ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবনিযুক্ত প্রশাসনিক ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, আবাসন, খাদ্য, নিরাপত্তা, পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত প্রশাসন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন বিষয়ে প্রশাসনের কর্মপরিকল্পনার কথা জানানো হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সাইমা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন।
উপাচার্য বলেন, হলগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের খুঁটি। হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা ইতোমধ্যে শেষ করেছি এগুলো গুছিয়ে নিয়ে বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে বসবো। এরপর আমরা যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো।
বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, বিভাগগুলো একাডেমিক কার্যক্রমের বিষয়ে স্বাধীন। পরীক্ষার তারিখ কিংবা রুটিন বিভাগ ঠিক করবে। শিক্ষার্থীরা সব কাজ নিয়ে উপাচার্য পর্যন্ত আসতে হবে না।
প্রশাসন ইতোমধ্যে হলের গণরুম বিলপ্তির আইনগতগত কাঠামো দিয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে হয়রানি কিংবা নির্যাতন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার বিষয়ে প্রশাসন শক্ত অবস্থানে থাকবে।
উপ-উপাচার্য সাইমা হক বিদিশার অধীনে একটা যৌন নিপিড়ন বিরোধী সেল গঠন করা হয়েছে। তারা যৌন নিপিড়ন সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্ত এবং পদক্ষেপ নিতে কাজ করে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অফিস এখন পর্যন্ত যথেষ্ট দুর্বল। আইন অফিস শক্তিশালী করা জরুরি বলে মনে করেন উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। আইন বিভাগের ডিন ও চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে আইন অফিসে এক্সটার্নাল কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।
প্রশাসনিক সব তথ্য প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানানোর ব্যাবস্থা করা হবে। এর পাশাপাশি ফেসবুক পেজ অ্যাকটিভ করে শিক্ষার্থীদের কাছে তথ্য পৌঁছানোর কথা ভাবছেন উপাচার্য।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের মান উন্নয়ন করতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য মাইক্রোবাস ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। ৫ থেকে থেকে ১০ টাকা হবে সর্বোচ্চ ভাড়া।
ওয়াইফাই সেবা চালুর বিষয়ে বিটিএসএলয়ের সঙ্গে কথা চলছে। মিনিমাম একটা অ্যামাউন্ট চার্জ দিয়ে শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট সেবা পাবেন।
ক্যাম্পাসে ভালো মানের একটা ক্যাফেটেরিয়া দেয়া হবে। যেখানে বিভিন্ন আইটেম থাকবে। দাম একটু বেশি হলেও শিক্ষার্থীরা ভালো মানের খাবার পাবেন। এ ছাড়া স্টার কাবাবের দোকানের ব্যবস্থা করার কথাও বলেন কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম।
ক্যাম্পাসে ফার্মেসি স্থাপনের জন্য ফার্মাসিস্ট লাগবে। এ বিষয়ে কী করা যায় প্রশাসন আরো ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পিএইচডির মান উন্নয়নের বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রাইম ব্যাংক মাসে ৩০ হাজার করে পিএইচডির শিক্ষার্থীদের দিতে রাজি হয়েছে। এতে পিএইচডির মান আরো উন্নত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আধুনিক পেমেন্ট কার্ডের ব্যাবস্থা করা যায় কি না প্রশাসন ভেবে দেখবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এই কার্ড ব্যাবহার করে যাতায়াত এবং লেনদেন করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সাইমা হক বিদিশা বলেন, মেন্টাল হেলথ কাউন্সেলিংয়ের ব্যাবস্থা করা হবে। শিক্ষার্থীরা স্বল্প খরচে এখান থেকে সেবা নিতে পারবেন।
কুয়েত মৈত্রী, বঙ্গমাতা হলের আবাসন সংকটের সমাধান তাৎক্ষণিক সম্ভব না। যতোটুকু পারা যায় করা হবে বলে জানান উপ-উপাচার্য।
বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, কোনো বিষয়ে জোর করা যাবে না। মব জাস্টিসের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিলে আদালতের কাছে হেরে যাবে বলে জানান তিনি।
নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা পর্দা করে তাদের জন্য বিশেষ ব্যাবস্থা করার কথা বলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম। ক্লাসে কিংবা পরীক্ষার হলে তাদের চেহারা দেখার প্রয়োজন হলে নারী শিক্ষার্থী দেখবে। এক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে হবে।
পরে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ বলেন, এগুলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মপরিকল্পনার অংশ। এগুলোতে সংযোজন, বিয়োজন ও পরিমার্জন আসতে পারে।