দ্বন্দ্বে আটকে শিক্ষার ১১ প্রকল্প, অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ - দৈনিকশিক্ষা

দ্বন্দ্বে আটকে শিক্ষার ১১ প্রকল্প, অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কর্তৃত্বের দ্বন্দ্বে নতুন প্রকল্প নিতে পারছে না ইইডি ও মাউশি। দুটি সংস্থাই গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে অবকাঠামো নির্মাণে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারছে না। মাউশি কর্মকর্তারা তাদের অধীনস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও মেরামত কাজে সম্পৃক্ততা চাচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওইসব কাজ মাউশিকে না জানিয়ে করা হচ্ছে; কোথাও কোথাও কাজ করেই অর্থ নয়ছয় করা হচ্ছে বলে সংস্থাটির অভিযোগ। রোববার (২৮ মে) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাকিব উদ্দিন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়,  আর ইইডির প্রকৌশলীদের যুক্তি হলো- অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামত কাজের সঙ্গে মাউশির সম্পৃক্ততার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এরপরও গুরুত্বপূর্ণ কোন প্রকল্প গ্রহণে মাউশির মতামত নেয়া হচ্ছে।

 এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের স্কুল-কলেজে বিল্ডিং হচ্ছে, সংস্কার হচ্ছে; অথচ আমরা জানি না। মাউশিতে কোনকিছুই জানানোও হচ্ছে না। এগুলোর নামে দুর্নীতি-অনিয়মের কথা শোনা যাচ্ছে।’

ইইডির প্রকল্প গ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে তিনি বলেন, ‘তারা কীসের ভিত্তিতে, কোন তথ্যের ভিত্তিতে প্রকল্প নিচ্ছেন? স্কুল-কলেজ পরিচালনা করে মাউশি; মাউশিকে বাদ দিয়ে যেসব প্রকল্প নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে সেগুলির যুক্তিকতা কী?’ তাছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিম্নমানের অবকাঠামো নির্মাণ ও এ সংক্রান্ত অনিয়মের কারণে মাউশি কর্মকর্তারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন বলে মহাপরিচালক জানিয়েছেন।

ইইডির একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২০১৮ সাল থেকে ‘বড়’ কোন প্রকল্প নিতে পারছে না সংস্থাটি। বিচ্ছিন্নভাবে একটি-দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে চেষ্টা হচ্ছে। এগুলোও আবার দীর্ঘজটে আটকে যাচ্ছে।

কোভিড মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আর্থিক সংকটের দোহাই দিয়ে প্রকল্প গ্রহণে খুব একটা আগ্রহও দেখাচ্ছেন না শীর্ষ কর্মকর্তারা। এর ফলে দু’এক বছর পর প্রতিষ্ঠানটি ‘কর্মহীন’ হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন প্রকৌশলীরা।

গত বছরের শেষের দিকে ইইডির পক্ষ থেকে ১১টি নতুন প্রকল্পের প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সভায় সবকটি প্রস্তাবই নাকচ হয়ে যায়। এরপর কয়েক দফায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন ইইডির জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলীরা।

তবে বাদ সাধে মাউশি। এরপর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিও এক সভায় প্রকল্প গ্রহণে ইইডির একক প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেন। এতে ইইডির প্রচেষ্টা থমকে যায়। সম্প্রতি প্রস্তাবনা কিছুটা কাটছাঁট করে ৯টি প্রকল্পের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইইডি।

এখন ওইসব প্রকল্প অনুমোদন করাতে মন্ত্রণালয়ে এককভাবেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইইডির শীর্ষ প্রকৌশলীরা। এবার আরও জোরালোভাবে বিরোধিতায় নামে মাউশির নীতিনির্ধারকরা।

ইইডির পক্ষ থেকে নতুন প্রকল্পের অনুমোদনের বিষয়টি তদারকি করছেন সংস্থার নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, মাউশি সব প্রকল্পের বিরোধিতা করছে না। দু’একটি প্রকল্প নিয়ে তারা আপত্তি করছে। সেটিও ‘আলাপ-আলোচনার’ মাধ্যমে নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।

মাউশিকে না জানিয়ে নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে কি না জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এটা সঠিক নয়। কারণ আমরা কোন প্রকল্পের প্রস্তাবনা তৈরি করলে সেটি মন্ত্রণালয়ে (শিক্ষা) জমা দেই। তারাও (মাউশি) মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। এরপর মন্ত্রণালয় সব পক্ষকে নিয়েই আলোচনা করে প্রস্তাব চূড়ান্ত করে (পরবর্তী পদক্ষেপে জন্য)।’

কারো এককভাবে নতুন প্রকল্প গ্রহণের সুযোগ নেই জানিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘এখন যেকোন নতুন প্রকল্প গ্রহণের আগে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এটি ভালো উদ্যোগ। এর মধ্যে দিয়ে প্রকল্পের যুক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা কতুটুক সেটি বের হয়ে আসবে।’ ইইডির প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো হলো- ‘নতুন জাতীয়করণকৃত কলেজসমূহের উন্নয়ন’, ‘নতুন জাতীয়করণকৃত মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’, ‘বেসরকারি কলেজসমূহের উন্নয়ন’, ‘সরকারি-বেসরকারি কলেজসমূহের ছাত্রীদের হোস্টেল নির্মাণ’, ‘এমপিওভুক্ত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরসহ অবকাঠামো উন্নয়ন’, ‘হাওর এলাকায় অবশিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন প্রকল্প’, ‘কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন’, ‘ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ এবং রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের নতুন নির্মিত ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ’, ‘হাওর এলাকায় ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ (সৌদি আরবের অর্থায়নে) (উপজেলা সদরে)’ এবং ‘নতুনভাবে সৃজিত ৪৮৯টি উপ সহকারী প্রকৌশলী, ২৭টি নির্বাহী প্রকৌশলী ও চার জেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প।

প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কোনটি মন্ত্রণালয়ে আছে, কোনটি প্ল্যানিং কমিশনে আছে, কোনটির ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি হচ্ছে; আবার কয়েকটি প্রকল্প রিজেক্টও (নাকচ) হয়েছে।’

এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত সাড়ে চার বছরে নতুন কোন প্রকল্প নিতে পারেনি মাউশি। পাঁচ বছর আগে এই সংস্থার অধীনে ১৫টির মতো প্রকল্প চলমান ছিল। বর্তমানে মাউশির অধীনে মাত্র ৯টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে, যার তিনটি আগামী জুনেই শেষ হচ্ছে। ২০২৪ সালের জুনে বাকি সব প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়ে যাবে। ওই সময় মাউশির অধীনে নতুন কোন প্রকল্প থাকবে না।

একই অবস্থা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের। এ সংস্থাটিও গত পাঁচ বছরে নতুন কোন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারেনি। পাঁচ-ছয় বছর আগে নেয়া প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম নিয়েই টিকে রয়েছে ইইডি। এই সময়ে ইইডির জনবল দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশাল এই জনবল নিয়েও নতুন কোন প্রকল্প নিতে পারছে না ইইডির নীতিনির্ধারকরা।

ইইডির বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা মনে করছেন, শীর্ষ কর্মকর্তাদের ‘অদক্ষতা’ ও ‘গাফিলতি’র কারণেই সংস্থাটি ‘নিরুত্তাপ’ হয়ে পড়ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘অন্তর্দ্বন্দ্বে’ নতুন প্রকল্প গ্রহণে ভাটা পড়ছে। অনেক কর্মকর্তা সংস্থার বিধিবিধানও ঠিকমতো বুঝতে পারছে না। এ কারণে মাউশির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। মাউশিকে যথাযথভাবে অবহিত না করে নতুন প্রকল্প নিতে গেলে কার্যত কোন প্রকল্পই মন্ত্রণালয়ের সায় পাবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইইডির সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও বিধিবিধান ‘বিশেষজ্ঞ’ মুজিবুর রহমান সরকার বলেন, ‘আমরা নিজেরাও প্রকল্প বানিয়েছি; মাউশিও প্রকল্প বানিয়েছে, তারা নিজেদের মতো করেই প্রকল্প বানিয়েছে, ওইটার জন্য প্রয়োজন হলে আমাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছে। আবার কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডও প্রকল্প বানিয়েছে। আর আমরা কাজ করেছি, প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এখানে সমন্বয় ছিল।’

ইইডিকে ‘এক্সিকিউটিভ এজেন্সি’ উল্লেখ করে মুজিবুর রহমান সরকার বলেন, ‘আমাদের সময় যেসব বিধিবিধান ছিল সেগুলো পরিবর্তন হয়েছে কি না আমি জানি না। তবে নতুন প্রকল্প নিতে হলে মাউশি ও ইইডির মধ্যে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। আর সরকারি দায়িত্বপালন করতে গেলে আইনকানুন ও বিধিবিধান ভালোভাবে জানা থাকাটাও স্বাভাবিক।’

ইইডি মাউশির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন করে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ইইডি প্রকল্প নিলেও মাউশির সঙ্গে সমন্বয় থাকা উচিত; মাউশির নতুন প্রকল্প নেয়া হলেও ইইডির সঙ্গে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। আমরা যখন নতুন প্রকল্প নিয়েছি তখন সমন্বয় করেই তা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’

মুজিবুর রহমান সরকার ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। এর আগে তিনি সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ অবদান রাখেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032260417938232