গত মাসের ৫ তারিখে ছাত্র-জনতার বিদ্রোহের প্রেক্ষিতে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই তিনি ভারতের গাজিয়াবাদের কাছে একটি বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে অবস্থান নেন। তবে ভারতের কোন স্থানে তার বর্তমান অবস্থা সে বিষয়ে ভারত কর্তৃপক্ষ থেকে কোন বার্তা না থাকায় সঠিক অবস্থান জানা নিয়ে ছিল ধোয়াশা। তবে এবার সেই ধোয়াশার অবসান হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, রাজধানী দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন হাসিনা। এমনকি তাকে তার দলবল নিয়ে দিল্লির অন্যতম অভিজাত পার্ক লোদি গার্ডেনেও ঘুরতে দেখা গেছে।
গণমাধ্যমটি আরও জানায়, শেখ হাসিনা তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে ভারতীয় সরকারের একটি সেফ হাউসে রয়েছেন। সায়েমা ওয়াজেদ ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিল্লিভিত্তিক পদে আঞ্চলিক চাকরি নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ যখন বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় ছিল তখন হাসিনার শীর্ষ বিদেশী সমর্থক ছিল মোদি সরকার। হাসিনার পালিয়ে আসার কথা স্বীকার করলেও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান বা অন্যান্য বিষয়ে নীরবতা বজায় রেখেছে তারা। দিল্লির দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো বেশিরভাগই এমন দাবিও করা বন্ধ করে দিয়েছে যে— ক্ষমতাচ্যুত-পরবর্তী সময়ে তারা শেখ হাসিনার প্রথম সাক্ষাৎকার পাবে।
শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে গণমাধ্যমটির সঙ্গে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, “ভারতের সাথে প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী, আমরা তাকে প্রত্যর্পণের দাবি করতে পারি। আপাতত, আমরা আশা করি ভারত সরকার তাকে দেশকে অস্থিতিশীল করার মতো বক্তব্য থেকে বিরত রাখবেন।”
পলাতক আঞ্চলিক নেতাদের আশ্রয় দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে ভারতের। দালাই লামা ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে চীনের তিব্বত দখলের পর পালিয়ে ভারতে বসতি স্থাপন করেন। যদিও তিনি রাজনৈতিক বিষয়গুলো (ভারত ভিত্তিক) একটি বেসামরিক নির্বাসিত প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছেন। এছাড়া তিব্বতের আধ্যাত্মিক এই নেতা সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছেন। এই পদক্ষেপে বেইজিং বিক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, মোদি সরকারের সম্মতি ছাড়া এসব কিছুই ঘটত না।
এছাড়া আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহর পরিবারও ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল। তার স্ত্রী ফাতানা নাজিব এবং সন্তানরা এখনও তাদের বেশিরভাগ সময় ভারতে কাটায় বলে জানা গেছে।
এর আগে শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের অধিকাংশকে ঢাকায় অভ্যুত্থানে হত্যা করার পর শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের পর বেশ কয়েক বছর ভারতে আশ্রয়ে ছিলেন।