নার্সিং লাইসেন্সিং পরীক্ষায় ৮০ ভাগই ফেল - দৈনিকশিক্ষা

নার্সিং লাইসেন্সিং পরীক্ষায় ৮০ ভাগই ফেল

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি এবং সমমানের ডিগ্রি সম্পন্নকারীদের পেশাগত জীবনে প্রবেশের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হয়। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের অধীনে এ নিবন্ধন নিতে হয়। এজন্য আগ্রহী প্রত্যেককে কাউন্সিল কর্তৃক আয়োজিত কম্প্রিহেনসিভ  (লাইসেন্সিং) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। তবে গত ২৯ সেপ্টেম্বরের লাইসেন্সিং পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৮০ শতাংশই অকৃতকার্য হয়েছে। যদিও ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় এ হার ছিল মাত্র ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এবার ফল বিপর্যয়ের জন্য প্রশ্নের ধরন পরিবর্তনকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত লাইসেন্সিং পরীক্ষায় মোট ৩ হাজার ২৫৬ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। এর মধ্যে পাস করেছেন মাত্র ৬৭৪ জন। পাসের হার ২০ দশমিক ৭০ শতাংশ। যদিও বিগত পরীক্ষায়ও এ হার ছিল ৮৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। এর আগে মার্চে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় মোট ১১ হাজার ৯০৪ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। এর মধ্যে পাস করেছিলেন ১০ হাজার ৩৯৪ জন। 

সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত লাইসেন্সিং পরীক্ষায় বিএসসি ইন নার্সিংয়ে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৬৬৯ জন। পাস করেন ৪২০ জন। ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারিতে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৭৯২ জন। পাস করেন ১৫৮ জন। ডিপ্লোমা ইন পেশেন্ট কেয়ারে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ হাজার ৭৬৫ জন। পাস করেন ৯৬ জন। এছাড়া ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারিতে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩০ জন। তবে এর মধ্যে কেউ উত্তীর্ণ হননি। 

এর আগে গত মার্চে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় বিএসসি ইন নার্সিংয়ে পরীক্ষার্থী ছিলেন ২ হাজার ৪৮৩ জন। পাস করেন ২ হাজার ৭০ জন। ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারিতে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৮ হাজার ১৬৫ জন। পাস করেন ৭ হাজার ৮৯৬ জন। ডিপ্লোমা ইন পেশেন্ট কেয়ারে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ হাজার ২১৬ জন। পাস করেন ৪২৩ জন। ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারিতে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৪০ জন। পাস করেন পাঁচজন। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পরীক্ষায় সাধারণত শিক্ষার্থীদের কোর্স সিলেবাস, ব্যবহারিক ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। পরীক্ষায় যারা ন্যূনতম ৫৯ দশমিক ২০ নম্বরপ্রাপ্ত হন তারাই উত্তীর্ণ হন। শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে তাদের কোর্স কারিকুলাম সম্পন্ন করলে পাস নম্বর পাওয়ার কথা। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফলে প্রায়ই বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে। বিশেষত ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি ও ডিপ্লোমা ইন পেশেন্ট কেয়ারে সবচেয়ে বেশি ফল বিপর্যয় ঘটে। 

সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত লাইসেন্সিং পরীক্ষায় ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারিতে পাসের হার ছিল শূন্য। মার্চের পরীক্ষায় এ হার ছিল ১২ দশমিক ৫। অন্যদিকে ডিপ্লোমা ইন পেশেন্ট কেয়ারে সেপ্টেম্বরের পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৫ দশমিক ৪৩ ও মার্চে ৩৪ দশমিক ৭৮। 

অনিয়ন্ত্রিতভাবে নার্সিং ইনস্টিটিউটের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণেই এ ফল বিপর্যয় ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করেই অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে শিক্ষার্থীরা তিন বা চার বছরের কোর্স সম্পন্ন করেও পরীক্ষায় পাস নম্বর পাচ্ছেন না। 

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষা পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউট রয়েছে ৬৮টি। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৬০। গত পাঁচ বছরের শিক্ষা পরিসংখ্যানের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল ৭১টি, শিক্ষার্থী ছিলেন ৪ হাজার ৪২৬ জন। সে হিসাবে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের তুলনায় ২০২২-এ দেশে নার্সিং ইনস্টিটিউট বেড়েছে ছয় গুণ আর শিক্ষার্থী বেড়েছে নয় গুণেরও বেশি। 

বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দেশে বর্তমানে নার্সিং ইনস্টিটিউটের সংখ্যা বাড়লেও অনেক ইনস্টিটিউট পর্যাপ্ত শিক্ষকসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের কারিকুলাম অনুযায়ী যা যা শেখার কথা তারা তা শিখছে না। এ কারণেই তারা উত্তীর্ণ হতে পারছে না।’ 

তিনি বলেন, ‘মানসম্মত নার্সিং শিক্ষা নিশ্চিত করতে চাইলে যেসব ইনস্টিটিউটে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, সুযোগ-সুবিধা নেই, তাদের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। একটি ইনস্টিটিউটকে শুধু তখনই ভর্তির অনুমতি দেয়া উচিত যখন সে পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষার্থীসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবে।’ 

পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নার্সিং প্রায়োগিক শিক্ষা। কোনো কোর্সকে এর ইকুইভ্যালেন্ট ঘোষণা করার আগে অবশ্যই সেই কোর্সের কারিকুলাম এবং সেই কোর্স পরিচালনাকারী ইনস্টিটিউটের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। লাইসেন্সিং পরীক্ষায় তাদের ফল খারাপ হওয়া এটাই বোঝায়, কারিকুলাম অনুযায়ী তারা প্রয়োজনীয় সবকিছু শিখতে পারেনি।’ 

বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. রশিদুল মান্নাফ কবীর বলেন, ‘আমরা পরীক্ষার প্রশ্নে এ বছর মূল বই ও ব্যবহারিক শিক্ষার জ্ঞানকে গুরুত্ব দিয়েছি। বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন গাইড বই পড়ে পরীক্ষায় ভালো ফল করা সম্ভব নয়। যারা ভালোভাবে মূল বই পড়েছেন, ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন করেছেন, বেসিক অর্জন করেছেন তারাই এ পরীক্ষায় ভালো করবেন।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা নার্সিং শিক্ষার মানকে আন্তর্জাতিক মানের করতে চাচ্ছি। সে লক্ষ্যেই কারিকুলামসহ প্রশ্নপদ্ধতি সবকিছুতেই পরিবর্তন আসছে।’

ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) জ্যেষ্ঠ পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক।

তিনি বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান নার্সিং শিক্ষার সঙ্গে জড়িত। ছাত্রছাত্রীরা কোনোভাবে সার্টিফিকেট পেলেই একটা মেডিকেল সেন্টারে ভালো হোক, মন্দ হোক চাকরি পেয়ে যায়। এসব চাকরিতে কোয়ালিটি তেমন মুখ্য হয় না। তবে সরকারি চাকরির জন্য লাইসেন্সিং সার্টিফিকেট দরকার হয়। আর এ পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ হতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোয় মানসম্মত শিক্ষা থাকতে হবে।’

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064728260040283