অষ্টম গ্রেডে বেতন পাওয়ার আশা পূরণ হচ্ছে মাদরাসার দাখিল স্তরের সহকারী শিক্ষকদের। চাকরির ১৬ বছর পূর্তিতে তারা দ্বিতীয় উচ্চতর গ্রেড হিসেবে অষ্টম গ্রেড পাবেন। মাদরাসার বর্তমান এমপিও নীতিমালায় বিএড স্কেল নিয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় ও দুটির বেশি উচ্চতর গ্রেড দেয়ার সুযোগ না থাকায় দাখিল স্তরের শিক্ষকরা দ্বিতীয় উচ্চতর গ্রেড বা অষ্টম গ্রেড পেতেন না। সম্প্রতি এমপিও নীতিমালা সংশোধনীতে এ জটিলতা সমাধানের প্রস্তাব করেছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর।
কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ মিলেছে। আগামী আগস্ট মাসে সংশোধিত নীতিমালা জারির সম্ভাবনা আছে।
দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন মাদরাসার দাখিল পর্যায়ের সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরিতে প্রবেশের আট বছরের মধ্যে বিএড করলে তারা বিএড স্কেল হিসেবে ১০ম গ্রেডে বেতন পান। পরে চাকরির দশ বছর পূর্তিতে প্রথম উচ্চতর গ্রেড পেয়ে ৯ম গ্রেডে বেতন পান। তবে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে জারি হওয়া মাদরাসার সর্বশেষ এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে চাকরির ১৬ বছর পূর্তিতে দ্বিতীয় উচ্চতর গ্রেড দেয়ার সুযোগ দেয়া হলেও মাদরাসা শিক্ষকরা তা পাচ্ছিলেন না। এর কারণ ওই নীতিমালায় বলা ছিলো, শিক্ষকরা চাকরির জীবনে দুটির বেশি উচ্চতর গ্রেড পাবেন না। যদিও মাদরাসার ওই নীতিমালা জারি হওয়ার চার মাস পর ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে জারি হওয়া স্কুল-কলেজের এমপিও নীতিমালায় বিএড স্কেলকে উচ্চতর গ্রেড হিসেবে গণনাযোগ্য নয় বলে জানানো হয়। ফলে স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা দ্বিতীয় উচ্চতর গ্রেড সুবিধা (অষ্টম গ্রেড) পেলেও মাদরাসার দাখিল স্তরের সহকারী শিক্ষকরা সে সুবিধা পাচ্ছিলেন না। স্কুলের নীতিমালায় ১০ম গ্রেড পাওয়ার দশ বছর পূর্তিতে সিনিয়র শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পেলেও মাদরাসার সহকারী শিক্ষকদের সে সুযোগ দেয়া হয়নি।
জানা গেছে, মাদরাসার এমপিও নীতিমালায় সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর নীতিমালা সংশোধনে কর্মশালা করেছে। ওই কর্মশালায় দাখিলের সহকারী শিক্ষকদের অষ্টম গ্রেড বা দ্বিতীয় উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাকির হোসাইন দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, দাখিলের সহকারী শিক্ষকদের অষ্টম গ্রেড বা দ্বিতীয় উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা সমাধানে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। নীতিমালা সংশোধনের প্রস্তাবে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে শিক্ষকদের যোগদানের পাঁচ বছরের মধ্যে বিএড ডিগ্রি অর্জন করার বিধান অন্তর্ভুক্ত হবে।
অধিদপ্তরের অর্থ শাখার সহকারী পরিচালক মো. লুৎফর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বিএড স্কেল করে দশম গ্রেড পাওয়া শিক্ষকরা দশ বছর পূর্তিতে প্রথম উচ্চতর গ্রেড পেলেও ১৬ বছর পূর্তিতে দ্বিতীয় উচ্চতর গ্রেড পাচ্ছিলেন না। বিষয়টি সমাধানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও সায় পাওয়া গেছে। আগামী আগস্ট মাসে সংশোধিত নীতিমালা জারির কথা আছে।
এদিকে অষ্টম গ্রেডে বেতনের জটিলতা সমাধানের প্রক্রিয়া শুরু হলেও মাদরাসার দাখিল পর্যায়ের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড পাওয়ার দশ বছর পূর্তিতে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেয়ার সুযোগ দাবি করেছেন মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন সভাপতি জহির উদ্দিন হাওলাদার। তিনি দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, শিক্ষকদের অষ্টম গ্রেড বেতন দেয়া হলেও স্কুলের সহকারী শিক্ষকদের মতো দাখিলের সহকারী শিক্ষকদেরও যেনো সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেয়ার সুযোগ দেয়া জরুরি। সংশোধিত এমপিও নীতিমালায় দাখিলের সহকারী শিক্ষকদের সিনিয়র শিক্ষক পদমর্যাদা দেয়া হলে শিক্ষকরা ক্লাসে আরো বেশি মনযোগী হবেন।
দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।