নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষার পরিবর্তে মূল্যায়ন উৎসব - দৈনিকশিক্ষা

নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষার পরিবর্তে মূল্যায়ন উৎসব

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিদ্যালয়ে ঢুকতেই দেখা গেল বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাক পরা কয়েকজন কিশোর ঝাড়ু হাতে মাঠের একপাশ পরিষ্কার করছে। আরেক দল কিশোর তখন বিদ্যালয়ের বারান্দার ওপরের ও নিচের অংশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত। তারা পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। দোতলায় গিয়ে দেখা গেল কয়েকজন শিক্ষার্থীর একটি ল্যাপটপ ঘিরে ব্যস্ততা। আরও কয়েকটি উপদল তখন অন্য কাজে ব্যস্ত। এই শিক্ষার্থীরা পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে। বৃহস্পতিবার (২২ ‍জুন) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোশতাক আহমেদ। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের (আগে নাম ছিল অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা) অংশ হিসেবে গত রোববার এমন আয়োজন দেখা গেল রাজধানীর সেগুনবাগিচা হাইস্কুলে। সেদিন ছিল ষষ্ঠ শ্রেণির ‘জীবন ও জীবিকা’ এবং সপ্তম শ্রেণির ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি’ বিষয়ের মূল্যায়ন কার্যক্রম।

নতুন ধরনের এই মূল্যায়ন কার্যক্রম শুধু সেগুনবাগিচা হাইস্কুলেই নয়, সারা দেশের বিদ্যালয়গুলোতেই হচ্ছে বা হয়েছে। এত দিন প্রথাগত নিয়মে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা হলেও নতুন শিক্ষাক্রমে নতুন নিয়মে তা হচ্ছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘মূল্যায়ন উৎসব’।

নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বড় অংশ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে (শিখনকালীন)। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পুরোটাই মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন ধরনের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ে কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে, মানে পরীক্ষার ভিত্তিতে।

এ বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আগামী বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে তা শুরু হবে। এরপর ২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে। উচ্চমাধ্যমিকে একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে আগামী বছর থেকে শিক্ষাপদ্ধতিতে বড় একটি পরিবর্তন আসছে। তখন নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার মতো বিভাগ বিভাজন থাকবে না। সব শিক্ষার্থীকেই মাধ্যমিক পর্যন্ত অভিন্ন বিষয় পড়তে হবে। বিভাগ বিভাজন হবে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে। এ বছর পর্যন্ত নবম শ্রেণিতে গিয়ে ঠিক হয়েছে কারা বিজ্ঞানে, মানবিকে বা ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে।

হাতে-কলমে শিক্ষায় জোর, লিখতেও হচ্ছে

নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথাগত পরীক্ষা কমে যাচ্ছে। জিপিএর পরিবর্তে ফলাফল হবে তিন স্তরে। এর মধ্যে প্রথম স্তরকে বলা হবে পারদর্শিতার প্রারম্ভিক স্তর। দ্বিতীয় স্তরকে বলা হবে অন্তর্বর্তী বা মাধ্যমিক স্তর। আর সর্বশেষ, অর্থাৎ সবচেয়ে ভালো স্তরটিকে বলা হবে পারদর্শী স্তর। ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন কার্যক্রমে তিন ধরনের চিহ্ন দিয়ে এগুলোকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা হাইস্কুলে গেলে একজন শিক্ষক জানালেন, মূল্যায়ন কার্যক্রমে অংশ নিলেই বর্গাকৃতির চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আর বৃত্ত দিয়ে বোঝানো হচ্ছে একজন শিক্ষার্থী শিখেছে। আর ত্রিভুজ দিয়ে বোঝানো হচ্ছে সর্বোচ্চ ভালো, মানে ওই শিক্ষার্থীরা সব কাজে পারদর্শী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামষ্টিক এই মূল্যায়ন শুধু কাগজ-কলমনির্ভর পরীক্ষা হচ্ছে না। অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপন, যোগাযোগ, হাতে-কলমের কাজ ইত্যাদি বহুমুখী পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। 

তেমনটাই দেখা গেল সেগুনবাগিচা হাইস্কুলে। ‘জীবন ও জীবিকা’ বিষয়ে মূল্যায়নে ঝাড়ু হাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে অংশ নিয়েছিল ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফায়েত দেওয়ান। সে জানাল, নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে অংশ নিয়েছে। এর মাধ্যমে তাঁর যে অভিজ্ঞতা হচ্ছে, সেটি ভবিষ্যতেও কাজে দেবে। এমন ব্যবস্থায় সে খুশি। রায়হান হোসেন নামের আরেক শিক্ষার্থীও তার ভালো লাগার কথা জানাল।

‘জীবন-জীবিকা’ বিষয়ের শিক্ষক জিশান আহমেদ। তিনি জানালেন, শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজই নয়, এসব কাজের ওপর শিক্ষার্থীদের ১০০ থেকে ১৫০ শব্দের অভিজ্ঞতাও লিখতে হচ্ছে, যেটি মূল্যায়নের অংশ।

সেদিনই (গত রোববার) দোতলার একটি বড় কক্ষে শিক্ষার্থীদের এই অভিজ্ঞতা লিখতে হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা বাড়িতে পূর্বনির্ধারিত যেসব কাজ (পারিবারিক কাজ) করেছিল, সেগুলোরও ছবি তুলে বড় কাগজের ওপর লাগিয়ে শিক্ষককে দেখাতে হয়েছে। যেমন মো. তৌহিদ নামের এক শিক্ষার্থী বাড়িতে বিছানা ও ঘর ঝাড়ু দেওয়া, থালা ধোয়ার কাজের ছবি তুলে সেগুলো কাগজের ওপর লাগিয়ে নিয়ে জমা দিয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন কার্যক্রমে পরিবারেরও অংশ রয়েছে। এগুলো মূলত তারই উদাহরণ। এ ছাড়া সমাজ সম্পর্কেও জানতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

নতুন মূল্যায়নে চ্যালেঞ্জও আছে

নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকাটিই বড়। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষকদের বড় অংশই কোচিং-প্রাইভেটের দিকে ঝোঁক আছেন। কোচিং-প্রাইভেট বহাল রেখে সঠিকভাবে মূল্যায়ন কঠিন হবে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণেরও ঘাটতি আছে। ধারাবাহিক মূল্যায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের রেকর্ড সংরক্ষণ করা অপরিহার্য। সারা দেশের সব বিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে কতটা দক্ষ, সে বিষয়ে প্রশ্ন আছে।

এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে উপকরণের বেশি প্রয়োজন হচ্ছে। এতে খরচও বেশি হবে। এ বিষয়ে সরকারকে বাড়তি নজর দিতে হবে। যেমন গত রোববার সেগুনবাগিচা হাইস্কুলে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ের মূল্যায়ন কার্যক্রমে একটি ল্যাপটপে কয়েকজন শিক্ষার্থী সুযোগ পেয়েছিল। এ জন্য বিকল্প হিসেবে অনেকেই পোস্টারে কাজটি করেছে। যা ডিজিটাল প্রযুক্তির ধারণার সঙ্গে কিছুটা বেমানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একটি বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানালেন, তাঁর অভিজ্ঞতা হলো এখনো ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী নতুন ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়নি। তাই এ বিষয়ে জোর দিতে হবে। এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষা বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নজরদারি কার্যক্রম জোরদার করা দরকার, বর্তমানে এর ঘাটতি আছে।

জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এম তারিক আহসান বলেন, ষাণ্মাসিক মূল্যায়নে যে চ্যালেঞ্জগুলো আসছে, সেগুলো সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষকেরা পরস্পরের সঙ্গে মতবিনিময় করেও কিছু বিষয়ে সমাধান করতে পারবেন। আর এবার অনেকেই অতি উৎসাহী হয়ে বেশি উপকরণ ব্যবহার করেছে, যা আসলে প্রয়োজন নেই। আর সার্বিক নজরদারি কার্যক্রমও শক্তিশালী করতে হবে।

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.012513160705566