বাংলাদেশে প্রথম সন্তান ছেলে চান ২৮ শতাংশ নারী। সামাজিক-সাংস্কৃতিক রীতিনীতি এবং বিশ্বাসের কারণে দেশের বিভিন্ন সামাজিক স্তরে ছেলে সন্তানের প্রতি আগ্রহ বেশি।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ছেলের ব্যাপারে অগ্রাধিকার প্রতিরোধ এবং পক্ষপাতিত্বমূলক লিঙ্গ বাছাইয়ের ঝুঁকিবিষয়ক জাতীয় নির্দেশিকার প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গবেষক ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) প্রতিনিধিরা এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, ইউএনএফপিএ ও ঢাকার নরওয়ে দূতাবাস যৌথভাবে এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ইউএনএফপিএর সহায়তায় পরিচালিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সে বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, প্রথম সন্তান ছেলে হোক এ প্রত্যাশা করেন ২৮ শতাংশ নারী ও ২৪ শতাংশ পুরুষ। অন্যদিকে প্রথম সন্তান মেয়ে হোক এটি চান ১২ শতাংশ নারী ও ১০ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ। ওই গবেষণায় ৩৪ শতাংশ নারী ভ্রূণের লিঙ্গ জানার জন্য চিকিৎসাপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়েছিলেন। বাংলাদেশে মোট প্রজনন হার এখন ২ দশমিক ৩। এই সবই মেয়ে ভ্রূণের প্রতি বৈষম্যের পূর্বাভাস।
তিনি বলেন, একাধিক গবেষণায় বাংলাদেশে মেয়ে ভ্রূণের প্রতি বৈষমের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গবেষণাগুলোয় বাংলাদেশে মেয়ে ভ্রূণের প্রতি বৈষমের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ভ্রূণ অবস্থায় লিঙ্গ পরিচয় যেন গোপন থাকে, সে জন্য চিকিৎসক, চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ বা স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নির্দেশিকা তৈরি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
অনুষ্ঠানে নির্দেশিকার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীর।
তিনি বলেন, প্রসূতিবিশেষজ্ঞ, জিনবিষয়ক চিকিৎসক, শিশুবিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, রেডিওলজিস্ট, মিডওয়াইফ, পরিবারকল্যাণ সহকারী, সাবঅ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা, সনোলজিস্ট, নার্স ও প্রযুক্তিবিদ সবাইকে ভ্রূণের লিঙ্গ শনাক্ত না করার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মানুষকে সচেতন করার ব্যাপারেও তাদের ভূমিকা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, সন্তান জন্ম দেওয়ায় মায়ের ভূমিকা বেশি। তবে, সেক্সুয়াল সিদ্ধান্তে মায়েরা কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন না। এমনকি গর্ভের সন্তান মেয়ে হলে পরিবারে মায়ের প্রতি বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সন্তানের দাদী এবং ননদরা। বর্তমান সরকার কর্মক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দিয়েছে। তারপরও মেয়েরা ভায়োলেন্সের শিকার হন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ইউএনএফপিএ এবং নরওয়ের মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাশেদা সুলতানা প্রমুখ।