নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে জাল শিক্ষকের ছড়াছড়ি - দৈনিকশিক্ষা

নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে জাল শিক্ষকের ছড়াছড়ি

রুম্মান তূর্য |

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালী মডেল কলেজ সম্প্রতি উচ্চমাধ্যমিক স্তুরে এমপিওভুক্ত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন উরমী বেগম। যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক পদে কর্মরত এ শিক্ষক এবার এমপিওভুক্ত হতে চাচ্ছেন। তবে, তার শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি জাল। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দাবি করলেও তার সনদ বা প্রত্যয়ন সঠিক নয়। তিনি এ কে এম আশরাফুজ্জামান নামে এক প্রার্থীর শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জাল করে এমপিওভুক্তির চেষ্টা করছেন।

একই প্রতিষ্ঠানের পৌরনীতি বিষয়ের প্রভাষক পদে কর্মরত মো. শামীমের শিক্ষক নিবন্ধন সনদটিও জাল। তিনি যে সনদটি ব্যবহার করে চাকরি করছেন তার প্রকৃত মালিক সাদিয়া আক্তার নামে এক প্রার্থী। কিন্ত সাদিয়া আক্তারের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জাল করে দিব্যি শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন শামীম। দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে।

শুধু এ দুই প্রতিষ্ঠানই নয়, সারাদেশে নতুন এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচিত প্রায় তিন হাজার প্রতিষ্ঠানে বহু জাল সনদধারী শিক্ষক শনাক্ত হচ্ছেন। তারা দীর্ঘদিন জাল সনদে এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকতা করছেন। কিন্তু এমপিওভুক্তির কাগজ যাচাই বাছাইয়ে অনেকের সনদ জাল বলে দেখা যাচ্ছে।  

২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জুলাই ২ হাজার ৭১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচিত করে তালিকা প্রকাশ করে সরকার। সে সময় এমপিওভুক্তির আবেদন করেও যেসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে পারেনি তাদের আপিলের সুযোগ দেয়া হয়েছিলো। আপিল করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে ২৫৫টিকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারি এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচন করা হয়। নতুন এমপিওভুক্ত এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। তাই নিয়ম অনুযায়ী চলছে তাদের সনদ যাচাই। 

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) সূত্র দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানায়, নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের মধ্যে বহু জাল সনদধারী শিক্ষক শনাক্ত হচ্ছেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা শিক্ষকদের সনদ যাচাইয়ে পাঠালে আমরা তাদের সনদ জাল বলে শনাক্ত করছি। তবে, কতজন শিক্ষকের সনদ জাল বলে শনাক্ত হয়েছে-এ বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য দিতে পারেনি সূত্র। 

জানা গেছে,  উদাখালী মডেল কলেজে কর্মরত প্রভাষক উরমী বেগম ও মো. শামীমের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ যাচাইয়ে গত ৫ মার্চ এনটিআরসিএ কার্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন গাইবান্ধার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোকসানা বেগম। এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ওই দুই প্রভাষকের শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ জাল বলে শনাক্ত হয়েছে। শিগগিরই যাচাই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। শুধু তারাই নন, নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বহু শিক্ষকের সনদ জাল পাওয়া যাচ্ছে।

বেশ কয়েকজন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের সনদ ও কাগজ যাচাই শুরু হয়েছে। এগুলো যাচাই করছে উপজেলা কমিটি। উপজেলা কমিটি, জেলা কমিটি এগুলোর অগ্রায়ণ যাচাই করবে। 

এ যাচাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রামের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামছুল আলম ও গাইবান্ধার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোকসানা বেগম গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বর্তমানে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জেলা শিক্ষা অফিস থেকে বিতরণ করা হয়। আগে এগুলো এনটিআরসিএ বিতরণ করতো। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে যেসব প্রার্থীর শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দেয়া হয়েছে তাদের তথ্য আমাদের কাছে আছে। সেগুলো আমরা আমাদের সংরক্ষিত তথ্য থেকে যাচাই করছি। আর যাদের সনদ এনটিআরসিএ থেকে দেয়া হয়েছে তাদের সনদ যাচাইয়ে এনটিআরসিএ কার্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে। যাচাই না করে কোনো শিক্ষক এমপিওভুক্তির আবেদন করতে পারবেন না। সনদ সঠিক না থাকলে এমপিওভুক্তি হবে না।  

শিক্ষক নিবন্ধন সনদ যাচাইয়ের দায়িত্বে আছেন এনটিআরসিএর পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন শাখার সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম। জানতে চাইলে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তিনি দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানেও অনেক জাল শিক্ষক শনাক্ত হচ্ছেন। তবে তারা এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না। যাচাইয়ে সনদ সঠিক না থাকলে এমপিও হবে না। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা আমাদের কাছে যেসব সনদ পাঠাচ্ছেন সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমরা যাচাই করে দিচ্ছি। যারা জাল সনদে কর্মরত আছেন তাদের নিয়োগ ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ বা তার আগে। 

তিনি আরো বলেন, নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা জল সনদে কর্মরত আছেন তারা নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন না। তাদের সনদ যাচাই হবেই। যাচাইয়ে তারা ধরা পড়বেন। শুনেছি যাচাইয়ের সময়ই অনেকে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে এনটিআরসিএ জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। যারা জাল সনদ নিয়ে চাকরি করছেন তাদের শিক্ষকতার সুযোগ থাকবে না। 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032598972320557