জামালপুরে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের উপস্থিতিতে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। ১৭ আগস্ট রাত ৯টার দিকে ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ‘সিরিজ বোমা হামলা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা চলাকালে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেছেন ওই সংসদ সদস্য।
এ ঘটনায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার বরাবর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নারী এমপি হোসনে আরা। এ ছাড়া জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ বরাবরও একটা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
লিখিত অভিযোগে এমপি হোসনে আরা উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ও তার ভাই দপ্তর সম্পাদক মাহমুদুল আলমসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগপত্রে হোসনে আরা লিখেছেন, আমি বাংলাদেশ কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি, জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য এবং ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সদস্য। আমার নির্বাচনী এলাকায় শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে গত ১১ আগস্ট থেকে অবস্থান করছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনী এলাকায় সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৬ আগস্ট নিজ উদ্যোগে শোক দিবসের, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করি। আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সব সদস্যকে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমার শোক সভায় কাউকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ১২ আগস্ট ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভায় কোনো প্রকার ফোন বা দাওয়াতপত্র ছাড়াই অংশ নিই। সেখানে দপ্তর সম্পাদক মাহমুদুল ইসলামকে আমি জিজ্ঞাসা করি- আমাকে কোনো খবর দেওয়া হয়নি কেন? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে বরং সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তিনি আমার দিকে তেড়ে আসেন এবং অশালীন ভাষা ব্যবহার করে আমাকে হুমকি দেন।
তিনি আরও বলেন, ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় রাত ৮টার দিকে উপস্থিত হই। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সদস্য হিসেবে আমাকে কেন কোনো দাওয়াতপত্র, মেসেজ বা ফোন কল করা হয় না আবারও জিজ্ঞাসা করি। এই কথা জিজ্ঞাসা করতেই ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি উগ্রভাবে অশালীন ভাষায় কথা বলেন। আনোয়ারুল ইসলাম আমাকে বলতে থাকেন- ‘আপনি কে? আপনাকে খবর দিতে হবে, তুই তো কেমনে এমপি হয়েছিস কার সঙ্গে কী করে হয়েছিস সেটা আমি ভালো করেই জানি, বেশি বাড়াবাড়ি করলে সব প্রকাশ করে দিমু।’ তখন আমি ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সামনে প্রতিবাদ করলে তিনি আমার দিকে তেড়ে আসেন এবং আমাকে ধাক্কা দিতে গেলে আমি আত্মরক্ষার্থে হাত এগিয়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করি তখন তার থাপ্পড়টি আমার হাতে এসে লাগে। এ সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আনোয়ারুল ইসলামকে নিভৃত না করে উল্টো আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন- ‘আমি উপজেলা আওয়ামী লীগরে সভাপতি আমি যা বলব তাই-ই হবে।’
অভিযোগপত্রে তিনি আরও উল্লেখ করেন ১২ ও ১৭ তারিখে যে দুজন নেতা হোসনে আরার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন তারা দুজনই সহোদর এবং গত পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করার কারণে দুজনেই বহিষ্কৃত হয়েছিলেন।
এমপি হোসনে আরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, জাতীয় সংসদের স্পিকার একজন নারী, জাতীয় সংসদের উপনেতাও একজন নারী; প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া একজন নারী সংসদ সদস্য হিসেবে একজন নির্বাচিত পুরুষ সংসদ সদস্যের সামনে একজন পুরুষ দ্বারা নারী সংসদ সদস্যের গায়ে হাত তোলার মাধ্যমে তিনি পুরো নারী জাতিকে অপমান করেছেন। এর দায়ভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।
দলীয় প্রধানকে লক্ষ্য করে তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় আমি একজন নারী সংসদ সদস্য হিসেবে আপনাকে সব বিষয় অবগত করলাম, এ বিষয়ে আপনার সিদ্ধান্ত আমার কাছে শিরোধার্য।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এমপি হোসনে আরাই প্রথমে আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ বলেন, এ ঘটনায় কমিটি তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী ও নারী এমপি হোসনে আরা বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার এবং জেলা আওয়ামী লীগ বরাবর চিঠি দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরেছেন, স্পিকারও দেশে আসছেন। আমি নেত্রী এবং স্পিকারের সঙ্গে বিষয়টি মৌখিকভাবেও আলোচনা করব।