দখিনে নতুন দুয়ার অসহনীয় নয় লোভনীয় হোক - দৈনিকশিক্ষা

দখিনে নতুন দুয়ার অসহনীয় নয় লোভনীয় হোক

বোরহানুল হক সম্রাট |

সম্ভবত ছিয়াশিতে এরশাদ জমানায় যেদিন প্রথম খুলনা থেকে রাজবাড়ীতে আন্ত:নগর তিতুমীর এক্সপ্রেস পৌঁছুলো তখন আনন্দে উদ্বেল শহর রাজবাড়ী। নির্ধারিত সময়েরও বেশি পরে ট্রেনটি গোয়ালন্দঘাট অভিমুখে রওয়ানা হবার আগে স্টেশনের কুলি-লাইন্সম্যান থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা উপর-নিচের সবুজ রঙের মধ্যিখানে জানালা বরাবর হলুদ রঙের ট্রেন শুধু চোখেই দেখছিলেন না, হাত দিয়ে সেই রঙ স্পর্শ করছিলেন, মনে পড়ে। 

সেই ট্রেন, তিতুমীর এক্সপ্রেস পৌঁছুনোর পর স্টেশনের পক্ষ থেকে প্রথম যে পরিচালক (গার্ড, গ্রেড-১এ) সাহেবকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়েছিল তিনি তোফাজ্জল হক-- আমার বাবা। সেই ফুলের মালা আর খাবার গাড়ির পক্ষ থেকে দেওয়া কাটলেট নিয়ে মনের আনন্দে বাসা টি/২৭৭ এ ফিরেছিলাম। সেই তিতুমীর এক্সপ্রেসকে রাজশাহী-চিলাহাটি নিয়ে যাওয়া হলে খা খা করে উঠেছিল রাজবাড়ী। বন্ধ হয় শিলিগুড়ি আর রাতের লোকাল ট্রেনটিও। ট্রেনের সময়সূচিতে যে রাজবাড়ী ছিলো রেলের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন সেটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। অথচ কলকাতা থেকে ব্রিট্রিশ আমলে ঢাকা মেইল, ওয়ান আপ ডু ডাউনসহ দ্রুতগামী ট্রেন গোয়ালন্দ এসে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ, ঢাকা-চাঁদপুর এমনকি ভারতের ডিব্রুগড়ের স্টিমারে উঠতেন রেলযাত্রীর দল। 

কালের বিবর্তনে সেই পথ দিয়ে আবার খুলনা, বেনাপোল, রাজশাহী এমনকি সেই কলকাতায় যাবে লাল সবুজে চকচকে নতুন ট্রেন। এতো আনন্দ এক জীবনে আবার ফিরে পাবে রাজবাড়ীর মানুষ তা কখনো ভাবেনি বোধ হয়। ঢাকার এতোকাছে হলেও রাজবাড়ী, ফরিদপুরের মানুষের ব্রডগেজ রেললাইনের ট্রেন এক সময়ের শুধু মিটারগেজ চলা ঢাকার কমলাপুরে যাবে-এ জীবনে কতজন কল্পনা করেছেন-তা ভেবে দেখার বিষয়। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেই পদ্মা পাড়ি দেয়া রেলপথে ফরিদপুরের অনতিদূরে এসে নতুন দুয়ার নতুন রেলের যাত্রাপথ উদ্বোধন করেছেন। এখন অপেক্ষা কমলাপুর থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে ভাঙ্গা-ফরিদপুর-পাচুরিয়া-রাজবাড়ী-পোড়াদহ হয়ে কবে ছুটবে ট্রেন দখিন আর উত্তরের পথে। 

কিন্ত এরই মধ্যে হাতে আসা ৩টি কাগজ, যেখানে আপাতত চলবে এমন ৩টি আন্তনগর ট্রেনের ভাড়ার তালিকা দেখে যার পর নাই হতবাক হতে হয়েছে। খুলনা থেকে খুলনা বিভাগে থেকেই ঢাকায় পৌছে যাওয়ার মতো কম দূরত্ব হলেও ভাড়ার প্রস্তাবনা দেখে অবাক হতে হয়। আগের মতো পাকশীতে পদ্মার উপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পার হয়ে সেই পাবনা, যমুনার উপর বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে সেই টাঙ্গাইল, গাজীপুর হয়ে ঢাকা আসার প্রায় ২১২ কিলোমিটারের মতো পথ কমে গেলেও খুলনা বা যশোর থেকে রেলের ভাড়া বাড়ছে বৈ কমছে না। শুধু তাই নয়, দেশের প্রধান রেল করিডোর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে যে ভাড়া, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা গেলেও একই সমান ভাড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এরপর তো ফরিদপুর, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, যশোর বা খুলনার দিকে যতো যাবে ততই বাড়তে থাকবে। রেলের যে কমিটি ২শ কিলোমিটার দূরত্ব কমার পরও ভাড়া নিয়ে এই জটিলতা তৈরি করেছেন তাদের আরেকটি বিষয় বিবেচনার অনুরোধ রইলো। সেটি হচ্ছে যদি খুলনা বা যশোরের গাড়িগুলো পদ্মা সেতু দিয়ে আসে তাহলে সেই ট্রেনগুলোকে শতবর্ষী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ আর বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতুর ঝুকিঁপূর্ণ রেল অংশটি অর্থাৎ পদ্মা বা যমুনা নদী পার হবার আরো দুটি বড় সেতু পার হতে হচ্ছে না। এবং এ কারণে আয়ুক্ষয় না হয়ে আয়ু বাড়বে ওই সেতু দুটির।

নিজেদের টাকায় বানানো পদ্মা সেতুতে ওঠার কারণে হু হু করে বাড়বে টিকিটের দাম। ফলে ঢাকা থেকে ভাঙ্গার এসি সিটের ভাড়া ৬৬৭ আর এসি বার্থে এক টিকিটের মুল্য ১২শ ২ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ ঢাকা থেকে ভাঙ্গার দুরত্ব ৭৭ কিলোমিটার হলেও সেতু আর উড়াল রেলপথের চার্জ হিসেবে তা ৩৫৯ থেকে ৩৬৪ কিলোমিটার ধরা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর এক কিলোমিটারের মূল্য গুণতে হবে ২৫ কিলোমিটারের টাকা দিয়ে। আবার গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জের উড়াল রেলপথের এক কিলোমিটারের চার্জ হবে ৫ কিলোমিটারের মূল্যমানের সমানহারে।

এই যদি হয় এতো কাছে সেই ভাঙ্গা ক্রসিংয়ে যাবার রেলের মূল্য, তাহলে রাজবাড়ী অথবা কুষ্টিয়াবাসীর জন্য কী অপেক্ষা করছে। আগে খুলনা থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেসের ঢাকায় যে ভাড়া ছিল ৫০৫ টাকা ২১২ কিলোমিটার যাত্রাপথ কমে গেলেও সেই ভাড়ার প্রস্তাব হয়েছে ৬১০ টাকা।

পত্রপত্রিকার রিপোর্ট আমলে নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠতে পারে, একই পথে বাসের কম ভাড়া ফেলে শুধু শখ মেটানোর জন্য কী শখের ট্রেনে উঠবেন কেউ। নিশ্চয় নয়। হাজার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প, এই স্বপ্ন এমনভাবে দেখা ঠিক নয়। এই প্রস্তাবিত হার তৈরি করেছে রেলের বিশেষজ্ঞ কমিটি। এখনো তা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য যায়নি। আর এখানেই ভরসা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই ভাড়ার তালিকা যদি দেখেন, অথবা যদি খবর পান তাহলে নিশ্চয়ই এটা হতে দেবেন না। সারা পৃথিবীতে গণমানুষের গণপরিবহন মানেই রেল। সেই রেলকে অসহনীয় ভাড়ার যাতনায় বিদ্ধ হবার সুযোগ তিনি নিশ্চয়ই দেবেন না। প্রকৃতির পরিক্রমায় আবার সচল হওয়া ব্রিটিল আমলের সেই ঢাকা মেইলের রাজবাড়ীর রেলপথ সত্যিই আনন্দে জেগে উঠবে ফের। বিশ্বাস করি, ওই পথে রাজধানী ঢাকা থেকে অতীতের মতো বহুরকম যন্ত্রণা ঝেড়ে ফেলে বাড়ীর উঠোনে যাবার সে স্বপ্ন তা বাস মালিকদের কুচক্রে দূর থেকে তাকিয়ে দেখা আর দীর্ঘশ্বাস ফেলার মতো অসহনীয় হয়ে উঠবে না।    

 লেখক : প্ল্যানিং এডিটর, আমাদের বার্তা 

       

 

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067861080169678