দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারিভাবে স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থা করাসহ বৈষম্যহীন নগর গড়তে অর্ন্তবর্তী সরকারের কাছে একগুচ্ছ প্রত্যাশা পূরণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক)।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় এ দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা। বৈষম্যহীন নগর চাই, অর্ন্তবর্তী সরকারের কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা- শীর্ষক এ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সংগঠনটি লিখিত বক্তব্যে জানায়, বিশ্বব্যাপী নগরায়ন ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে এবং নগরীগুলো অর্থনীতির রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রেবিন্দু এবং জাতির সামাজিক কাঠামো তৈরির প্রাণকেন্দ্রে হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে এই সুবিধাগুলোর পাশাপাশি, নগর এলাকায় বৈষম্য, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং সামাজিক বঞ্চনা দিন-দিন প্রকট আকার ধারণ করছে যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশের প্রধান লক্ষই হলো, সমাজ থেকে সব প্রকার বৈষম্য ও বঞ্চনা দূর করা। আমাদের সবার প্রত্যাশা বাংলাদেশের বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার শহর ও নগরের ধনী ও বস্তিবাসীর মধ্যে যে অন্যান্য বৈষম্য তা দূর করবে এবং সবার জন্য একটি বৈষম্যহীন এবং অর্ন্তভুক্তিমূলক নগর এবং শহর তৈরি করবে।
সংগঠনের নেতারা জানায়, একটি নগরীকে সবার জন্য সমান অর্থনৈতিক সুযোগ দিতে হবে। অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি দারিদ্র্য হ্রাস, একটি শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি গঠন এবং নগরবাসীর সামগ্রিক জীবনমান উন্নত করার ক্ষেত্রে সহায়ক।
সামাজিক অন্তর্ভুক্তি হল, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং জনসাধারণের সুবিধাগুলোতে সমান প্রবেশাধিকার। প্রত্যেক ব্যক্তিকে যেনো সমাজের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং উন্নতির সুযোগ দেয়া হয়, সেটি একটি সংহতিপূর্ণ সম্প্রদায় গঠনের মূল চাবিকাঠি।
নগরবাসীর কিছু প্রধান দাবি ও আশাগুলো হলো: ঢাকার প্রধান সমস্যা হল আবাসন সংকট। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে তারা সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন প্রকল্পকে বাস্তবায়ন করবে। নগরের সবার জন্য সমানভাবে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পানি এবং স্যানিটেশনের মতো মৌলিক সেবায় প্রবেশাধিকার ব্যবস্থা করতে হবে। নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারিভাবে স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্তবর্তী সরকার এমন একটি পরিবহন নেটওয়ার্ক করবে, যেখানে নারী, প্রবীণ, শিশু এবং প্রতিবন্ধীরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে। অন্তবর্তী সরকারকে নগর এলাকায় অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরি করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকাসহ অন্যান্য নগরীগুলোর পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবুজ অবকাঠামো, নগর কৃষি প্রসার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি, নদী, খাল, জলাধার খনন ও বন্যারোধী অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। সিভিল সোসাইটি সংগঠন (CSOs) এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক সংগঠনগুলো (CBOs) নগর দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের পক্ষে কাজ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।