সুনামগঞ্জের নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলার ৮৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৯১ জন শিক্ষক গত তিন মাস ধরে হাওর ভাতা পাচ্ছেন না। এতে করে শিক্ষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২২ আগস্ট প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. নূরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ভাতাসংক্রান্ত একটি চিঠি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, আপনার আওতাধীন হাওর-দ্বীপ-চর হিসেবে ঘোষিত উপজেলাসমূহে ভাতাপ্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো। কিন্তু হাওর-দ্বীপ-চর হিসেবে ঘোষিত উপজেলাসমূহের স্থায়ী বাসিন্দারা নিজ উপজেলায় কর্মরত থাকাকালে এ ভাতা প্রাপ্ত হবেন না। এ অবস্থায় গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত এই উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে হাওরভাতা প্রদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এদিকে সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হাওর ভাতা বন্ধ করে দেয়ায় হাওরবেষ্টিত মধ্যনগর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র হতাশা বিরাজ করছে।
নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের প্রশাসনিক কার্যক্রম পার্শ্ববর্তী ধর্মপাশা উপজেলা থেকে পরিচালিত হয়। ধর্মপাশা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলাটি হাওরবেষ্টিত। মধ্যনগরে চারটি ইউনিয়নে ৮৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এখানে প্রধান শিক্ষকের সংখ্যা ৫৬ জন ও সহকারী শিক্ষকের সংখ্যা ৩৩৫ জন। ২০১৯ সাল থেকে এই উপজেলার ৮৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা বেতন ও অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধাদি পাওয়ার পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকরা ২ হাজার ৫০০ টাকা করে এবং সহকারী শিক্ষকরা ২ হাজার ২০০ টাকা করে হাওর ভাতা পাচ্ছিলেন। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে মধ্যনগর উপজেলায় এই হাওরভাতা প্রদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের বাসাউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসেন উপজেলার মধ্যনগর সদর ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামের বাসিন্দা। বাড়ি থেকে কর্মস্থলের দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার হলেও যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ। তাই প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। তিনি বলেন, বর্ষাকালে নৌকায় ও শুষ্ক মৌসুমে মোটরসাইকেলে করে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতে হয়। এ বাবদ প্রতিদিন ২০০ টাকা খরচ হয়। আকস্মিকভাবে হাওরভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাতায়াত বাবদ খরচ মেটাতে খুবই সমস্যা হচ্ছে।
উপজেলার চামরদানী ইউনিয়নের বিশারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জনি আক্তারের বাড়ি উপজেলার চামরদানী ইউনিয়নের চামরদানী গ্রামে। তিনি বলেন, আমাকে নিজ বাড়ি থেকে ১২কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। প্রতিদিন খরচ হয় ১২০ টাকা। কিছু স্থান যানবাহনে গেলেও হেঁটে যেতে হয় ছয় কিলোমিটার। হাওরভাতা বন্ধ হওয়ায় খুবই সমস্যা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ২০১৯ সাল থেকে হাওর এলাকার শিক্ষক হওয়ায় আমরা হাওরভাতা পেয়েছি। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই ভাতা বন্ধ রয়েছে। তবে এখনো এই সুবিধার আওতায় থাকা কুড়িগ্রাম জেলার দুটি উপজেলা, সিরাজগঞ্জের একটি ও নোয়াখালী জেলার একটি উপজেলায় এ ধরনের ভাতা চালু রয়েছে। এক দেশে দুই নিয়ম বিষয়টিকে আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।
মধ্যনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দ্বায়িত্বে থাকা ধর্মপাশা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানবেন্দ্র দাস বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লিখিত নির্দেশে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের হাওরভাতা প্রদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহন লাল দাস বলেন, নিজ উপজেলায় চাকরি করলে হাওরভাতা পাওয়া যাবে না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের লিখিত নির্দেশে এই হাওরভাতা প্রদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সরকারি নির্দেশনার বাইরে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ আমাদের নেই।