দীপু মনি ও তার ভাইয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ - দৈনিকশিক্ষা

দীপু মনি ও তার ভাইয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

পলাতক সাবেক শিক্ষা এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি ও তার স্বামী তৌফীক নাওয়াজ এবং বড় ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।

সোমবার (১৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছে।

এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএস এলাকা থেকে ডা. দীপু মনিকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল।

জানা গেছে, চাঁদপুরের একটি মামলায় দীপু মনিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তাকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। 

দীপু মনি তার ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু

গত ১৮ জুলাই চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তার বড় ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুকে আসামি করা হয়েছে।

শিক্ষাখাত তছনছ 

পুরো শিক্ষাব্যবস্থা তছনছ করে ফেলেছেন দীপু ও তার বাহিনী। পাঠ্যপুস্তকে হাবিজাবি ঢোকানো,  এমপিওবাণিজ্য, টেন্ডার, শিক্ষা ক্যাডারে বদলি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। দুর্নীতিবাজ শিক্ষা সাংবাদিকদের নিয়ে বিদেশভ্রমণসহ নানা অবৈধ ও অনৈতিক সুবিধা দিয়ে গণমাধ্যম ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছেন।  চাঁদপুর পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজে অবৈধ অ্যধক্ষ রতন কুমার মজুমদারকে দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের বদলি বাণিজ্যসহ নানা অপরাধের বিচার চাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।   

সম্প্রতি গণপিটুনিতে নিহত চাঁদপুরে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের অবৈধ বালু উত্তোলনের নেপথ্য মদদদাতা ছিলেন দীপু মনি। এ কারণে খোদ জেলা আওয়ামী লীগ নেতারাই বিভিন্ন সময়ে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন এ দু’জনের দিকে। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সেলিম খান একসময় ছোটখাটো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি দীপু মনির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন এবং তখনই মেঘনা থেকে বালু তুলতে শুরু করেন। বছরের পর বছর ধরে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে সেলিম খানকে বলা হতো ‘বালুখেকো’।

তৌফীক নাওয়াজ

আরো পড়ুন: পলাতক দীপু মনি পাকড়াও

সরকারি নথি অনুযায়ী ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল– এই চার বছরেই দীপু মনির নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুর সদর উপজেলার ২১টি মৌজা থেকে ৬৬৮ কোটি ৩৩ লাখ ঘনফুটের বেশি বালু তুলেছেন সেলিম খান। প্রতি সিএফটি সাদা বালুর পাইকারি দর ২ টাকা। এই হারে শুধু চার বছরে তিনি যে পরিমাণ বালু তুলেছেন, তার মূল্য প্রায় ১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। বালু ব্যবসা থেকে হাজারো কোটি টাকা আয় করলেও সরকারি কোষাগারে এক পয়সাও দেননি এই বালুখেকো।

২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর জেলা প্রশাসন সেলিম খানকে ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ২৬৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে উত্তোলন করা বালুর রয়্যালটি হিসেবে এই টাকা দেওয়া না হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানায় জেলা প্রশাসন।

সরকারি তদন্তে দেখা গেছে, দীপু মনির সমর্থন ছাড়া সেলিম খান তাঁর বালুর ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারতেন না। তিনি সেলিম খানের জন্য অন্তত তিনবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছেন।
২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবসের অনুষ্ঠানে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বিষয়টি তুলে ধরেন। সরাসরি নাম উল্লেখ না করে তিনি ওই অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, নদী দখলকারীরা রাজনৈতিক মদদপুষ্ট। যারা মেঘনা থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছেন, তাদের সঙ্গে চাঁদপুরের এক নারী মন্ত্রীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। নদী দখলকারী, বালু উত্তোলনকারী ও তাদের সহযোগীদের বিষয়ে কথা বলার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। 
২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দীপু মনি কয়েকটি সরকারি দপ্তরে অন্তত ১৫টি আধাসরকারি লেটার বা ডিও লেটার লিখেছেন, যাতে সেলিম খান ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বালুর ব্যবসা চালিয়ে যেতে এবং ব্যবসা আরও বৃদ্ধি করতে পারেন।

চাঁদপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি

২০২১-২২ সালে চাঁদপুরে সরকারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের আগেই সেখানকার সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি দাম দেখিয়ে দলিল করে নেয় দীপু মনির ঘনিষ্ঠজন। তিনি তখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। 

অভিযোগ ওঠে, সরকারের কাছ থেকে ৩৫৯ কোটি টাকা বাড়তি নেওয়ার এ কারসাজিতে জড়িত ব্যক্তিরা তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। এর মধ্যে তাঁর নিকটাত্মীয়ও রয়েছেন। তারা ভূমি অধিগ্রহণে প্রশাসনিক অনুমোদনের আগেই চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে জায়গা ঠিক করে নিজেদের নামে দলিল করিয়ে নেন। পরবর্তী সময়ে সেসব জমিই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচন করে এবং জেলা প্রশাসনকে অধিগ্রহণের জন্য বলে।

২০২১ সালের নভেম্বরে জেলা প্রশাসনের এ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয় ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল। এর পর মাঠপর্যায়ে জমির অস্বাভাবিক মূল্য দেখে জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১৩ সদস্যের কমিটি করে দেয়। সেই কমিটি নির্ধারিত মৌজার জমি বেচাকেনার দলিল পর্যালোচনা করে ১৩৯টি দলিল পায় ‘অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যে’ রেজিস্ট্রি করা। এসব দলিল হয়েছে ২০২০ সালের ১৮ মে থেকে ২০২১ সালের ১৫ মের মধ্যে, অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়-সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরুর পর। ওই জমির দাগ নম্বরের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমির দাগ নম্বরের মিল রয়েছে। আবার ওই সব দাগের বাইরে একই মৌজায় একই সময়ে সম্পাদিত ৪০টির বেশি জমি কেনাবেচার দলিল পাওয়া গেছে, যার মূল্য সরকারি মৌজা দরের কাছাকাছি। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য যে জায়গাটি ঠিক করা হয়েছে, কেবল ওই সব দাগের জমির দলিলে অস্বাভাবিক দাম দেখানো হয়েছে।

সেখানে একক নামে সর্বোচ্চ জমি নেন দীপু মনির ভাই জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ। তাঁর নামে দলিল হয় ৫৬৮ শতাংশ (৫.৬৮ একর) জমির। সাবেক মন্ত্রীর মামাতো ভাই ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলামের নামে দলিল হয় ১৬১ শতাংশ জমির। তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত চাঁদপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর নামে কেনা হয় ৯৩ শতাংশ এবং মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনৈতিক) টুটুল মজুমদারের নামে ৩৭ শতাংশের দলিল হয়।

খাসজমিতে ভাইয়ের টিপু নগর

সরকারি খাসজমি দখল করে নীলকমল ইউনিয়নের বাহেরচরে বিপুল পরিমাণ খাসজমি নিজের কবজায় নিয়ে দীপু মনির ভাই টিপু তৈরি করেন মাছের ঘের, গবাদি পশুর খামার ও সবজি বাগান। কেবল সরকারি জমির ওপরই নিয়ন্ত্রণ নেননি, ওই এলাকার নাম বদলে নিজের নামে রেখেছেন ‘টিপু নগর’।

পলাতক দীপু মনি পাকড়াও - dainik shiksha পলাতক দীপু মনি পাকড়াও পদোন্নতির দাবিতে শতশত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা শিক্ষা সচিবের কক্ষে - dainik shiksha পদোন্নতির দাবিতে শতশত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা শিক্ষা সচিবের কক্ষে এনসিটিবির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ - dainik shiksha এনসিটিবির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ শিক্ষা উপদেষ্টা অটোপাসের ঘোষণা দেবেন, আশ্বাস কন্ট্রোলারের - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টা অটোপাসের ঘোষণা দেবেন, আশ্বাস কন্ট্রোলারের জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি: শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষা ভবনের ইএমআইএস সার্ভার বন্ধ করলেন সেসিপের কর্মকর্তারা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের ইএমআইএস সার্ভার বন্ধ করলেন সেসিপের কর্মকর্তারা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ নয়, হাইকোর্টের রুল - dainik shiksha সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ নয়, হাইকোর্টের রুল সময় টিভির সম্প্রচার এক সপ্তাহ বন্ধের নির্দেশ - dainik shiksha সময় টিভির সম্প্রচার এক সপ্তাহ বন্ধের নির্দেশ এইচএসসিসহ কারিগরিতে ভর্তির সময় ফের বাড়লো - dainik shiksha এইচএসসিসহ কারিগরিতে ভর্তির সময় ফের বাড়লো নিরুদ্দেশ ৪০ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক - dainik shiksha নিরুদ্দেশ ৪০ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে অটোপাস ও পার্টিশন গ্রাজুয়েটের কাহিনী - dainik shiksha অটোপাস ও পার্টিশন গ্রাজুয়েটের কাহিনী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051610469818115