ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহলুল হক চৌধুরীর মৌখিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ৪২ জন কর্মচারীর নিয়োগ স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এটিকে ‘অমানবিক সিদ্ধান্ত’ দাবি করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন বঞ্চিতরা। বুধবার দুপুর দুইটার দিকে তারা অবস্থান শুরু করেন।
এ দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের সুযোগ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি না মেনে বেশ কয়েক বছর আগে অধিভুক্ত কলেজগুলোর কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ৫৩ জনকে মৌখিকভাবে নিয়োগ দেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহলুল হক। এ নিয়ে গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি এক কর্মকর্তার মৃত্যুর জানাযায় উপাচার্য ও দুই উপ-উপাচার্য অংশ না নেয়ায় উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে ‘প্রতিবাদী মোনাজাত’ করে আলোচনার জন্ম দেন বাহলুল হক। এরপর তার পরিবার থেকে জানানো হয় তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার ‘অনুপস্থিতিতে’ উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছানাউল্লাহকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব প্রদান করে কর্তৃপক্ষ। এর পর আজ মৌখিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়োগ স্থগিত করা হয়।
আন্দোলনরত মৌখিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী মো. সুমন মিয়া বলেন, আমরা মৌখিকভাবে ৫৩ জন নিয়োগ পেয়েছিলাম। গত পাঁচ বছর যাবত বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এর মধ্যে ১১ জনের নিয়োগ স্থায়ী হয়েছে, আমাদেরও প্রত্যাশা ছিল আমাদের নিয়োগ স্থায়ী হবে। মঙ্গলবার অফিস শেষে আমাদেরকে জানানো হয়, আমাদের দায়িত্ব হস্তান্তর করতে। হঠাৎ করে আমরা কোথায় যাব? এখন আমাদের অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আমরা এ সিদ্ধান্ত মানি না।
আকিব রায়হান নামে আরেক চাকরিবঞ্চিত বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. ছানাউল্লাহ জানিয়েছেন একমাস পর আমাদের পুনরায় নিয়োগের বিষয়ে জানানো হবে। তবে আমাদের লিখিতভাবে সেটি জানাতে হবে। মৌখিক কথার ভিত্তি নেই।
ফাতিহা আহমেদ নামে আরেক অবস্থানকারী বলেন, আমাদের একটাই দাবি আমাদের ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’, অর্থাৎ আমরা কাজ করলে বেতন পাব, না হলে পাব না—এই ভিত্তিতে রাখা হোক।
অবস্থানের বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে জানিয়েছি, তাদের দাবিদাওয়া শুনে কর্তৃপক্ষকে জানাতে। তিনি দেখছেন।’
এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. ছানাউল্লাহ বলেন, ‘আমাদের কন্ট্রোলার স্যার (বাহালুল) মৌখিকভাবে তাদের নিয়োগ দিয়েছিল, বিভিন্ন কাজে সহযোগিতার জন্য। আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর তাদের বলছি, আপনাদের আপাতত কাজ করা লাগবে না, নিয়মমাফিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যখন নিয়োগের কাজ শুরু হবে তখন আপনাদের বিষয়টি বিবেচনায় রাখব।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের জনবল লাগলে সেটি নিয়মের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। অননুমোদিতভাবে কিছু করা যাবে না। আমাদের লোকবলের চাহিদা আছে, তবে সেটি যথাযথভাবে দেখেশুনে নিয়মনীতি মেনে করতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার কারণ নেই।
প্রসঙ্গত, বাজারদরের চেয়ে কম দামে পছন্দের ব্যক্তির কাছে পুরোনো কাগজ বিক্রি, অধিভুক্ত কলেজের প্রবেশপত্র ফি নগদে গ্রহণ ও লেনদেনে অস্বচ্ছতাসহ অনিয়মের অনেকগুলো অভিযোগ রয়েছে মো. বাহালুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এর প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিষয়ে তথ্য চেয়েছিল। এর পর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল বাহালুল হককে।