মুরাদ মজুমদার, দৈনিক শিক্ষাডটকম: একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতি নতুন নয়। এবারও চলমান ভর্তি প্রক্রিয়ায় নানা অসংগতি ও অনিয়মের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ভর্তির সফটওয়্যারে লিঙ্গ অপশন নিয়ে জটিলতায় এবার আবেদন শুরুই হয় নির্ধারিত সময়ের অন্তত দুইদিন পর। তারপর দেখা দেয় পেমেন্ট বিষয়ক জটিলতা। অনেকে পিন নম্বর পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ জানাতে থাকেন। এসব বিড়ম্বনার সঙ্গে যোগ হয়েছে একজনের তথ্য চুরি করে অন্যের আবেদন জমার মতো জালিয়াতি। বিষয়টি নিয়ে দেরিতে হলেও নড়েচড়ে বসেছে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, প্রতারণার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঠিক কী ধরনের প্রতারণা হচ্ছে তা সমন্বয় কমিটির বিজ্ঞপ্তিতেই স্পষ্ট। তাতে বলা হয়েছে, ‘২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রমে কিছু প্রতারক চক্র সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের থেকে সুকৌশলে শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষার তথ্য সংগ্রহ করে তাদের অনুমতি ব্যতীত অনলাইনে ভর্তির আবেদন করছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সবাইকে এ ধরনের প্রতারক চক্র থেকে সাবধান থাকার জন্য সতর্ক করা যাচ্ছে।’
এই প্রতারণার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিজ্ঞিপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ‘শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতারণায় জড়িত এমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তাদের প্যানেল বা সার্ভার বন্ধসহ পাঠদান স্থগিত করা হবে।’
বিজ্ঞপ্তিটিতে বোর্ডগুলোর নির্ধারিত ভর্তি ওয়েবসাইটের http://www.xiclassadmission.gov.bd- ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে দৈনিক আমাদের বার্তা অফিসে ফোন করে অনেক ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবক ভর্তির সফটওয়্যারে নানা জটিলতার কারণে এখনো তাদের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে সারোয়ার হোসেন নামে এক অভিভাবক জানান, নির্ধারিত ওয়বসাইটে তিনি আবেদন শুরু করতে পেরেছেন। কিন্তু, পিন পাননি। বিষয়ট জানতে নির্ধারিত ফোন নম্বরে কল দিয়ে বন্ধ পেয়েছেন। বরগুনার আমতলী থেকে মহিবুর রহমান নামে আর এক অভিভাবক ফোন করে এইকরকম কথা জানান।
এর আগে গত ২৬ মে সকাল ৯টা থেকে অনলাইনে কলেজে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সার্ভার জটিলতায় সে দিন এ কার্যক্রম শুরু হয়নি। পরদিন দুপুরের পর এই জটিলতার কিছুটা অবসান হয়। এরপর শুরু হয় পেমেন্ট সংক্রান্ত ‘সমস্যা’। গত বুধবার বিকাল পর্যন্ত ৪ লাখ ৯৪ হাজারের মতো আবেদন জমা পড়ে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। তারমধ্যে পেমেন্ট করতে পারেন ৩ লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থী।
খালিদ নামে এক ছাত্র জানান, তিনি একটি আবেদন করতে সাইন আপ করে আবেদন ফি পরিশোধ করেন। বিকাশ থেকে টাকাও কেটে নেয়া হয়। তারপর পেমেন্ট স্ট্যাটাস দেখায়, ফি পরিশোধ হয়নি।
তবে পেমেন্টে ঝামেলা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার বলেন, আমরা আগে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দিয়েছি। এরপর ধীরে ধীরে পেমেন্ট হচ্ছে। ভালোভাবেই আবেদন কার্যক্রম চলছে। খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।
যদিও সফটওয়্যারের বিড়ম্বনার কারণে আবেদনের সময় দুদিন বাড়ছে জানিয়ে তপন কুমার সরকার বলেন, এমনিতেই আবেদনের সময় ১১ জুন পর্যন্ত আছে। এই সময়ে যারা আবেদন করতে পারবেন না তাদের জন্য সময় দুদিন বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগ একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রমের প্রযুক্তিগত সহায়তা করছে। অর্থের বিনিময়ে তারা ভর্তি প্রক্রিয়াকরণের সফটওয়্যার তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন।
এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। সে হিসেবে এখনো আবেদনের বাইরে রয়েছেন সাড়ে ১১ লাখের মতো শিক্ষার্থী। অনলাইনে www.xiclassadmission.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন করতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ১৫০ টাকা আবেদন ফি দিয়ে সর্বনিম্ন পাঁচটি এবং সর্বোচ্চ দশটি কলেজে পছন্দক্রমের ভিত্তিতে আবেদন করতে পারছেন। আবেদন প্রক্রিয়া শেষে ১৫ জুলাই থেকে ভর্তি নেয়া হবে। তা চলবে ২৫ জুলাই পর্যন্ত। আগামী ৩০ জুলাই একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।