নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাল সনদধারী বহু শিক্ষক কর্মরত আছেন। এ নিয়ে দৈনিক আমাদের বার্তায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর নড়ে চড়ে বসেছে শিক্ষা প্রশাসন। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সনদ যাচাইয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্তা মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলছেন, পরে অভিযোগ এড়াতে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সনদ ও অন্যান্য কাগজপত্র যাচাইয়ের নির্দেশনা আগেরই। ইতোমধ্যে এজন্য কতোগুলো কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের সনদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। স্কুল পর্যায়ের শিক্ষকদের কাগজপত্র যাচাইয়ের দায়িত্বে থাকা উপজেলা কমিটিকে শিক্ষকদের সনদ ও নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজ সরেজমিনে যাচাই করতে বলা হয়েছে। আর জেলা কমিটি কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকদের সনদ সরেজমিনে যাচাই করবে। এদিকে কোনো কোনো আঞ্চলিক পরিচালক কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকদের সনদ হার্ড কপিতে পাঠাতে বলেছেন জেলা কমিটিকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সনদ নিয়ে অভিযোগ আছে। তাই তাদের সনদ যাচাইয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। এখন কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই করে তাদের এমপিওভুক্ত করা হবে। তা না হলে পরবর্তীতে আবার অভিযোগ উঠবে। তা এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঢাকা অঞ্চলের এক জেলার শিক্ষা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল দুপুরে দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, উপজেলা কমিটি স্কুল পর্যায়ের শিক্ষকদের সনদসহ অন্যান্য কাগজ যাচাই করবে। তাদের সনদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আর কলেজ পর্যায়ের সনদ আমরা (জেলা কমিটি) যাচাই করবো। সেখানেও সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। আর আঞ্চলিক পরিচালক মহোদয় শিক্ষকদের সনদের হার্ডকপি উনার কাছে যাচাইয়ের জন্য জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
রংপুর অঞ্চলের দুইজন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, বর্তমানে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জেলা শিক্ষা অফিস থেকে বিতরণ করা হয়। আগে এগুলো এনটিআরসিএ বিতরণ করতো। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে যেসব শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ দেয়া হয়েছে তাদের তথ্য আমাদের কাছে আছে। সেগুলো জেলা শিক্ষা অফিসের সংরক্ষিত তথ্য থেকে যাচাই করা হচ্ছে। আর যাদের সনদ এনটিআরসিএ থেকে দেয়া হয়েছে তাদের সনদ যাচাইয়ে এনটিআরসিএ কার্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে। যাচাই না করে কোনো শিক্ষক এমপিওভুক্তির আবেদন করতে পারবেন না। সনদ সঠিক না থাকলে এমপিওভুক্তি হবে না।
জানা গেছে, নতুন এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের পাঠদান, একাডেমিক স্বীকৃতি, এমপিও কোড ও অন্যান্য কাগজপত্র এবং ব্যক্তি এমপিওর ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারীদের সব পরীক্ষার সনদ-মার্কশিট, এনটিআরসিএর নিবন্ধন, এনটিআরসিএর সুপারিশ ও নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র মূল্য কপিসহ উপজেলা-থানা ও জেলা কমিটি সরেজমিনে যাচাই করবে। জেলা-উপজেলা ও থানা কমিটি শিক্ষকদের সনদ, মার্কশিট, নিবন্ধন-সুপারিশ ও নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রের মূল কপিসহ প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিনে যাচাই করবে। আর জেলা ও অঞ্চল পর্যায়ের কমিটি অনলাইনে আবেদনের স্তর যাচাই করবে। যাচাই শেষে তথ্য সঠিক হলে প্রতিষ্ঠান প্রধান অনলাইনে আবেদন করবেন। নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক অংশ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগের কাগজপত্র যাচাইয়ের দায়িত্ব উপজেলা বা থানা পর্যায়ের কমিটির। আর স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজ অংশ ও উচ্চমাধ্যমিক কলেজ ও স্নাতক কলেজের কাগজপত্র ও শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগের কাগজ যাচাইয়ে রয়েছে জেলা পর্যায়ের কমিটি।
গত ১৪ মার্চ ‘নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে জাল শিক্ষকের ছড়াছড়ি’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক আমাদের বার্তায়। তারপর নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের মধ্যে বহু জাল সনদধারী শিক্ষক শনাক্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছিলো বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জুলাই ২ হাজার ৭১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচিত করে তালিকা প্রকাশ করে সরকার। সে সময় এমপিওভুক্তির আবেদন করেও যেসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে পারেনি তাদের আপিলের সুযোগ দেয়া হয়েছিলো। আপিল করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে ২৫৫টিকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারি এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচন করা হয়। নতুন এমপিওভুক্ত এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিও কোড পেয়েছে।