দপ্তরির নিপীড়নের শিকার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী, ধামাচাপা দিতে মরিয়া প্রধান শিক্ষক - দৈনিকশিক্ষা

দপ্তরির নিপীড়নের শিকার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী, ধামাচাপা দিতে মরিয়া প্রধান শিক্ষক

বরগুনা প্রতিনিধি |

বরগুনা পাথরঘাটার ১ নম্বর মাদারতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী ইব্রাহিমের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। ঘটনার পর থেকেই লজ্জায় স্কুলে যেতে পারছে না ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। অপরদিকে অভিযুক্ত দপ্তরির পক্ষে সাফাই গাইছেন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক। তবে ঘটনার ন্যায়বিচার দাবি করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী জানায়, প্রতিদিনের মতোই গত ১৫ অক্টোবর মায়ের হাতের তৈরি টিফিন নিয়ে ১ নম্বর মাদারতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া ওই শিক্ষার্থী। টিফিন পিরিয়ডে অন্যান্য সহপাঠীদের সাথে স্কুলের পাশেই দপ্তরি ইব্রাহীমের দোকানে চিপস কিনতে গেলে সেখানেই ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেয় ইব্রাহিম। পরে আবারও সিঁড়ির নিচে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীর স্পর্শ কাতর স্থানে হাতাহাতি করে শ্লীলতাহানি করে সে। এ সময় ওই শিক্ষার্থীর হাতে ৫০ টাকার একটি নোট দিয়ে কারো কাছে ঘটনার কথা বলতে না করেন অভিযুক্ত ওই দপ্তরি।

এ সময় ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর কান্নাকাটি ও চিৎকার শুনে কয়েকজন সহপাঠী এগিয়ে এসে ঘটনার বিষয় শুনে বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষককে জানালে, ওই শিক্ষক ঘটনার কথা বাড়িতে জানাতে নিষেধ করেন।

ছবি: সংগৃহীত

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর মা বলেন, আমার মেয়ে স্কুল থেকে এসেই ঘটনার কথা খুলে বললে আমি পরদিনই (সোমবার) স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে জানাই এবং আমার মেয়ের সহপাঠীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হই। স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম ও প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী ঘটনার বিষয়ে ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সঠিক বিচারের আশ্বাস দিয়ে দিন পার করতে থাকে এবং আমার মেয়েকে তারা দুদিন লুকিয়েও রাখতে বলেন। আমি ইব্রাহীমের সঠিক বিচার চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের পাশের বাসিন্দা এক অভিভাবক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমি শুনেছি। দপ্তরি ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে পরের দিন স্কুলে এসে ঘটনার বিষয় মৌখিক অভিযোগ করেছেন যৌন নিপীড়নের শিকার ওই শিক্ষার্থীর মা।

অভিযুক্ত ইব্রাহীমকে স্কুলে গিয়ে না পেয়ে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ইব্রাহীমের স্কুলে অনুপস্থিতির বিষয়ে কথা হলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গেছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী। সেখানে গিয়েও ইব্রাহীম কিংবা ইউপি চেয়ারম্যান কাউকে পাওয়া যায়নি।

ঘটনার বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম ও তার মধ্যস্থতায় সমাধান হয়েছে জানিয়ে ঘটনার বিষয় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এ ছাড়াও ঘটনার বিষয়ে লিখিতভাবে কোনো দাপ্তরিক চিঠিও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর দেননি বলে নিজের ভুল স্বীকার করেন তিনি। স্কুলের পাশাপাশি দোকান চালানোর বিষয়ে কথা বললে দোকানটি ইব্রাহীমের বাবার বলে জানান। তবে দোকানটির সাইনবোর্ডে ইব্রাহীমকেই স্বত্বাধিকারী হিসেবে দেখা গেছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম মোবাইল ফোনে যৌন নিপীড়নের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে দোকানে বাকি খাওয়া নিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে গালাগাল করা হয়েছে বলে জানান। তবে যৌন নিপীড়নের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন তিনি।

পাথরঘাটা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা টি এম শাহ আলম মোবাইল ফোনে জানান, ৩ থেকে ৪ দিন পূর্বে টাকা লেনদেন নিয়ে ঝামেলা সম্পর্কিত একটি ঘটনার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোবাইল ফোনে আমাকে জানিয়েছেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সালিশ ব্যবস্থার কথাও বলেছেন তিনি। আমি তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের উপসহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে ম্যানেজিং কমিটি ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। অভিযুক্ত ও ঘটনার আড়াল করতে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা।

একইসঙ্গে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হওয়ার কথা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা টি এম শাহ আলম।

বিলুপ্ত হচ্ছে এনটিআরসিএ, নতুন আইনের খসড়া দেখুন - dainik shiksha বিলুপ্ত হচ্ছে এনটিআরসিএ, নতুন আইনের খসড়া দেখুন থানায় হামলা: দুই দিনের রিমান্ডে ১২ শিক্ষার্থী - dainik shiksha থানায় হামলা: দুই দিনের রিমান্ডে ১২ শিক্ষার্থী জাতীয় শোক দিবসে ভিডিয়োচিত্র তৈরি প্রতিযোগিতা - dainik shiksha জাতীয় শোক দিবসে ভিডিয়োচিত্র তৈরি প্রতিযোগিতা কোটা আন্দোলনে সহিংসতা: ১৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি প্রায় ৩২ কোটি টাকা - dainik shiksha কোটা আন্দোলনে সহিংসতা: ১৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি প্রায় ৩২ কোটি টাকা কোটা আন্দোলনে সংঘর্ষে নিহতদের স্মরণে দেশব্যাপী শোক আজ - dainik shiksha কোটা আন্দোলনে সংঘর্ষে নিহতদের স্মরণে দেশব্যাপী শোক আজ ফের বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন ইএফটিতে দেয়ার উদ্যোগ - dainik shiksha ফের বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন ইএফটিতে দেয়ার উদ্যোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063080787658691