দুর্নীতিমুক্ত বংলাদেশ হোক ৬ দফা দিবসের অঙ্গীকার - দৈনিকশিক্ষা

দুর্নীতিমুক্ত বংলাদেশ হোক ৬ দফা দিবসের অঙ্গীকার

ননী গোপাল সূত্রধর |

আজ ৭ জুন। ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ছয় দফা আন্দোলন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা। যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতি বছর ৭ জুন আমাদের বাংলাদেশে এই দিবসটি পালিত হয়। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জুন ৬ দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী দুর্বার গণ-আন্দোলনের সূচনা হয়। ছয় দফই মূলত স্বাধীনতার এক দফা। ছয় দফার মধ্যেই স্বাধীনতার সোনালী বীজ বপন করা হয়।

ইতিহাস থেকে যা জানতে পারি, সর্বপ্রথম তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘ছয় দফা দাবি’ উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে ‘আমাদের বাঁচার দাবি: ৬-দফা কর্মসূচি’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা বের করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা উত্থাপন করা হয় লাহোর প্রস্তাবের সঙ্গে মিল রেখে।

১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবই ছিলো ছয় দফা কর্মসূচির আসল ভিত্তি। পরবর্তীকালে এই ৬ দফা দাবিকে হৃদয়ে ধারণ করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন বেগবান হয় যা পরিপূর্ণ রূপ নেয় ১৯৭১-এর মুক্তির সংগ্রামে বিজয়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও স্বাধীনতার জন্য এই আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাই এই ৬ দফাকে তুলনা করা হয় ব্রিটিশ ম্যাগনা কার্টা’র সঙ্গে। নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, এই ছয় দফা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।

ছয় দফার দাবিগুলো হলো-১. শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি ২. কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা ৩. মুদ্রা বা অর্থ সম্বন্ধীয় ক্ষমতা ৪. রাজস্ব, কর বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা ৫. বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক ক্ষমতা ৬. আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা।

সর্বোপরি ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য ছিলো পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র, ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে এই ফেডারেল রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। সুতরাং ছয় দফার মূলেই ছিলো মানুষের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৬৬’র ৬ দফা না হলে কোনোদিন ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন হতো না, হতো না স্বাধীনতার যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ না হলে দেশ স্বাধীন হতো না। এই ৬ দফা ছিলো নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত এবং ন্যায্য সুবিধাবঞ্চিত বাঙালি জাতিকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর কবল থেকে মুক্ত করার জন্য বাঙালিদের প্রাণের দাবি। 

এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনি এই যে ছয় দফা দিলেন, তার মূল কথাটি কী?’ উত্তরে শেখ মুজিব সোজাসাপ্টা বলেদিলেন, ‘আরে মিয়া, বুঝলা না? দফা তো একটাই। একটু ঘুরাইয়া কইলাম।’ লাহোরে পেশ করা ছয় দফা বঙ্গবন্ধুর একটু ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে বলা এক দফাই হলো বাঙালির মুক্তির দফা, প্রিয় স্বাধীনতা। পূর্ব পাকিস্তানের সায়ত্তশাসন তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতার দফা।

আজকের দিনে জাতির পিতার স্বপ্ন নানাবিধ কারণে ম্লান হয়ে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থমকে দাঁড়াবার উপক্রম। জাতির পিতা বলেছিলেন মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। তিনি বলেছিলেন ‘আমার বাংলার মানুষ যেন তিন বেলা পেট ভরে ভাত খেতে পারে, এদেশের কোন মানুষ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবেনা, চিকিৎসার অভাবে যেন কোন মানুষের প্রাণ না হারায়।’ এগুলো ছিলো স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিশ্রুতি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার মাধ্যমে মানুষের পূর্ণাঙ্গ মুক্তির যে পথ তৈরি করেছিলেন তার দ্বারপ্রান্তে এসেই পাক দোসর দালালদের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন। রচিত হয় ইতিহাসের নৃশংসতম হৃদয়বিদারক ঘটনা।  

পিছিয়ে যাওয়া বাঙালি জাতি যখন দিশেহারা তখন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের হাল ধরেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। শুরু হয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৪১ এর মতো নানান কর্মযজ্ঞে দেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। কিন্তু এই উন্নয়নকে ম্লান করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে কিছু ভাইরাস। যেগুলোর সংক্রমণে পুরো জাতি আবারো দিশেহারা অবস্থা। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি, পরিবেশদূষণ,  খাদ্য ভেজাল, মাদক,  জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় উগ্রবাদ ইত্যাদি।

আজকে পত্র-পত্রিকা খুলেই চোখে পড়ে কী রাজনৈতিক, কী অ-রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, এমপি-মন্ত্রী, সরকারি-বেসরকারি উচ্চ পদস্থ, নিম্ন পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, অবৈধ সম্পদের পাহাড়ের শ্বেতপত্র। চোখ কপালে উঠে যায বাক রুদ্ধ হয়ে যায়, শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় বুঝি এই বাংলার। এই দুর্নীতির প্রতিযোগিতায় বাদ নেই তাদের স্ত্রী পুত্র -কন্যা, শালা শালি, গাড়ির ড্রাইভার, বাড়ির মালী ও ঘরের বুয়া। হায়রে শিক্ষা! আজকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, শিক্ষিতদের কাছেই দেশ ও জাতি সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ ও নাজেহাল। নীতি নৈতিকতা দেশপ্রেম আজ বইয়ের বুলি শুধু।

তাই বলি আওয়ামী লীগ শাসিত সরকারের উচিত ৬ দফার মতো যেই মুক্তির দফা রচিত হয়েছিলো ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে, অনুরূপ আজকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইস্পাত কঠিন কার্যকর দফা নির্ধারণ করা সময়ের দাবি। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, ভিশন-মিশন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মান অসম্ভব হয়ে পড়বে। পরিশেষে, দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়াই হোক আজকের ৬ দফা দিবসের মূল অঙ্গীকার। 

লেখক: জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, শশীদল আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু তাহের কলেজ, কুমিল্লা

 

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048480033874512