বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, ঢাবি : তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে হাতাহাতি ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা জানায়, খাবার দোকানে হাত ধোয়ার পরে হাত থেকে গড়িয়ে কয়েক ফোটা পানি তরকারিতে পড়ায় ছাত্রলীগ নেতার হাতে কিল-ঘুষি খেতে হয় তাদের।
শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটের একটি খাবার দোকানে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, মিউজিক বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী সাকিবুল সুজন। তিনি বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ এবং উন্নয়ন উপ সম্পাদক এবং বর্তমানে মুহসিন হল ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী নেতা। অন্যজন হলেন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের মেহেদী হাসান রায়হান। তিনি হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল ছাত্রলীগের ছাত্র বৃত্তি সম্পাদক।
অন্যদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন, টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী সামাদ আকন্দ এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী হিরন তালুকদার। তারা উভয়েই সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। ২০১৬-১৭ সেশনের হলেও বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত আছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
সামাদ আকন্দ জানিয়েছেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের কাছে ফোনে অভিযোগ করেন এবং হোয়াটসঅ্যাপে অভিযোগপত্রের কপি জমা দিয়েছেন।
ঘটনাসূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে সামাদ আকন্দ ও হিরন খাবার খেতে টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেটে যান। এসময় সামাদ হাত ধুয়ে খাবার নিতে গেলে তার হাত থেকে কয়েক ফোটা পানি তরকারিতে পড়ে। এসময় দূরে খাবার খেতে থাকা সুজন তাদেরকে বলেন, কেন তিনি টিস্যু দিয়ে হাত না মুছে হাতের পানি তরকারিতে ফেললেন। এসময় তার সাথে মেহেদী হাসান রায়হানও ছিলেন। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন তারা। এসময় সুজন ও মেহেদীর আঘাতে সামাদের শার্টের বোতাম ছিড়ে যায় এবং গলার কাছেও মুখে আঘাতপ্রাপ্ত হন তারা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামাদ আকন্দ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি এবং আমার বন্ধু হিরন দুপুরের খাবার খেতে টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেইটে যাই। এসময় আমরা বেসিনে হাত ধুয়ে খাবার নেয়ার সময় এক ফোটা পানি আমার অজান্তেই দোকানে রাখা খাবারের পাত্রে পড়ে। তখন দূরে খেতে থাকা সাকিবুল শান্ত ও মেহেদী হাসান রায়হান এসে আমাকে বাজে ভাষায় তুই-তোকারি করে বকতে শুরু করে। আমরা তাদের সিনিয়র হিসেবে পরিচয় দিলেও তারা আক্রমণাত্মক হয়ে আমাদের গায়ে হাত তোলে। এক পর্যায়ে আমরা যখন বের হয়ে আসতে চাই তখন তারা ৫-৬ জন সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমার মুখে স্পষ্টভাবে জখমের চিহ্ন বর্তমান এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম রয়েছে।
তিনি বলেন, আমি প্রক্টর স্যারের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানিয়েছি। স্যারের হোয়াটসঅ্যাপে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছি। স্যার ব্যাস্ত থাকায় সরাসরি দেখা করতে পারিনি। তাছাড়া আমি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ভাইকেও বিস্তারিত জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দেবো।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান রায়হান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ঘটনার সময় আমরা ভাত খাচ্ছিলাম। এসময় সামাদ ভাই হাত ধুয়ে টিস্যু দিয়ে না মুছে হাত ঝারা শুরু করলে হাতের পানি তরকারিতে পড়ে। এটা নিয়ে আমার বন্ধু সুজন তাকে ভালোভাবে বললে তিনি আমাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে শুরু করেন। তাকে (সামাদ) বলার আমরা কে আমরা কে, সে সিনিয়র কেনো তার ওপর কথা বলছি এজন্য আমাদের বকতে থাকেন। একসময় তিনিই প্রথম সুজনের ওপর আঘাত করেন। এতে আমাদের কপাল ও হাত ছিলে যায়।
তিনি আরো বলেন, তারাই প্রথম আমাদেরকে হিট করে স্যারের সঙ্গে দেখা করে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। আমরাও সৈকত ভাইয়ের সাথে কথা বলে প্রক্টর স্যারের সঙ্গে দেখা করবো এবং আমাদের অভিযোগ তুলে ধরবো।
এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। সুজনরা ছাত্রলীগের রাজনীতি করছে, বাকি দুজনও ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী ছিলেন। তারা প্রক্টর স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। আমরা চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে হাতাহাতি হোক। তাই, আমরা প্রক্টর স্যারের সাথে অভিযোগের বিষয় নিয়ে কথা বলবো, ঐ জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে সত্যতা যাচাই করে এর সুষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, আমরা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগপত্র পেয়েছি। আমরা আগামী রবিবার বিষয়টি নিয়ে মিটিংয়ে বসবো এবং দুপক্ষের কথা শুনে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।