গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। টাকা ছাড়া এখানে কোনো কাজ হয় না। অফিসের নিচু থেকে উপরের সবাই টাকার বিনিময়ে কাজ করে। এর বাইরে কিছুই বোঝে না।
বিশেষ করে জাল-জালিয়াতি কাগজপত্রে ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় শিক্ষক বা কর্মচারীদের এমপিও সিটে নাম অন্তর্ভুক্তি এবং কর্তনের মতো দুঃসাহসিক ঘটনায় উৎকণ্ঠিত উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
এ বছরের ১৪ জানুয়ারি অবসরে যাওয়া শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম পারভেজ এবং এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যোগদান করা এ কে এম মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এ অফিসের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম প্রকাশ্যে আসে এ বছরের মে মাসের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) সিট প্রকাশের পর। এ মাসের এমপিও সিটেই হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও হরিরামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দুজন কর্মচারীর নাম অন্তর্ভুক্তি এবং ধরমা বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের নাম কেটে দেয়া হয়।
শুধু তাই নয় অবৈধ জানার পরও হরিরামপুর বালিকা বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক এবং ধরমা থেকে অবৈধভাবে নাম কেটে দেয়া শিক্ষককে কাজীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে এমপিওভুক্তির জন্য ফাইল পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, ধরমা বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি যোগ দেন মোনোয়ারা বেগম। তিনি চাকরিতে যোগদানের তারিখ থেকেই এরিয়াসহ ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসের এমপিওতে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। পরবর্তীতে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে এ শিক্ষকের নিয়োগ নিয়ে তদন্ত চালানো হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়ম ও জাল-জালিয়াতির প্রমাণ তুলে ধরা হয়।
অন্যদিকে হরিরামপুর বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক নিয়ে হাইকোর্টে বিচারাধীন মামলায় একাধিক নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সভাপতি নিযুক্ত হন এ প্রতিষ্ঠানেরই অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাচ্চা মিয়া। তিনি বিদ্যালয়ের বৈধ প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলামকে পাশ কাটিয়ে তার স্ত্রী চামেলী বেগমকে (সহকারী শিক্ষক প্রাথমিক শাখা) ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। এ সুযোগে তিনি এ বছরের মে মাসে দুই কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে এমপিওভুক্ত করেন। গুঞ্জন রয়েছে দুই কর্মচারীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া স¤প্রতি তিনি তার ছেলেকে ব্যাকডেটে নিয়োগ দেখিয়ে জাল-জালিয়াতি কাগজপত্রে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম মামুনুর রশিদকে ম্যানেজ করে এমপিওর জন্য ফাইল পাঠান, যা বর্তমানে জেলা শিক্ষা অফিস হয়ে বিভাগীয় অফিসে (ডিডি) রয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও অবৈধভাবে নিয়োগ বাণিজ্য করছে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষিকা চামেলী বেগম (ভারপ্রাপ্ত প্রধান) এবং সভাপতি হিসেবে তার স্বামী। বিষয়টি আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকতা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও রংপুর বিভাগীয় অফিসকে জানালেও কোনো লাভ হয়নি।
একাধিক অভিযোগের বিষয়ে অবসরে যাওয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম পারভেজের মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা এ কে এম মামুনুর রশিদ তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হরিরামপুরের দুই কর্মচারীর বেতন-ভাতার জন্য পাঠানো ফাইলটি আমার সময়কার নয়। তেমনই ধরমা বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের নাম কর্তনের ফাইলও আমাদের অফিসের মাধ্যমে পাঠানো হয়নি। তবে জুন মাসে প্রধান শিক্ষক হিসেবে মোনোয়ারা বেগমের ফাইল এবং হরিরামপুর বালিকা বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষকের বেতন-ভাতার ফাইলটি যথাযথ মন্তব্যসহ পাঠানো হয়েছে।