নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতির বিষয়ে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যে অভিজ্ঞতা হবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করতে বলেছেন নতুন শিক্ষামন্ত্রী। পাশাপাশি তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করতে বলেছেন। সব কিছু বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য মূল্যায়ন সহজবোধ্য করার বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সুপারিশ করতে বলেছেন এনসিটিবিকে। এসব নির্দেশনা গত ২৫ জানুয়ারির। তার আগে মন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর গত ১৪ জানুয়ারি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে। ধারাবাহিক মূল্যায়নের কাজগুলোও শুরু হয়েছে। কাজ করতে গিয়ে বোঝা যাবে, শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা যেটা নির্ধারণ করেছেন, সেখানে কোনো সমস্যা আছে কিনা। এটি স্থায়ী কোনো বিষয় নয়, একদম ‘রিজিড’ হয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে---তা কিন্তু নয়। প্রয়োজন সাপেক্ষে পরিবর্তন আনা যেতে পারে।
নতুন কারিকুলাম প্রবর্তনের পর অন্য সব বিষয় নিয়ে যতো না আলোচনা হয়েছে তার চেয়ে ঢের বেশি আলোচনা হয়েছে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা, পারদর্শিতা ও অগ্রগতি মূল্যায়ন নিয়ে। যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বা দিয়েছেন তারা সবাই কিন্তু ওই একটি বিষয় নিয়েই ব্যস্ত। শিক্ষাদান ব্যবস্থাপনায় মূল্যায়ন একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু সেটি সবার শেষে। আমরা কি উপায়ে, কতো ফলপ্রসূভাবে একজন শিক্ষার্থীকে নতুন একটি বিষয়ে ধারণা দেবো, জানাবো, শেখাবো এবং সেটি আসলেই তিনি কতোটা শিখতে পেরেছেন তার মূল্যায়ন প্রয়োজন। আমরা উপরোক্ত সব স্টেপগুলোকে উপেক্ষা করে শুধু মূল্যায়ন নিয়েই কথা বলছি। আমাদের শিক্ষার্থীদের মেধা আছে, যোগ্যতা আছে, কিন্তু তরুণ বয়সের শিক্ষার্থীদের কিভাবে কোন বিষয় পড়াতে হবে সেটি নিয়ে, চিন্তা, গবেষণা, কথা-বার্তা প্রশিক্ষণ কোনটিই নেই। ধরে নেয়া হচ্ছে, সব শিক্ষার্থী ( এক ক্লাসে ৭০ থেকে ১৫০ জন) একজন শিক্ষকের সব কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার জন্য বসে আছেন এবং অবশ্যই শুনবেন। আসলে শুনবেন না, তারা তাদের বয়সগত এবং স্বভাবজাত দুষ্টুমি করতেই থাকবেন তা আপনি যতোই মূল্যবান কিছু পড়াতে যাননা কেনো। এ বিষয়টি পুরোপুটি উপেক্ষিত থেকেছে পুরো বিষয়ে। তারপর তো রয়েছে অগ্রগামী, মধ্যগামী, পিছিয়ে পড়া, মারাত্মকভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের কথা। ষষ্ঠ শ্রেণিতে এমন হাজার হাজার থেকে লাখ লাখ শিক্ষার্থী আছেন যারা বাংলা দেখে পড়তে পারেন না, ইংরেজির অক্ষর চেনেন না। তাদের জন্য একই ক্লাসে কি করা, কিভাবে করা- এসব নিয়ে কিন্তু কোনো কথা নেই, কথা হচেছ তাদের দক্ষতা কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে।
শিক্ষার্থীদের কোনো বিষয় আয়ত্ত করতে অবিরত অনুশীলন প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা যাতে গুছিয়ে কথা বলতে পারেন সেজন্য আগেও ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত ডিবেট, উপস্থিত বক্তৃতা, বই পর্যালোচনা ইত্যাদি ছিলো। এখন সেগুলোকে কারিকুলামে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে, এটি ভাল কথা। কিন্তু সেটির মূল্যায়ন তো শুধু শিক্ষকের ব্যক্তিগত মতামতের উপর নির্ভর করে হবে না। কারণ, সুবিধাবঞ্চিত এলাকার বিদ্যালয় ও সুবিধাপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এ ধরনের মূল্যায়ন এক হবে না। গ্রামের, শহরের ও রাজধানীর বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মূল্যায়ন এক হবে না।
আমরা দেখলাম, মূল্যায়নের জন্য চালু করা অ্যাপ বিগড়ে গেলো। শিক্ষকদের বলা হলো, সবকিছু হাতে করতে। ধারাবাহিক মূল্যায়ন যেমন ফরমেটিক অ্যাসেসমেন্ট তথা সঠিক অ্যাসেসমেন্টের কথা বলে তেমনি এ ধরনের মূল্যায়ন পুরোটাই সাবজেকটিভ অর্থাৎ শিক্ষকের মতামত, শিক্ষকের ধারণার ওপর নির্ভরশীল যা কোনোভাবেই হওয়া উচিত নয়। যদিও শিক্ষকরা সব কিছু ভালো বলছেন, কিন্তু বিদ্যালয়ে গিয়ে কিংবা ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষার্থীদ শিক্ষকদের কথা বলে শোনা যাচ্ছে উল্টো কথা।
২০২৩ পুরোটাই গেলো, নতুন কারিকুলামের শিক্ষার্থীরা একসাথে পাঁচটি লাইনও লেখেনটি বাংলায় কিংবা ইংরেজিতে। একটি গণিতেরও সমাধান করেননি, সমাজবিজ্ঞান কিংবা বিজ্ঞানের কোনো বিষয় পড়েননি, কারণ লিখিত কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না। কিন্তু, শিক্ষকরা তো ঠিকই ত্রিভুজ, বৃত্ত বা চতুর্ভূজ দিয়েছেন। আর কিছু কিছু বিদ্যালয়ে কিছু প্রজেক্ট ওয়ার্ক হয়েছে। এতোবড় একটি বিষয়কে আমরা কিভাবে এড়িয়ে যাই? কিভাবে তারা ভাষা শিখবেন, কিভাবে তারা অন্য বিষয় লিখে শিক্ষকদের জানাবেন। সবাই অভিজ্ঞাতভিত্তিক শিখনের কথা বলছেন। ষষ্ঠ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের কিছু অনুষ্ঠান, আবহাওয়া সম্পর্কে কিছুটা হয়তো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। কিন্তু রসায়ন, পদার্থ, ইংরেজি, বাংলা, ভূগোল ইত্যাদি সম্পর্কে তিনি কতোটুকু অভিজ্ঞতা অর্জন করেন যে তার উপর ভিত্তি করে ক্লাস হবে, আলোচনা হবে, সেই জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করবে? অর্থের বিনিময়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন কে ঠেকাবে? অর্থের বিনিময়ে বিশেষ কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার আশংকাও থাকবে এ শিক্ষাপদ্ধতিতে।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।