১২ ঘণ্টা পার হলেও গতকাল রাতে মুষলধারে বর্ষণের পানি নামেনি রাজধানীর নীলক্ষেত-আজিমপুর এলাকায়। এতে আজিমপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে তীব্র ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র বৃষ্টিতে মৈত্রী হলের নিচতলা পানিতে ডুবে আছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে হলে বিদ্যুৎ নেই, ফলে ওয়াশরুমে পানি নেই। খাবার ও পানীয় পানির সংকট তৈরি হয়েছে।
দুপুর দেড়টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, নীলক্ষেত মোড় থেকে নিউমার্কেট এলাকায় এখনও হাঁটু ওপরে পানি। তীব্র বর্ষণে নিউমার্কেট, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, শাহনেওয়াজ হোস্টেল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলেও পানিবন্দী। তবে সবচেয়ে নিচু হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে কুয়েত-মৈত্রী হলের শিক্ষার্থীরা।
এ দিকে দুপুর সোয়া দুইটায় মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুন নাহার বলেন, ‘কী বীভৎস অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি বলে বুঝানো যাবে না। এখন পর্যন্ত পানি নেমে যাওয়ার লক্ষণ দেখছি না। আমাদের পাওয়ার স্টেশন গতকাল রাতেই ব্লাস্ট হয়ে বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সুপেয় পানির রিজার্ভ টাংকি এখনও পানির নিচে। হলে যে কোনো সময় পানি থাকবে না।’
তিনি বলেন, আমাদের ইনস্টিটিউট এবং বঙ্গমাতা হলের পানি মৈত্রী হলের ভেতর দিয়ে বিজিবি হয়ে বুড়িগঙ্গায় যায়। হল সবচেয়ে নিচু হওয়ায় ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। আমার অফিসের আলমিরার নিচের তাকের ফাইলগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে। হলের ৪০ জন কর্মচারী কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে নিচতলার কক্ষগুলো পরিষ্কার করেছি।
প্রাধ্যক্ষ আরও জানান, প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, ওয়াসা থেকে বিকল্প খাবার পানি পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া সমাজকল্যাণ ইনস্টিটউট থেকে বিকল্প লাইনের মাধ্যমে হলে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন আমাদের প্রকৌশলীরা। তবে আবার যদি বৃষ্টি হয় তাহলে ভয়াবহ অবস্থা হবে।
এ দিকে জানা গেছে, বঙ্গমাতা হলের কক্ষে পানি উঠেনি তবে হল পানিবন্দী হয়ে আছে। গতকাল রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। খাবার পানি, গোসলের পানি নাই। কোনো খাবার রান্না হয়নি।
জানতে চাইলে ওই জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) আবু মুছা চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সবগুলো সাব স্টেশন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে কুয়েতমৈত্রী হলের ১১ হাজার ভোল্টেজের ক্যাবল শর্ট সার্কিট হয়ে বিকল হয়ে গেছে। আমরা মৈত্রী হল ও বঙ্গমাতা হলে একটি ইমার্জেন্সি লাইন দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি সন্ধ্যার আগেই লাইন দিতে পারব।’
পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কা ও ছাত্রীদের ক্ষোভ
কুয়েতমৈত্রী হলের ছাত্রীরা ভোগান্তিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ‘এক রাতের বৃষ্টিতে গর্বিত ঢাবিয়ানদের হলের অবস্থা যা হয়ে যায়। খাবার নাই, খাবার পানি নাই, ওয়াশরুমে পানি নাই। কারেন্ট নাই একটু পরে ফোনেও চার্জ থাকবে না।’
অন্যদিকে বিভিন্ন বিভাগের অনেক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা আছে শনিবার অথবা রোববারে। এই সংকটে তাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত তৈরি হচ্ছে এবং পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তারা। এক ছাত্রী লিখেছেন, ‘একটা হলে এতক্ষণ ধরে ইলেকট্রিসিটি নাই, পানিবদ্ধ অবস্থা। কালকে আবার পরীক্ষা। রাতেও কারেন্ট না আসলে পড়বো কীভাবে।’