হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে সভাপতি করে গঠিত কমিশনের তদন্ত শুরু হবে ৫ আগস্ট। এদিন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা দিয়ে তদন্ত শুরু করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেলে সুপ্রিম কোর্টে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান কমিশনের প্রধান বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান।
তিনি বলেন, আমরা সাক্ষ্য গ্রহণের সময়সূচি নির্ধারণ করেছি। তদন্ত কার্যের অংশ হিসেবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী ৪ আগস্ট প্রথমে রংপুরে যাবো, সেখানে গিয়ে সশরীরে প্লেস অফ অকারেন্সগুলো পরিদর্শন করবো এবং প্রয়োজনীয় সাক্ষী, যারা ওখানে আছেন তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবো।
আগামী ৬ আগস্ট তিনজন ব্যক্তি-সাজ্জাদ হোসেন, মো. মানিক মিয়া, মোসলেম উদ্দিন মিনুর সাক্ষ্য গ্রহণ করবো। ৭ আগস্ট বুধবারে আমরা মো. মেরাজুল ইসলাম ও মো. আব্দুল আল নাহিদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবো। প্রতিদিনই সকাল ৯টা থেকে সার্কিট হাউজে যেসব ব্যক্তি এই ঘটনা সম্পর্কে জানেন তাদের সাক্ষ্য আমরা নেবো।
খোন্দকার দিলীরুজ্জামান আরো জানান, কমিশন তদন্ত কাজ শেষ করে আগামী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় মৃত্যু, সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তদন্তে হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করে সরকার। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বৃহস্পতিবারই জারি করা হয়। একই সঙ্গে এ বিষয়ে ১৮ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি রহিত করা হয়।
তদন্ত কমিশনের অপর দুই সদস্য হলেন-হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরী।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন, নিহতের বিষয়টি তদন্তে কমিশনের পরিধি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে এই কমিশনের সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে তিনজন করা হচ্ছে।
১৬ জুলাই হতে ২১ জুলাই পর্যন্ত সংঘটিত সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং এই সময়ে সংঘটিত সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বয়ত্তশাসিত দপ্তর/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান, সরকারি কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধকর্তৃপক্ষ ও করপোরেশন এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সংঘাত-সহিংসতার ঘটনায় অনেক প্রাণহানি ঘটে। সরকারি হিসাবেই এখন পর্যন্ত ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৭ জুলাই রাতে সাংবাদিকদের কাছে নিহত ব্যক্তিদের একটি তালিকা পাঠান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান। তবে সে তালিকায় ৬৬ জনের পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও পরবর্তী সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।