ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও আরবি বিভাগের ইতিহাস একইসূত্রে গাঁথা বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
শনিবার আরবি বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
উপাচার্য বলেন, ‘আরবি বিভাগের একটি ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস এবং আরবি বিভাগের ইতিহাস একইসূত্রে গাঁথা। আমাদের যারা পূর্বসূরি ছিলেন, যাদেরকে নিয়ে আমরা গর্ব অনুভব করি। তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। কারণ এটা শুধু একটি ভাষা সেটি নয়, এটি উন্নত সমৃদ্ধ ভাষা, কোরআনের ভাষা, একটি জাতির ভাষা এবং তার একটি উন্নত সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা একটি ভাষাকে, একটি সংস্কৃতিকে সম্মান করবে, তারা আর পাঁচটিকে সম্মান করতে শেখে। যে ইসলাম ধর্মের অনুরাগী, সে অন্য ধর্মের মানুষদের সম্মান করতে জানে। যে ইসলামের প্রতি অনুরক্ত না, তিনি কিন্তু অন্য ধর্মকেও সম্মান করতে জানেন না। কেননা যে নিজেকে সম্মান করতে জানে, তিনিই তো অন্যকে সম্মান করতে জানেন। এটাও সৃষ্টিকর্তার একটা রহস্য, সৃষ্টির একটা মাহাত্ম্য। যে আমরা নিজেকে ভালোবাসব, নিজ মত, দর্শনকে ভালোবাসব একইভাবে অন্যকেও ভালোবাসব, সম্মান করব। এটা হলো কোরআনের শিক্ষা ও মহানবী (স.) এর পবিত্র শিক্ষা।’
অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, মানবতাই সবচেয়ে বড় ধর্ম, মানুষের ওপরে কিছু নাই। সে মানুষকে যখন আমরা ধারণ করতে পারব না, অবজ্ঞা করব, ছোট করব তখন আমাদের নানা বিপর্যয় দেখা দিবে। এখন এসডিজির যুগে যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে এসডিজিকে একটি উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, আন্তর্জাতিক মণ্ডলে একটি শ্রদ্ধাশীল অবস্থান চলে এসেছে, উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আমরা নানা ক্ষেত্রে বিবেচিত হচ্ছি। তখন কিন্তু অন্ততপক্ষে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক সমাজ বিনির্মাণে বিকল্প আমাদের নেই।
বিভাগের সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ করে উপাচার্য বলেন, আপনাদের প্রতি আমাদের আহ্বান আপনাদের যে ইতিহাস ঐতিহ্য আছে, আপনাদের অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনা যেটির মাধ্যমে আরবি বিভাগকে যে সম্মানজনক স্থানে আপনারা নিয়েছেন। সে বিষয়টি সমুন্নত রাখতে পারি। আমরা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হই এ বিভাগটি সাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষণ করে, এ বিভাগটি দেশ জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। এ ধরনের ধারণা যাতে কোনো তরফ থেকে না আসে সেজন্য আমাদের হতে হবে অনেক উদার, অনেক মানবিক।'
শিক্ষা ও গবেষণার গুণগতমান বৃদ্ধিতে নিজ নিজ বিভাগে মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালনার লক্ষ্যে একটি করে গবেষণা ফান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য অ্যালামনাইদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, আপনারা অবশ্যই এ বিভাগের জন্য একটি রিসার্চ ফান্ড গঠন করে দেবেন। অন্তত একটা ফান্ড যদি আপনারা গঠন করে দিতে পারেন তাহলে এ বিভাগকে সম্মানিত করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা বাড়াবে। আর আপনাদের অনুজ যেসব অসচ্ছল শিক্ষার্থী আছে তাদের আর্থিক সুরক্ষা দেওয়া আপনাদের দায়িত্ব। যাতে তারা নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করতে পারে। যতটা সম্ভব তাদের বৃত্তির আওতায় নিয়ে আসা। যাতে আগামীতে একজন অসচ্ছল শিক্ষার্থীও বিভাগে না থাকে। আপনাদেরকে এ ভূমিকা পালন করতে হবে।
উদার, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ ধারণ করে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউছুফ। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও পুনর্মিলনী বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবদুল কাদির ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম।