রাজধানীবাসীর প্রতি ২ ঘণ্টার যাত্রাপথের ৪৬ মিনিটই কাটে যানজটে বসে থেকে। যার ফলে নাগরিকদের অতিরিক্ত সময় নষ্ট হয়, কাজে ব্যাঘাত ঘটে। আর বায়ুদূষণ জনিতরোগের কারণে প্রতি বছর জনপ্রতি ৪ হাজার টাকা খরচ করেন নগরবাসী।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে রিডিউসিং পলিউশন ফর গ্রিনিং সিটিস শীর্ষক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত। ঢাকার সিটি করপোরেশন এলাকার ৫০০ জনের ওপর জরিপ করে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে সিপিডি।
সিপিডি জানায়, জরিপে অংশগ্রহণ করা ৭৬ শতাংশ মানুষই মনে করে গত ২-৩ বছরের বায়ুদূষণের পরিমাণ আরও বেড়েছে। আর ৭৩ শতাংশ মনে করছে এই সময়ে প্লাস্টিক দূষণ আগের তুলনায় বেড়েছে। ৪৩ শতাংশ পরিবার মনে করেন সরাসরি রাস্তায় প্লাস্টিক ফেলার কারণে এ দূষণ বাড়ছে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি দুষণরোধে কিছু সুপারিশ তুলে ধরে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী, ২০২৮ সালের মধ্যে স্থায়ী চিমনি ইট ভাটা বন্ধ করতে একটি নীতিমালা করা উচিত। যেন পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের সমস্ত স্থায়ী চিমনি ইট ভাঁটাগুলো বন্ধ করা যায়। একই সঙ্গে ইট উৎপাদন কম দূষণকারী প্রক্রিয়ায় স্থানান্তরিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন উন্নত জিগজ্যাগ ভাটা, হাইব্রিড হফম্যান ভাটা, এবং উল্লম্ব খাদ ইট ভাটা। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা-ভিত্তিক পাওয়ারপ্ল্যান্টগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার সুপারিশও করেন তারা।
সুপারিশে আরও বলা হয়, নতুন কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট অনুমোদন করা বন্ধ করতে হবে। ধীরে ধীরে সমস্ত বিদ্যমান কয়লাভিত্তিক পাওয়ারপ্ল্যান্টগুলোকে বিচ্ছিন্ন করা এবং ফেজ আউট করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ছাড়া, পরিবেশ সারচার্জ বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয় সিপিডির গবেষকরা। গবেষকরা জানান, অর্থ আইন পরিবেশ দূষণকারী শিল্প দ্বারা উৎপাদিত পণ্যের ওপর ১ শতাংশ সারচার্জ নির্ধারণ উচিত। যা পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যয় হবে। প্লাস্টিক দূষণের জন্য মূলনীতি সুপারিশ পলিথিন ব্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার পাশাপাশি প্লাস্টিক পণ্যের রিসাইক্লিংয়ের ওপরে জোর দিতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, আইন করে এসব দূষণ বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য দরকার জনসচেতনতা। বিদ্যমান যেসব আইন আছে, তা আংশিক প্রয়োগ করলেও বাংলাদেশ ‘সোনার বাংলা’ হয়ে উঠবে। অভ্যন্তরীণভাবে সভা-সেমিনার না করে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রান্তিক পর্যায়ে সচেতনতার উদ্যোগ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদ খাতুন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেলসহ দেশি বিদেশি পরিবেশবিদরা উপস্থিত ছিলেন।