নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষক প্রশিক্ষণের খরচের হিসাব দিচ্ছেন না শিক্ষা কর্মকর্তারা - দৈনিকশিক্ষা

নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষক প্রশিক্ষণের খরচের হিসাব দিচ্ছেন না শিক্ষা কর্মকর্তারা

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের দেয়া প্রশিক্ষণের ব্যয়ের হিসেব দিচ্ছেন না শিক্ষা কর্মকর্তাদের অনেকে। সারাদেশের ৬০ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমনটাই অভিযোগ তুলেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন বাস্তবায়নাধীন ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিম। এ স্কিমের আওতায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিলো। স্কিম কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রশিক্ষণ ও ব্যয় বিবরণী পাঠানোর নির্ধারিত সময় শেষ হলেও তা পাঠাতে গড়িমসি করছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। ফলে নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ ব্যয়ের আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারেনি স্কিম কর্তৃপক্ষ।

এ পরিস্থিতিতে ব্যয়বিবরণী বা প্রশিক্ষণ খরচের হিসেব না পাঠানো শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে সুপারিশ করেছে স্কিম। এদিকে শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, নানা কাজের ব্যস্ততা, শিক্ষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্যে জটিলতা, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা পাঠাতে দেরি করায় তারা ব্যয়বিবরণী পাঠাতে পারছেন না। 

স্কিম সূত্রে জানা গেছে, ৮ম ও ৯ম শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক শ্রেণি শিক্ষকদের সাত দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ ৪৭৪টি উপজেলায় এক যোগে গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে। প্রশিক্ষণ শেষে ছয় কার্যদিবসের মধ্যে ব্যয় বিবরণীর কপি স্কিমে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো শিক্ষা কর্মকর্তাদের। কিন্তু তা পাওয়া যায়নি। পরে গত ২১ জানুয়ারি জুম প্লাটফর্মে সভা করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের বলা হয়েছিলো জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা মাধ্যমে ব্যয় বিবরণী স্কিমে পাঠাতে। তবে ৬০টি ভেন্যু থেকে ব্যয় বিবরণীর তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে স্কিমের পক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আর্থিক প্রতিবেদন পাঠানো সম্ভব হয়নি এবং স্কিমের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিচালনা ও বাস্তবায়নে অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে।
জানতে চাইলে স্কিম পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণভাতা বা সম্মানী হাতে হাতে শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গত বছরের শেষ দিকে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ভাতা বিএফটিএনের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। টাকা সরসারি শিক্ষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে। এদিকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ হলেও অনেক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ব্যয় বিবরণী পাঠননি। ফলে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে বলেছি ব্যয়বিরবণী পাঠাতে ওই কর্মকর্তাদের তাগিদ দিতে। 

তিনি আরো বলেন, আমরা বেশ কয়েকজন শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি নানা জটিলতায় তারা এটি করতে পারছেন না। অনেক শিক্ষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ভুল ছিলো সেগুলো ফেরত এসেছে। যা আবার পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংক থেকে তথ্য না পাওয়াসহ নানা জটিলতায় তারা এটি পাঠাচ্ছেন না। তবে জটিলতা কি যৌক্তিক কি-না সেটি যাচাইয়ের সুযোগ নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, প্রশিক্ষণের ব্যয়বিবরণী পাঠানোর সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সে সময় অনেক আগেই শেষ। এখনো তারা পাঠাচ্ছেন না। আমরা তাদের কাছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারবো কেনো এটি পাঠানো যাচ্ছে না। তারা যদি ব্যয়বিবরণী না পাঠান ও সে বিষয়ে যৌক্তিক কারণ উপস্থাপন করতে পারেন তাহলে তা বিবেচনা করা হবে। আর যদি তেমন কারণ উপস্থাপন না করেন সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তাদের অনেকে বলছেন ব্যাংকগুলো সহযোগিতা করতে গড়িমসি করা হচ্ছে। আমদের দেয়া চিঠিটি তারা রেফারেন্স হিসেবে দিয়ে ব্যাংক থেকে তথ্য নিতে পারবেন। এটিও চিঠি দেয়ার একটি কারণ।  

প্রশিক্ষণ পাওয়া শিক্ষকদের অনেকে জানিয়েছেন তারা এখনো প্রশিক্ষণ ভাতা পাননি। এ বিষয়ে স্কিম পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, অ্যাকাউন্ট নম্বরে ভুলসহ নানা জটিলতায় টাকা পাঠানো যায়নি। আসলে উপজেলা পর্যায়ের ব্যাংকগুলোর অবস্থা ঢাকার ব্যাংকগুলোর মতো না। তবে সব শিক্ষক টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পেয়ে যাবেন। 

জানা গেছে, ঢাকার সাভার, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, গোপালগঞ্জ সদর ও টুঙ্গিপাড়া, নারায়ণগঞ্জ সদর, নরসিংদীর মনোহরদী, লক্ষীপুর কমলনগর, হবিগঞ্জের বানিয়াচং, সিরাজগঞ্জের চৌহালি ও দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, বায়েজিদ, বোয়ালখালী, কর্ণফুলী, কোতয়ালী, লোহাগাড়া, মিরসরাই, পাহাড়তলী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া, পাঁচলাইশ, সাতকানিয়া, ঝিনাইদহের শৈকুপা, নড়াইলের লোহাগড়া, কুষ্টিয়া সদর ও দৌলতপুর, সাতক্ষীরার দেবহাটা, সদর, কালীগঞ্জ, যশোরের মনিরামপুর ও বাঘারপাড়া, খুলনার ডুমুরিয়া, বরিশালের আগৈলঝাড়া, বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, বানারীপাড়া, গৌরনদী, মেহেদিগঞ্জ, মুলাদী, হিজলা ও উজিরপুর, বরগুনার তালতলী, ভোলার সদর, দৌলতখান, তজুমদ্দিন ও লালমোহন, ঝালকাঠির নলছিটি ও রাজাপুর, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী ও বাসাইল, নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ ও পূর্বধলা, ময়মনহিংহের গফরগাঁও ও সদর, জামালপুরের বকশীগঞ্জ, সরিষাবাড়ী দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দর ও জামালপুর সদরের ব্যয় বিবরণীর তথ্য না পাঠানোর অফিযোগ করা হয়েছে স্কিমের পক্ষ থেকে।

শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, নানা জটিলতায় তারা ব্যয়বিরবণী পাঠাতে পারছেন না। শিক্ষকদের দেয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ভুল তথ্যের কারণ টাকা পাঠাতে সময় নিয়েছে ব্যাংকগুলো। শিক্ষকরাও আলাদা আলাদা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছিলেন। ফলে টাকা পাঠাতে গিয়ে তথ্য সংশোধন করা হয়েছে। এসব কারণে টাকা পাঠানো যায়নি। এরপর নির্বাচন, এসএসসি পরীক্ষাসহ নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পরায় তারা ব্যয়বিবরণী পাঠাতে পারেননি। তবে ব্যয় বিবরণী পাঠানো উদ্যোগ ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে। 

জানতে চাইলে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম তালুকদার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, শিক্ষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও রাউটিং নম্বর ইত্যাদিতে ভুল ছিলো। সেগুলো সংশোধন করতে হয়েছে। আবার শিক্ষকরা একেকজন একেক ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে টাকা পাঠাতে দেরি করেছে ব্যাংকগুলো। আবার টাকা ছাড় হতেও দেরি হয়েছে। টাকা ছাড়ের পর সাত-আটশ শিক্ষকের তালিকা ও বিল করে তা জমা দেয়া হলে সেটিও সংশোধন করে দিতে বলেছে ব্যাংকগুলো। উপজেলা পর্যায়ের ব্যাংকগুলোও বিএফটিএনে কাজ করতে জটিলতায় পড়েছে। তবে আমরা কাজ ইতোমধ্যে শেষ করে ইমেইলে ব্যয় বিবরণী পাঠিয়েছি। রোববার ডাক যোগে হার্ড কপি পাঠাবো।     

আবার অনেকে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে ব্যয় বিবরণী পাঠালেও তা এখনো পৌঁছায়নি। তাই কেউ কেউ বলছেন, তারা ব্যয়বিবরণী পাঠালেও তাদের নাম না পাঠানো শিক্ষা কর্মকর্তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ঝালকাঠির নলছিটির উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাসার তালুকদার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমি ব্যয় বিবরণী পাঠিয়েছি। রেজিস্ট্রার্ড ডাক যোগে তা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারকে জানানো হয়েছে আমি তা পাঠাইনি। আমি ব্যয়বিবরণী পাঠানোর রিসিট নিয়ে ঢাকা যাচ্ছি, বিষয়টি তাদের বুঝিয়ে বলতে। 

 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত - dainik shiksha প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি - dainik shiksha আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির - dainik shiksha আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি - dainik shiksha পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049328804016113