দেশের ১০৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৭১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী অধ্যাপক নেই। শুধুমাত্র একজন নারী অধ্যাপক আছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৮টি। এ ছাড়া অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের সংখ্যাও কম। রাজধানীর আশুলিয়ায় সুবিশাল ক্যাম্পাস ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির। স্নাতক পর্যায়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত আসন সংখ্যা ৬ হাজার ৫১০ জন। কিন্তু নির্ধারিত আসনের বাইরেও এখানে পড়ছে ৯৬২ জন অতিরিক্ত শিক্ষার্থী। আশ্চর্যের বিষয় এখানে একজনও নারী অধ্যাপক নেই।
ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, দশের বেশি নারী অধ্যাপক আছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা মাত্র দুইটি। সবচেয়ে বেশি নারী অধ্যাপক রয়েছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের সংখ্যা ৫২ জন। এরপরেই রয়েছে ব্র্যক বিশ্ববিদ্যালয়, এই প্রতিষ্ঠানে ১৫ জন অধ্যাপক কর্মরত আছেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী অধ্যাপকের সংখ্যা মাত্র ৬ জন। এ ছাড়া আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে ৫ জন, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ৪ জন রয়েছে। ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ৪, এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে ৩, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ৪ নারী অধ্যাপক আছেন। এ ছাড়াও ইউআইইউতে ৩, উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে ৩, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসে ৬, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সে ৬ জন রয়েছেন।
রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট নারী শিক্ষকের সংখ্যা ৭ জন। এরমধ্যে ৫ জন প্রভাষক, একজন সহযোগী ও একজন সহকারী অধ্যাপক রয়েছেন। তবে পূর্ণকালীন বা খন্ডকালীন হিসেবে কোনো নারী অধ্যাপক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নেই। বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আরও খারাপ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ২ জন নারী প্রভাষক কর্মরত আছেন। এর বাইরে কোনো অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক নেই। ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটিতে নারী শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ৩ জন। ২ জন প্রভাষক ও ১ জন সহকারী অধ্যাপক থাকলেও সহযোগী ও পূর্ণ অধ্যাপক নেই। টাইমস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশেও রয়েছেন মাত্র ৩ নারী শিক্ষক। আনোয়ার খান মডার্ন ইউনিভার্সিটিতে মোট ৮ নারী শিক্ষক রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রভাষকই ৭ জন। একজন সহকারী অধ্যাপক। ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ১৩, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ৬, দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটিতে ৮, গ্লোবাল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ৭ ও এসপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে মাত্র ৪ জন নারী শিক্ষক রয়েছেন।
অন্যদিকে দেশের প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে স্নাতক পর্যায়ে ইউজিসির আসন সংখ্যা ১৪৩৫। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে কতজন পড়ছেন তা প্রতিবেদনে দেওয়া হয়নি। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৮৮০ আসন থাকলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন প্রায় চারগুণ শিক্ষার্থী। এর বিপরীতে ৫২ জন নারী অধ্যাপকের পাশাপাশি ৪ নারী সহযোগী অধ্যাপক, ১০ সহকারী অধ্যাপক ও ৫৮ জন নারী প্রভাষক কর্মরত আছেন। এর বাইরে খ-কালীন হিসেবে আরও রয়েছেন ৮ অধ্যাপক, ২ সহযোগী অধ্যাপক, ১২ সহকারী অধ্যাপক ও ৪৮ প্রভাষক।
আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে ৫ নারী অধ্যাপকের সঙ্গে ৯ সহযোগী অধ্যাপক, ৬০ সহকারী অধ্যাপক ও ৫৮ প্রভাষক আছেন। খ-কালীন হিসেবে অধ্যাপক আছেন মাত্র ১ জন। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে একজন অধ্যাপক না থাকলেও ১১ জন নারী সহযোগী অধ্যাপক, ৪৬ সহকারী অধ্যাপক ও ১৬৩ জন প্রভাষক রয়েছেন। অন্যদিকে খন্ডকালীন হিসেবে কোনো নারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক কর্মরত নেই।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩ নারী সহযোগী অধ্যাপক, ২৯ নারী সহকারী অধ্যাপক ও ২০৮ জন নারী প্রভাষক রয়েছেন। খ-কালীন হিসেবে ৭ অধ্যাপক ও ৭ সহযোগী অধ্যাপক ও ৭ জন সহকারী অধ্যাপক আছেন। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩৯২ জন কর্মকর্তা ও ৫৯ জন কর্মচারী রয়েছেন। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ৩ জন নারী অধ্যাপকের সঙ্গে ৪ নারী সহযোগী অধ্যাপক, ২৩ নারী সহকারী অধ্যাপক ও ৩৭ নারী প্রভাষক আছেন। খ-কালীন হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একজনও অধ্যাপক নেই। সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক আছেন মাত্র একজন করে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, এমন পরিসংখ্যান শুনে মনে হচ্ছে এখানে নারীরা শিক্ষকতা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। অথবা তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়াতে জটিলতা রয়েছে। মূলত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ইনভেস্ট করেন, বা যারা ট্রাস্ট্রি তাদের দিকে দেখলেও নারী খুঁজে পাওয়া যাবে না।