার করা যাবে না।
শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকদের (মা ও বাবা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বৈধ অভিভাবকের) বাংলায় সঠিক বানানে নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর, পেশা ও তাঁদের বাৎসরিক আয়ের তথ্য ফরমে দিতে হবে। বার্ষিক আয় সতর্কভাবে উল্লেখ করতে হবে কারণ আয়ের সনদ পরবর্তীতে ভর্তির সময় জমা দিতে হবে।
যদি শিক্ষার্থীর বাবা এবং মা উভয়েই ঢাকার বাইরে অবস্থান করে থাকেন, সেক্ষেত্রে ঢাকায় অবস্থান করেন এরূপ একজন অভিভাবকের (আত্মীয় বা পরিবারের সাথে ঘনিষ্ট) নাম, ঠিকানা ও টেলিফোন নম্বর দিতে হবে। ফরমে স্থানীয় অভিভাবকের অংশে এসব তথ্য দিতে হবে। মা বা বাবা বা বৈধ অভিভাবক ঢাকার বাইরে থাকায় তাদের পক্ষে তিনি (স্থানীয় অভিভাবক) শিক্ষার্থীকে জরুরি সাহায্য এবং নিজ পরিবারের থেকে দূরে থাকায় প্রয়োজনীয় মানসিক সাহস ও স্বস্তি দিয়ে সহায়তা করবেন। বিশেষ জরুরি ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থানীয় অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
এছাড়া যেসব শিক্ষার্থীর মা-বাবা এর অন্তত একজন ঢাকায় বসবাস করেন তাদের স্থানীয় অভিভাবকের তথ্য দিতে হবে না। ধর্ম (শিক্ষার্থীর হল বাছাইয়ের প্রয়োজনে) উল্লেখ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত প্রতিটি শিক্ষার্থীর নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত সোনালী, জনতা অথবা অগ্রণী ব্যাংকের শাখার স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি শিক্ষার্থী বা সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হবে। শিক্ষার্থীর হিসাব খোলার প্রয়োজনে ব্যাংকের নাম (সোনালী বা জনতা বা অগ্রণী) ও পিতা বা মাতা বা বৈধ অভিভাবকের মধ্যে কে ওই হিসাবের নমিনি হবেন তা জানাতে হবে।
বিষয় পছন্দক্রম পুরণ:
শিক্ষার্থী যে কয়টি ইউনটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে সেই সব ইউনিটের নির্দেশিকায় উল্লিখিত ভর্তির শর্তানুযায়ী ভর্তিযোগ্য সকল বিষয়ের তালিকা থেকে শিক্ষার্থীকে বিষয়ের পছন্দক্রম দিতে হবে।
ফরম পূরণ করার পূর্বেই নির্দেশিকায় উল্লিখিত বিষয়গুলোতে ভর্তির শর্তাবলী ও প্রবেশপত্রে উল্লিখিত বিষয় তালিকা অনুযায়ী বিষয়ক্রম তৈরি করে (খসড়া) রাখা উত্তম। সেক্ষেত্রে অনলাইনে একসাথে অনেকগুলো বিষয়কে সহজভাবে ক্রমানুসারে সাজানো যাবে।
শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ১৬ জুন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি সমন্বিত ফল ও ভর্তিযোগ্য বিষয়ের তালিকা প্রিন্ট করে সেখানে খসড়া করে অনলাইনে বিষয়ের পছন্দক্রম সহজভাবে দেয়া যাবে।
বিষয় পছন্দক্রম দেয়ার সময়ে বিভিন্ন ইউনিটভুক্ত বিষয়ের সংমিশ্রণ বা বিন্যাসে দিতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষার্থী যদি বিজ্ঞান ইউনিটভুক্ত পদার্থবিদ্যা ও গণিতে এবং কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট হতে অর্থনীতি ও আইন বিভাগে ভর্তিযোগ্য হয় তবে সে পদার্থবিদ্যা, আইন, গণিত, অর্থনীতি অথবা আইন, গণিত, পদার্থবিদ্যা, অর্থনীতি ইত্যাদি যে কোন বিন্যাসে তার পছন্দক্রম দিতে পারবে। একটি বিষয় কোন ইউনিটভুক্ত তা বিবেচনা করার প্রয়োজন নেই।
বিষয় মনোনয়নের সময়ে ভর্তি পরীক্ষার মেধা অনুসারে শিক্ষার্থীকে বিবেচনা করা হয়। অতঃপর ওই শিক্ষার্থীর পছন্দক্রমকেই গুরুত্ব দেয়া হয়। তার প্রথম পছন্দক্রমের বিষয়ে আসন না পাওয়া গেলে পরবর্তী বিষয়ের আসনের অবস্থা যাচাই করা হয়। এভাবে শিক্ষার্থীর পছন্দক্রমের শেষ বিষয় পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আসনের অবস্থান দেখে শিক্ষার্থীর বিষয় মনোনয়ন দেয়া হয়।
একটি পছন্দের বিষয়ে মনোনয়ন হবে না মনে করে ক্রম তালিকার পিছনে দেয়া হলে মনোনয়নের সময়ে বিষয়টিতে আসন খালি থাকলেও শিক্ষার্থীকে মনোনয়ন দেয়া সম্ভব নয়। এ জন্য ‘বিষয় পাওয়া যাবে বা যাবে না’- বিবেচনায় না নিয়ে শিক্ষার্থীকে তার নিজের ইচ্ছা, বিষয়গুলোতে তার পাঠগ্রহণের চাপ নেয়ার সক্ষমতা ইত্যাদি বিবেচনা করে বিষয়ের পছন্দক্রম দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।