প্রবাদ আছে ‘পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয়’। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মাঝে খারাপ চরিত্রের মানুষের সমাহার। বিভিন্ন কারণে তাদের মাঝে খারাপ চরিত্রের প্রভাব পড়েছে। এর অন্যতম কারণ পারিবারিক শিক্ষা ও বিদ্যালয়ে নৈতিক শিক্ষার ঘাটতি।
এই ঘাটতির ফলে বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলুষিত হয়ে পড়েছে। পত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা কুরুচিপূর্ণ দুর্নীতিপরায়ণ উশৃঙ্খল দপ্তরি, সহশিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির লোকজন ও কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড দেখে থাকি। কতিপয় খারাপ লোকজনের জন্য পুরো দপ্তরি, শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও কর্মকর্তাদেরকে হেয় করা উচিত নয়। অপরাধ যে কেউ করুক সে অপরাধী।
মহাপরিচালকের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর অনেকটা কানে তুলা দিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তড়িঘড়ি করে ভাইভা পরীক্ষা নেয়ার তৎপরতা চালিয়েছেন। এতে মনে হচ্ছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে ‘সরিষার মধ্যে বড়ো ভূত’ লুকায়িত আছে। মহামান্য হাইকোর্টে নির্দেশনা মোতাবেক প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের প্রধান ভূত বের হবে কি না জানি না? তবে প্রত্যাশা থাকবে আসল ভূত বের করে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হোক। বিগত মহাপরিচালকের সময়ে বদলিসহ প্রায় কাজেই ঘুষ দুর্নীতিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নিমজ্জিত ছিলো বলে গুঞ্জন রয়েছে। প্রাথমিক দপ্তরি সমাজ দীর্ঘ ৩ বছর যাবত ঈদ বোনাস প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছে। কতিপয় দপ্তরি গত ঈদ-উল ফিতরের আগেই সাবেক মহাপরিচালককে বিষয়টি অবহিত করলে, তিনি ঈদ-উল আজহার বোনাস প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেন। পরবর্তীতে দপ্তরিরা সমাজের নেতৃবৃন্দ মহাপরিচালকের সঙ্গে পরবর্তীতে সাক্ষাৎ করতে গেলে সুযোগ পাননি। তিনি পরবর্তী দিনগুলো অবসরের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত প্রায় সারা দেশের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পরিদর্শনে ব্যস্ত ছিলেন। জানা গেছে তিনি একদিনে রংপুর বিভাগে ২১টি প্রশিক্ষণে যেয়ে টিএ, ডিএ ছাড়া অর্ধলক্ষ টাকা সম্মানি গ্রহণ করেছেন। অবসরের আগে প্রাথমিক শিক্ষার অভিভাবক হিসেবে শুধু প্রশিক্ষণের কাজ মুখ্য হিসেবে দৃষ্টান্ত হিসেবে বেছে নেয়া কতোটা নৈতিক?
একই ছাদের নিচে অবস্থানরত প্রাথমিকের শিক্ষক ও দপ্তরি। শিক্ষকরা ঈদে উৎসব স্বাচ্ছন্দ্যে করবে। আর দপ্তরিদের দীর্ঘ ৩ বছর যাবৎ ঈদ উৎসব ভাতা না পেয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার রহমত থেকে কেনো, কারা বঞ্চিত করলো জানি না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্ন বারবার কেনো ফাঁস হয়? ঘুষ-দুর্নীতি জিরো টলারেন্স কেনো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বাস্তবায়নে হয় না? একদিনে একাধিক প্রশিক্ষণে যেয়ে সম্মানী নেয়া কতোটা বৈধ? দুর্নীতি দমন বিভাগের আশু হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
দপ্তরিদের উৎসব ভাতা নিশ্চিত হোক। প্রাথমিকের সব দুর্নীতি জিরো টলারেন্সে নামিয়ে আনা হোক। এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
লেখক: সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ