জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মেডিক্যাল সেন্টারে সেবা নিতে এসে তুচ্ছ ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মীদের মারধরে শিকার হয়েছে এক শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সৌরভ বিজয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গতকাল সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সৌরভ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারের ইমারজেন্সি বেডে প্রেসার মাপা শেষে বসে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলছিলাম। ওই সময় সামিরা মাহমুদ মিথী (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) ও রিসাত আরা (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) চিকিৎসা সেবা নিতে যায়। তখন দর্শন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রিসাত আরা নামের একজন শিক্ষার্থী আমাকে চেয়ার থেকে উঠতে বলেন। আমি তাকে পরে বসতে বলি। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে আমার ওপর চড়াও হন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই আপু আমাকে বাইরে ডেকে নিয়ে যান। এরপর কয়েকজন এসে আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে গালি দিতে থাকে। এরপর তারা আমাকে চড় থাপ্পড় দিতে থাকে। পরে আমাদের ডিপার্টমেন্টের ১৩ ব্যাচের ভাইয়েরা মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে আসে ডাক্তার দেখানোর জন্য।
সৌরভ আরো জানায়, মেডিক্যাল সেন্টারে যাওয়ার পরে এক ভাই আমার হাত ধরে জিজ্ঞেস করে আমার নাম সৌরভ কি-না? আমি নাম বলার পরে ভাই হাত ধরে তার সঙ্গে নিয়ে যায়, পরে উনি আমার কাঁধে হাত দেন। আমি ভাইরে বলি হাত নামানোর জন্য। এটা বলার পরই ওনি মুখের ওপর ঘুষি দিতে থাকেন আর পাশে যারা ছিলো ওরাও মারা শুরু করে। ওখান থেকে কোনো রকম বের হয়ে আমি গণিত বিভাগের সামনে শুয়ে পরি, আবার ওখানে মারা শুরু করে, আমি দৌড় দিয়ে আবার রসায়ন বিভাগের সামনে শুয়ে পরলে আবার মারতে থাকে।
মারধরের পরে আহত সৌরভকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের অনুসারী বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় প্রক্টর বরাবর ভিন্ন অভিযোগ দিয়েছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী সামিরা মাহমুদ মিথী ও রিশাত আরা। অভিযোগ পত্রে তারা জানান, মেডিক্যাল গেলে প্রথমে সৌরভ নামে ওই ছেলের দ্বারা ‘বেয়াদবিমূলক’ আচরণ পাই। আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও যৌন হয়রানিমূলক ইঙ্গিত দেয়। আমাকে দেখে নেবে, খেয়ে ফেলবে বলেও জানায়।
মিথী সাংবাদিকদের জানায়, ছেলেটা আমাকে ধাক্কাও দিয়েছে। সে আমাদের ছোট ভাই রানাকে মারধর করায় তারাও তাকে মেরেছে।
তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন সৌরভ। তিনি বলেন, আমাকে ওরা এতোজন মারধর করে উল্টো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থী বলে কি আমি বিচার পাবো না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর কাজী নূর হোসাইন মুকুল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি যখন ওখানে উপস্থিত হই তখন ওই শিক্ষার্থীকে বিভাগে সামনে দেখতে পাই। তখন আমি তার অবস্থা দেখে মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাই বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তায়। কিন্তু বুকে ব্যাথা ও মাথা ব্যাথা থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যালে পাঠিয়ে দেই।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার সময় উপস্থিত যারা ছিলো তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি আহত শিক্ষার্থী অসুস্থ অনুভব করায় প্রেসার মাপতে যায় মেডিক্যালে। সে সময় অন্য দুই শিক্ষার্থীও সেখানে যায়। তারপর ছেলেটিকে ওখান থেকে উঠতে বলায় সে অসুস্থার কথা বলে উঠতে না চাওয়ার তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। পরে মেডিক্যাল থেকে বের হওয়ার সময় তাকে নাকি কয়েকজনে মারধর করে সিনিয়রদের সম্মান না দেওয়ায়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক মোস্তফা কামাল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা তাকে (সৌরভ) আহত অবস্থায় পেয়েছিলাম। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।