নবমের তিন শতাংশ বই ছাপানো হয়েছে - দৈনিকশিক্ষা

নবমের তিন শতাংশ বই ছাপানো হয়েছে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে সময় বাকি মাত্র এক মাস। নিয়মানুযায়ী এখন দেশজুড়ে বিনামূল্যের পাঠ্যবই পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নবম শ্রেণির মাত্র ৩ শতাংশ এবং অষ্টম শ্রেণির ২০ শতাংশ বই জেলা ও উপজেলায় পৌঁছেছে। এর ফলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির আগে আসন্ন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীরা পাবে না। তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, পাঠ্যবই নিয়ে তারা কোনো শঙ্কা দেখছে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই পেয়ে যাবে। অবশ্য ‘নির্ধারিত সময়’ কখন তারা সেটি বলেননি। শনিবার (২ ডিসেম্বর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আসন্ন শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই দেয়া হবে। এজন্য যথাসময়ে পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি ও

কাগজ কেনার অনুমোদন দেয়ার কথা। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুটোই দেরি করে দিয়েছে। এর ফলে মাত্র গত সপ্তাহে এই দুই শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপতে দেয়া হয়েছে। আবার ছাপতে দেয়ার পরও ছাপাখানা থেকে অষ্টমের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই তুলে এনে শিক্ষা উপমন্ত্রীকে দেখাতে হয়েছে। কারণ ছাপাখানায় যাওয়ার আগে উপমন্ত্রী বই দেখেননি। তিনি বইয়ের অনেক জায়গায় সংশোধন করে দিয়েছেন। এরপর গত সপ্তাহে ফের ছাপতে দেয়া হয়েছে। এদিকে টাকার অভাবে নবমের পাঠ্যবই ছাপা বন্ধ ছিল। গত বৃহস্পতিবার সকালে টাকা ছাড় হয়েছে। এখন এই শ্রেণির বই ছাপা শুরু হবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৯১ শতাংশ, সপ্তম শ্রেণিতে ৭৮ শতাংশ বই ছাপা শেষ হয়েছে। প্রাথমিক শ্রেণির অধিকাংশ বইই ছাপা ও সরাবরাহ প্রায় শেষ। জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, পাঠ্যবই নির্ধারিত সময়েই চলে যাবে। এ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। কিন্তু বছর শেষ হতে আর এক মাস বাকি, এই সময়ের মধ্যে সব বই ছাপা শেষ হবে কী করে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বলেছি তো, পাঠ্যবই নিয়ে চিন্তা নেই। চিন্তা অন্য জায়গায়। সেই অন্য জায়গা কোনটি তা অবশ্য বলেননি তিনি। প্রেসে দেয়ার পর তুলে এনে শিক্ষা উপমন্ত্রীর পাঠ্যবই সংশোধন সম্পর্কে তিনি বলেন, স্যার এটি করেছেন। আর তিনি দেখায় ভালো হয়েছে বলে জানান চেয়ারম্যান।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে পাঠদান শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রমে। এই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ কোটির বেশি বই ছাপাতে হবে। এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের কয়েকটি বই ছাপানোর কাজ শুরু হলেও নবম শ্রেণির প্রায় ৯৫ ভাগ বই মুদ্রণের কাজ শুরুই হয়নি। এছাড়া নবম শ্রেণির বইয়ের ফর্মা অনেক বড়। মাধ্যমিকের তিন শ্রেণির মোট বইয়ের প্রায় সমান নবম শ্রেণির বই। তাই এই বই ছাপানো অনেক সময়ের ব্যাপার। এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপাতে হবে প্রায় ৩১ কোটি পাঠ্যবই। এখনো পর্যন্ত সব শ্রেণির বইয়ের মুদ্রণচুক্তি সম্পন্ন করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

এদিকে প্রাথমিকের মোট বইয়ের ১০ শতাংশ বই ছাপার কাজ বাকি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে ১২ কোটির মতো বই ছাপানো বাকি রয়েছে। ফলে নতুন বছরের শুরুতে নবম শ্রেণিসহ বেশ কয়েকটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

যদিও এনসিটিবি বলছে, সপ্তম থেকে নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইটিও ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। অষ্টম ও নবম শ্রেণির বিজ্ঞানের দুটি করে বই ছাপানো বাকি। সেজন্য সংখ্যাটা বেশি মনে হচ্ছে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই সব বই ছাপানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। পহেলা জানুয়ারি সব শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে। আর ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে থাকবে। এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রায় ৩১ কোটি বই ছাপার কাজ করছে এনসিটিবি। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের মোট বই ১৮ কোটি ৬১ লাখ ১ হাজার ২০৬টি। আর প্রাথমিক স্তরের মোট বই প্রায় ৯ কোটি ৭৫ লাখ। প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপা হচ্ছে ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৪২৩ কপি বই। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা ৩ কোটি ৩৬ লাখ ১ হাজার ২৭৪টি। প্রাক-প্রাথমিকের জন্য ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮ কপি বই ছাপা হবে। এছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩০৮ কপি, সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার কপি, অষ্টম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১ কপি এবং নবম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩ কপি বই ছাপা হচ্ছে।

মুদ্রণ সমিতির সূত্রে জানা গেছে, নতুন কারিকুলামের ২য় ও ৩য় শ্রেণির প্রায় দেড় কোটি বই ছাপানো বাকি রয়েছে। সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পাণ্ডুলিপি এখনো মুদ্রণে যায়নি। অষ্টম শ্রেণির ১৪টি বইয়ের মধ্যে ১১টি ডামি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সপ্তম ও অষ্টম এবং নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানসহ ৭টি বইয়ের মোট ৪ কোটি বই ছাপানোর অনুমোদন হয়নি। এছাড়া নবম শ্রেণির ৯৫ ভাগ বই এখনো মুদ্রণে যায়নি। অষ্টম ও নবম মিলে সাড়ে ৫ কোটি বই এখনো ছাপানো বাকি রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১১ কোটি বই ছাপানো বাকি। যা মোট বইয়ের ৪০ শতাংশ। এনসিটিবির আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, গত শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের বই ছাপানো নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছিল। সেজন্য এবার প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ আগে শুরু হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক মিলে এবার প্রায় সাড়ে ৯ কোটি বই ছাপানো হচ্ছে। যার মধ্যে অধিকাংশ ছাপানোর কাজ শেষ। অবশিষ্ট কিছু বই ছাপা শেষ করে সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলায় পাঠানো হবে। ওই সূত্র আরো জানায়, প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজ আগে শুরু করায় মাধ্যমিকের বই ছাপাতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ছাপানোর পাশাপাশি অষ্টম শ্রেণির বই ছাপানোর কাজ শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে নবম শ্রেণির বই ছাপানোর কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে নতুন শিক্ষাক্রম হওয়ায় সাবধানতার সঙ্গে বই ছাপানো হচ্ছে। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইটি দফায় দফায় সংশোধন করা হয়েছে। এজন্য পাণ্ডুলিপি তৈরি করতে একটু বেশি সময় লেগেছে।

ছাপাখানার মালিক ও কর্মীরা জানান, বই ছাপার ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ৫০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে চুক্তি করে এনসিটিবি। অথচ এ বছরের বাকি আছে মাত্র এক মাস। এ সময়ের মধ্যে কোনো ছাপাখানাই এত বই ছাপিয়ে শেষ করতে পারবে না। টেন্ডার, কাজের চুক্তি, বিল পরিশোধ যথাসময়ে না করায় বই ছাপা নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থায় পড়েছে এনসিটিবি।

পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ - dainik shiksha পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম - dainik shiksha ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে - dainik shiksha আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে - dainik shiksha ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি - dainik shiksha কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030829906463623