বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে নষ্ট করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও ডা. দীপু মনি দেশের শিক্ষাখাত ধবংসের জন্য উঠেপড়ে লেগে যান। সঙ্গীছিলেন তার আপন ভাই ওয়াদুদ টিপু ও চাঁদপুর পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের ব্যাচেলর অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটপেস্ট অধ্যাপক ভিসি মশিউর রহমানসহ কয়েকজন। শিক্ষার প্রতিটি সেক্টরে গড়ে তুলেছিলেন ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাটের সাম্রাজ্য। ২০০৯ থেকে ২০১৩ পযন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৯ সালে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান। সর্বশেষ তিনি সমাজ অকল্যাণের দায়িত্ব পেয়েছিলেন!
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পলাতক ছিলেন তিনি। এরপর গ্রেপ্তারের পর দু’দফা রিমান্ডে নেয়া হয় তাকে। আইনত নোট-গাইড বিক্রি বন্ধ
ছিল। কিন্তু আইনের ফাঁক গলিয়ে সহযোগী বই হিসেবে প্রচলিত ছিল গাইড বই। নোট-গাইডের বিপক্ষে ব্যাপক কথা বললেও তিনি নিজেই বখরা নিতেন এসব সংগঠন থেকে। এই সংগঠনের এক নেতা বলেন, আমাদের বাৎসরিক চুক্তি ছিল ২০০ কোটি টাকা। বছরে চারবার কিস্তিতে দিতে হতো। এ ছাড়াও বিভিন্ন উপলক্ষের দিনেও পাঠাতে হতো টাকা।২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পরপরই রতন মজুমদারকে এনসিটিবির চাঁদাবাজি ও লুটপাটের সুযোগ দিতে তথ্যজ্ঞ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। রতনের ঢাকায় পাঁচ তারকা হোটেলে থাকা খাওয়ার জন্য প্রায় কোটি টাকা খরচ করেছে এনসিটিবি। রতনের গাড়ীর দরজা খুলে ধরা ও চেয়ারে বসিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় উ্ত্তীর্ণ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা নিযুক্ত ছিলেন।
পাঠ্যবই থেকে টাকা নেওয়ার প্রচলন শুরু হয় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আমল থেকে। প্রকাশকরা সব ঘাটে ঘুস দেওয়ার পরও নাহিদ আমল থেকে শুরু ছাপা হওয়া প্রতিটি বই থেকে ২৫ পয়সা করে মন্ত্রীর ফান্ডে দেওয়ার। দীপু মনি সেটাকে বাড়িয়ে ৫০ পয়সা করেন।
টাকা তিনি শুধু যে গাইড বই প্রকাশনী থেকে নিতেন তা নয়। ডা. দীপু মনির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নতুন শিক্ষাক্রম ও বই নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। কয়েক বছর ধরে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে কিছু বই চলে আসলেও তার আমলে তিনি দিতে ব্যর্থ হন। বরাবরই বইয়ের পাণ্ডুলিপির কারণে এই দেরি হতো। এই দায়িত্ব জাতীয়
শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থাকলেও দীপু মনি, রতন মজুমদার ও মশিউর রহমান পড়ে দেখার জন্য নিতেন এবং দীর্ঘদিন আটকে রাখতেন। এসবের সমন্বয় করতেন দীপুমনি ও রতন ঘনিষ্রঠ এনসিটিবির হিসাব বিজ্ঞানের অধ্যাপক সাইদুর রহমান, প্রভাষক নুর কুতুবুল আলমসহ কয়েকজন। প্রতি বছর প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপানো হতো। পুরো লুটপাট জালিয়াতির সঙ্গে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যানরা-উৎপাদন নিয়ন্ত্রকরা জড়িত ছিল। সর্বশেষ চেয়ারম্যান ক্রিকেটার মাশরাফির চাচা। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ থেকে অব্যাহতি নিয়ে তিনিও পলাতক।ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে পরিবর্তনের হোতা নুর কুতুব কুখ্যাত শাহেদুল খবির গংয়ের প্যানেল থেকে নির্বাচিত। গত ৫ বছরে ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে দেশের প্রতিবাদী বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত ছিলেন। দীপুর শিক্ষাক্রম নিয়ে যারাই সোচ্চার ছিলেন তাদের সবাই হুমকি-ধমকি ও শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করারও অভিযোগ রয়েছে। গোপালগঞ্জের হওয়ায় ধরাকে সরা জ্ঞান নুর কুতবের বিরুদ্ধে একাধিক ডিজিও রয়েছে বলে জানা গেছে। পাঁচ আগস্টের পর থেকে পলাতক রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচছুক এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, দীপু মনির ভাই টিপু টেলিফোন করে টেন্ডার দেওয়া নেওয়ার হিসেব নিয়ন্ত্রনকালে ক্যাডার কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ ভাষায় কথা বলতেন।
লেখক : শিক্ষাবিদ
পর্ব -১